লালমনিরহাট বার্তা
বুড়িমারী থেকে ভারতে রেলপথ পুনঃসংযোগের দাবি ব্যবসায়ীদের
স্টাফ রিপোর্টার, পাটগ্রাম | ৮ মার্চ, ২০২২, ৭:১৬ AM
বুড়িমারী থেকে ভারতে রেলপথ পুনঃসংযোগের দাবি ব্যবসায়ীদের
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী রেল স্টেশন থেকে ভারতের কোচবিহার রাজ্যের মেখলিগঞ্জ চ্যাংরাবান্ধা রেল স্টেশনের সাথে মাত্র ৭ শ ৫০ মিটার রেলপথ পুনঃসংযোগের দাবি জানিয়েছেন বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। এ রেলপথটি চালু হলে বুড়িমারী স্থলবন্দরের সাথে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে ব্যাপক সম্ভাবনার দ্বার উম্মোচীত হবে বলে অভিমত বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যমতে, রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় জোন লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী থেকে ভারতের মেখলিগঞ্জ-চ্যাংরাবান্ধা রেলপথটি ব্রিটিশ আমল হতে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চালু ছিল। এখনও দুই দিকে স্থাপিত রেলওয়ে স্থাপনা সমূহ কালের স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। ১৯৬৫ সালে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জড়ায় এতে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সাথে রেলপথ বন্ধ করে দেয় ভারত। এরপর দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ হয়ে রয়েছে এ রেলপথটি। উভয় দেশের সরকার আলোচনা করে মধ্যবর্তী স্থানে তথা বুড়িমারী রেল স্টেশন-স্থলবন্দর হতে শূণ্য রেখা হয়ে ভারতের চ্যাংরাবান্ধা শুল্ক স্টেশনের মধ্যবর্তী ৭ শ ৫০ মিটার রেল লাইন বর্তমান সময়ে পুনঃস্থাপন জরুরী হয়ে পড়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে এ রেলপথটি চালু হলে ভারত, ভুটান, নেপালের সাথে পরিবহন পথ কমে যাবে। ব্যাপক হারে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে। সরকারের রাজস্ব আয় কয়েকগুন বাড়বে।
রেলওয়ে বিভাগ জানায়, সময়ের প্রয়োজনে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী থেকে ভারতের মেখলিগঞ্জ-চ্যাংরাবান্ধা রেলপথটি অতি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দিয়েছে। রেলপথটির প্রয়োজনীয় উন্নয়ন সাধন করে বুড়িমারী সেকশনে প্রয়োজনীয় ওয়াগন দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হলে রেল বিভাগের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি ভারত, ভুটান ও নেপালের শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও পর্যটক বা যাত্রী পরিবহন করা হলে দেশের অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে। গত ১৭ ফেব্রæয়ারি বুড়িমারী স্থলবন্দর থেকে ওপারের ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা শুল্ক স্টেশনে রেলপথ সংযোগ নির্মাণের সম্ভ্যাব্যতা নিয়ে স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রæপের সাথে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলার শহীদ আফজাল হোসেন মিলনায়তনে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রæপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুলের সভাপতিত্বে রেলওয়ে বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলীয় বিভাগের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার, চীফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডডেন্ট শহিদুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজী, প্রধান যন্ত্রপ্রকৌশলী মুহাম্মদ কুদরত-ই-খুদা, লালমনিরহাট জেলা রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফীনুর মোহাম্মদ কথা বলেন। সভা শেষে বুড়িমারী স্থলবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে সংযোগের জন্য ভারতীয় চ্যাংরাবান্ধা শুল্ক স্টেশনের শুণ্য রেখা পযর্ন্ত রেলপথ সরেজমিনে পরিদর্শনও করে গেছেন। রেলপথ সংযোগের বিষয়টি রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ চলমান রয়েছে।

বুড়িমারী স্থলবন্দরের ব্যবসায়ী সওদাগর ট্রেডের স্বত্ত¡াধিকারী হুমায়ুন কবির সওদাগর বলেন, ‘সবার উপকার হবে। ট্রাকে পণ্য পরিবহনে তিন ভাগের দুই ভাগ ব্যয় কমবে রেলের ওয়াগনে পন্য পরিবহন করা হলে। মিটার গেজ উঠিয়ে রেলপথ ব্রড গেজ করে পন্য পরিবহন করা হলে ক্রেতা-বিক্রেতা, আমদানি-রপ্তানিকারক সবাই লাভবান হবে। রাস্তাঘাট ভালো থাকবে। দুর্ঘটনা কবে যাবে। সহজে পণ্য পরিবহন করা যাবে। সারা ভারতে রেলপথে ওয়াগনে পণ্য পরিবহন হয়। আমাদের দেশে হয় না। পণ্য পরিবহনে হাজার হাজার টাকা ব্যয় হচ্ছে এটা সাধারণ মানুষ ও ভোক্তাদের উপর প্রভাব পড়ছে।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রæপের সভাপতি রুহুল আমীন বাবুল বলেন, ‘বুড়িমারী থেকে মাত্র সোয়া কিলোমিটার রেলপথ ভারতের চ্যাংরাবান্ধার সাথে সংযোগ দেওয়া হলে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ীসহ সবার কল্যাণ হবে।’
লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থাপক শাহ সুফীনুর মোহাম্মদ বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ৪৫ কিলোমিটার রেলপথ ভারতের চ্যাংরাবান্ধা থেকে হাতীবান্ধা উপজেলা পর্যন্ত ডুয়েল গেজ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে ধাপে ধাপে করার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে রেলপথ সম্প্রারণ করা হবে। রেলে পণ্য পরিবহন করা হলে নিঃসন্দেহে ভাড়া কম হবে, জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের উপকার হবে। রেলওয়ের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।’
এই বিভাগের আরও খবর