লালমনিরহাট বার্তা
মার্কিন রাজধানীর ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন শিল্প
অ্যামেরিকা থেকে শমশের আলী | ২৮ অক্টো, ২০২৩, ৩:৪৪ AM
মার্কিন রাজধানীর ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন শিল্প

রাজধানী হচ্ছে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু তাই অনেকেই মনে করে যে, সেখানে সাধারণ চলাচলে অনেক বিধি নিষেধ ও বাধা থাকাটা খ্বুই স্বাভাবিক। শুধু বাধাহীন থাকবে ক্ষমতা কাঠামোর শীর্ষ পর্যায়ের কর্তাব্যাক্তিগণ। এটা হচ্ছে, উপনিবেশ সমাজের শোষিত জনগোষ্ঠির শিক্ষাক্রমের চলমান ধারা।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি, যা কলাম্বিয়া জেলার অংশ। সেখানে হোয়াইট হাউজ অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি ভবন, সিনেট ভবনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও কার্যালয় রয়েছে। পাশাপাশি, ঐতিহাসিক ও বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক জাদুঘর ও দর্শনীয় স্থাপনার পাশাপাশি জাতিসংঘসহ আন্তার্জাতিক সংস্থার দপ্তর রয়েছে। তাছাড়াও আছে কেনাকাটার জন্য ছোট-বড় অনেক মার্কেট, মল, হোটেল, রেস্তোরা, শতশত গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা, উন্নতমানের পরিচ্ছন্ন গণসৌচাগারসহ আরো অনেক কিছু। তবে, গণসৌচাগার ব্যবহারের জন্য কোন ফি দিতে হয় না। এর পাশাপাশি পর্যটনের জন্য পর্যাপ্ত চলাচলের ও ছবি তোলার দৃশ্যপট। এমন কি সরকারী সকল স্থাপনা সমূহ পর্যটন শিল্পের অংশ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সরকারী কিছু দপ্তর ও স্থাপনা লোহার জালি দিয়ে ঘেরা দেওয়া অংশ ব্যতিত সকল স্থানে চলাচল, বসার স্থানসহ ছবিতোলার অনুমতি আছে। কোন স্থাপনা পাকা দেয়াল বা প্রাচীরে ঘেরা থাকে না। শুধু লোহার জালি দিয়ে ঘেরা দেওয়া আছে, যাতে পর্যটকরা জালির বাইরে থেকে ছবি তুলতে পারে। সারা দেশ থেকে যাতায়াতের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গণপরিবহণ যেমন; সাধারণ বাস, ট্রেন, বিমান, পর্যটন বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন।

রাজধানী ঘেঁষে বয়ে চলেছে পটোম্যাক নদী। নদীর পাড় ঘেঁষে রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও পর্যটন স্থাপনা আর হাঁটার পথসহ বিভিন্ন দৃশ্যপট। নদী ও নদীর পাড় দৃষণমুক্ত রাখার সকল ব্যবস্থা। সকল স্থাপনার সামনের অংশ নদীর দিকে। নদীর দিকে পিছন ফিরে কোন স্থাপনা তৈরী করা হয় নি। নদীর সুরক্ষা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার জন্য নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা আছে। যে কোন প্রয়োজনে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নদীতে নৌযান থেকে কোন যাত্রী ডাস্টবিন ব্যাতিত নদীর পানিতে কোন কিছু নিক্ষেপ করলে তার শাস্তির বিধান ও প্রতিপালনের ব্যবস্থা রাখা আছে। ফলে, নদী অবিরত সুরক্ষিত ও নির্মল থাকে এবং নদীর সুরক্ষা ও দূষণমুক্ত রাখার দাবি ওঠার কোন প্রশ্নই আসে না।

প্রতিদিন মার্কিন নাগরিকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজার হাজার পর্যটক ও দাপ্তরিক কাজে মানুষ ওয়াশিংটন ডিসি যাতায়াত করছে। প্রায় লক্ষাধিক মানুষ বিভিন্ন দায়িত্বে ও কর্মে নিয়োজিত আছে। সেখানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটায় মজবুত যে, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ব্যাতিত সরকারী প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা ও পর্যটন শিল্প কখনো বাধাপ্রাপ্ত হয় না। উল্লেখ্য যে, গত ২১ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে ওয়াশিংটন ডিসি পরিদর্শন ও দর্শনার্থীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত মতামত ও তথ্যের ভিত্তিতে প্রণীত এই প্রবন্ধ।

