লালমনিরহাট বার্তা
প্রবাসে উৎসব বঞ্চিতদের ঈদ উদযাপন
শমশের আলী | ১০ এপ্রি, ২০২৪, ৩:৫৬ AM
প্রবাসে উৎসব বঞ্চিতদের ঈদ উদযাপন

রমজান এবং ঈদুল ফিতর মুসলমানদের জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ উপাসনা ও উৎসব। আরব দেশ সহ মুসলিম অধ্যুষিত দেশগুলোতে রমজান ও ঈদুল ফিতর জমকালোভাবে উদযাপিত হয়। রমজান মাসে দাপ্তরিক ও ব্যবসায়িক কাজের সময়ের ভিন্নতা থাকে। রমজানকে একটি অতি পবিত্র মাস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অধিকাংশ দেশে এই মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যহ্রাস হয়, যদিও শুধুমাত্র বাংলাদেশে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে ও মুনাফার মহোৎসব চলে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে বিশেষ ছুটি থাকে এবং অধিকাংশ মানুষ নিজ গ্রামে বা ভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিবহনের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়, যাতে মানুষ স্বাচ্ছন্দে গন্তব্যে যেতে পারে। রমজান শেষে আরম্বরভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হয়। নতুন জামা-কাপড়ের সাথে বিশেষ ধরনের খাবারের মহাসমারোহ হয়। ছোটদের জন্য সালামি হিসাবে উপহার উপরন্তু, দরিদ্রদের জন্য জাকাত, ফিতরা ও সাদকা হিসাবে দান পাওয়ার একটি অনন্য সুযোগ তৈরি হয়। সর্বপরি, আত্নিয়-সজন, বন্ধু-বান্ধব, সজ্জন ও পাড়া-প্রতিবেশিদের সাথে কুশল বিনিময়, উপহার আদান-প্রদান ও মিলনের সমারোহ ঘটে।

ইউরোপ, আমেরিকা, রাশিয়া, চীনসহ এমন অনেক দেশ আছে যেখানে মুসলমানদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার খুবই সামান্য অংশ, সেসব দেশে রমজান পালন ও ঈদুল ফিতর উৎযাপনের বিশেষ কোন ব্যবস্থা থাকে না। সেখানে চলমান ব্যবস্থার মধ্যেই কিছু কিছু আয়োজন যেমন মসজিদে ইফতার ও ঈদুল ফিতরের নামাজের ব্যবস্থা করা হয়। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে মসজিদের অবস্থান অনেক দূরে দূরে। আবার কোন দেশে কোন মসজিদ নাই, এমনকি অন্য কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও নাই।

ইউরোপ ও আমেরিকায় ভ্রমনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক বাংলাদেশি আছে যারা সরকারী বা কোন প্রাতিষ্ঠানিক চাকুরি করে। তারা সাপ্তাহিক বন্ধের দিন ব্যতিত অন্যদিনে হলে, ছুটি নিয়ে ঈদুল ফিতর উৎযাপন করে। কারণ সেখানে ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারী ছুটি থাকে না। তবে, অনেকে এমনসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করে যেখানে অধিবর্ষসহ বছরের ৩৬৫ দিনে কর্মযজ্ঞ চলে। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ঈদুল ফিতরের দিনে ছুটি নিতে পারে না। তাদের জন্য এই দিন অন্যান্য দিনের মত। অর্থাৎ তাদের জন্য অধিবর্ষসহ বছরের ৩৬৫ দিন সমান, শুধুমাত্র প্রাকৃতিক ও অন্যান্য দুর্যোগের দিনসমূহ ব্যাতিত। এমনকি সপ্তাহের সব বারও সমান। তারা সর্বদা উৎসব উদযাপন থেকে বঞ্চিত থাকে।

তারা পরিবারের স্বচ্ছলতা ও ভবিষ্যত গড়ার জন্য জীবনের বিশাল ত্যাগ স্বীকার করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে। অন্যদিকে, তাদের পাঠানো বৈদেশিক মূদ্রা দেশে অর্থনীতিতে অনেকখানী অবদান রেখে চলেছে। এই বিশেষ দিনে তাদের খোজ খরব নেয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য কেউ ওখানে নেই। মোবাইল প্রযুক্তির বদৌলতে তারা দেশে থাকা সজ্জনদের সাথে অনলাইনে দেখা করতে ও কথা বলতে পারে। এটাই তাদের জন্য বড় সান্তনা। বাস্তবতা ও চলমান পরিস্থিতি তাদেরকে অনেকখানী মহান করেছে। তারা তাদের পরিবারের, আত্নিয় স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের ঈদুল ফিতরসহ যে কোন উৎসব উদযাপন ও আনন্দ দেখে খুশি, অর্থাৎ পরের আনন্দেই আনন্দিত হয়। আর ওখানে বসবাসরতদের সাথে কুশল বিনিময়সহ কখনো কখনো দেখা সাক্ষাতের মধ্যে ঈদ উদযাপন সীমাবদ্ধ থাকে। যারা পরিবারের সকল সদস্যসহ বসবাস করে তারাও অনেক ক্ষেত্রে নিজ বাসভবনের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ।

ঐসব দেশে বসবাসকারী বাংলাদেশি সংখ্যা কম থাকায় ও কাজের বৈশিষ্ট্যের ভিন্নতার কারনে ইচ্ছা থাকলেও নিজ দেশের মত আরম্বর অনুষ্ঠান আয়োজন সম্ভব হয় না। তবে নিউইয়র্কসহ বিশ্বের মাত্র কয়েকটি শহরে সামান্য পরিসরে কিছু অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়ে থাকে। তবে উক্ত শহরে বসবাসকারী অনেকে আগ্রহ থাকলেও কঠিন বাস্তবতার করনে অংশ গ্রহণ করতে পারে না। আবার অনেক বাংলাদেশি আছে, যাদের দেশে আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি বাধা আছে। আইনি পন্থায় ঐসব বাধা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত শুধুই অপেক্ষার পালা। আবার ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে একবার আসা-যাওয়ার খরচও কম নয়। লেখাপড়ার জন্য সেখানে যারা থাকে, তাদের অবস্থাও একই রকম। উৎসব বিহীন জীবন।

ঐসব দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের দুতাবাসসমূহ সামান্য আগ্রহী হলে উৎসব বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়াতে ও তাদের মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করা যেত। হয়তো কোন দিন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেই সক্ষমতা ও সদিচ্ছার উদ্ভব হলে বিদেশে অবস্থানরত উৎসব বঞ্চিতরা কিছুটা হলেও উপকৃত হবে। সর্বপরি, সকল রেমিটেন্স যোদ্ধা ও উৎসব বঞ্চিতদের জানাই ঈদ মোবারক ও শ্রদ্ধা।

এই বিভাগের আরও খবর