এখানে প্রশাসনিক কর্তাব্যাক্তিগনের চলাচলের অযুহাতে কখনো কোন রাস্তার চলাচল বন্ধ থাকে না এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যাবস্থার তেমন কোন তারতম্য পরিলক্ষিত হয় নাই। এমন কি প্রতিবাদ সভা করার জন্যও উন্মুক্ত স্থান রয়েছে। সবকিছুই সুশৃংখ্যল নিয়মে বাঁধা। সকলকে সমানভাবে আইনের প্রতিপালন করতে হয়। আর ব্যত্তয় ঘটালে তার শাস্তিও পেতে হয়। পর্যাপ্ত পুলিশ টহল ও পাহারায় নিয়োজিত আছে, তারা কাউকে অহেতুক হয়রানী বা শৃংখ্যলার অযুহাতে সাধারণ কাজে বাধা প্রদান বা তল্লাশি করে না। উপরন্তু সহযোগিতা করে। যথেষ্ট তথ্য-প্রামানের ভিত্তিতে আইনের সকল প্রক্রিয়া অবলম্বন করেই কাউকে তল্লাশি বা আটক করা হয়। কোন অপরাধী ধরা পড়লে সাজা নিশ্চিত আবার কোন মানুষকে অহেতুক হয়রানী করলে পুলিশকেও শাস্তি পেতে হয়। সেই ভারসাম্য রক্ষার ব্যবস্থা, রাষ্ট্র আইনী ও প্রশাসনিক কাঠামো দ্বারা সকল ক্ষেত্রে নিশ্চিত করেছে। সেই জন্য পুলিশ ও জনসাধারণ উভয়ে আইন ও নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধশীল থাকে। উল্লেখ্য যে, বিশেষ কোন ঘটনা বা জননিরাপত্তা জনিত কোন পরিস্থিতির উদ্রেক না হলে, জনদূর্ভোগ তৈরী হতে পারে এমন কোন নিয়ম হঠাৎ বা আকষ্মাৎ আরোপিত হয় না।

ব্যাস্ত এই শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ নাই। সিসিটিভি ক্যামেরা ও সয়ংক্রিয় সিগনালের মাধ্যমে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কখনো মোবাইল কোর্ট বসিয়ে বা রাস্তার মোড়ে মোড়ে গাড়ির কাগজপত্র যাচাই করা হয় না। তবে, গাড়ির চালক কোন আইন ভঙ্গ করলে তখন গাড়ির সকল কাগজপত্র যাচাই করা হয়। কোন প্রকারের দূর্ঘটনা সংঘটিত হওয়ার কয়েক মূহুর্তের মধ্যে পুলিশ উপস্থিত হয়ে যায়। তারা প্রথমে আহত ব্যাক্তিকে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য প্রেরণ করে এবং বিধি মোতাবেক বাকি সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। আর আহত ব্যাক্তি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং চিকিৎসা শুরুর পূর্বে কোন টাকা জমা দিতে হয় না। এমন কি অজ্ঞান অবস্থায় তার পরিচয়ও যাচাই করা হয় না। প্রাথমিক চিকিৎসা সম্পন্ন হওয়ার পর তার পরিচয় জানতে চাওয়া হয় এবং তার আতিœয় বা বন্ধুদেরকে সংবাদ দেওয়া হয়। আর হাসপাতালের সমূদয় খরচ চিকিৎসা শেষে দোষী ব্যাক্তির নিকট থেকে অথবা বীমা কোম্পানী থেকে আদায় করা হয়।

রাজধানী ঘিরে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলার কারনে রাজধানীর নিরাপত্তা যেমন আধুনিক হয়েছে, অপরদিকে অর্থনীতির চাকাও সচল হচ্ছে। এখানে ছোট গাড়ির পার্কেং ফি বাবদ ৩ ঘন্টার জন্য ৬.৯০ ডলার দিতে হয়, আর বড় গাড়ির জন্য আরো বেশি। পথের পাশ্বে দোকান থেকে অনেক টাকা রাষ্ট্রের কোষাগারে জমা হয়। তারপর আছে হোটেল ভাড়া ও কেনাকাটার উপর ভ্যাট। তাছাড়া, বিপুল পরিমানের টাকা খরচের প্রবাহ চলমান থাকে এবং অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। এই সবই জিডিপি’তে অবদান রাখে। এখানে কোন প্রকারের চাঁদাবাজি হয় না। সকল প্রকারের কর ও ফি সয়ংক্রিয়ভাবে রাষ্ট্রিয় কোষাগারে জমা হয়।

সর্বপরি, নিরাপত্তা ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করেই এখানে সব কিছু ঠিকঠাক চলছে। সরকারী-বেসরকারী দপ্তর, পর্যটন শিল্প, প্রতিবাদ সভা, বাজার ব্যবস্থানা সবকিছুই সমান্তরালভাবে চলছে এবং কারো কোন কাজ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে না। রাস্তার মোড়ে মোড়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া আছে। রাস্তায় গাড়ি ও মানুষ পারাপারের জন্য রয়েছে সয়ংক্রিয় ও সুশৃংখ্যল ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। সকলে সিগনার মেনে গাড়ি চালাতে ও রাস্তা পারাপার হতে বাধ্য। প্রতিটি রাস্তা পারাপারের স্থানে বাটন আছে, তা চাপ দেওয়ার কিছু মুহুর্তের মধ্যে পারাপারের সিগনাল জ্বলে উঠে, তখন মানুষ পারাপারের জন্য কোন গাড়ি চলে না। অত্যান্ত গতিশীল এই নগরীর প্রশাসনিক ও জননিরাপত্তা ব্যাবস্থা অত্যন্ত প্রসংশনীয়।

এই বিভাগের আরও খবর