লালমনিরহাট বার্তা
পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত
স্টাফ রিপোর্টার, পাটগ্রাম | ২৭ এপ্রি, ২০২৪, ৪:১৩ AM
পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী গ্রামের ডাঙ্গাপাড়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে আবুল কালাম (২৪) নামে বাংলাদেশি এক যুবক নিহত হয়।

শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) ভোরে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলের সীমান্ত হতে ১০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বেলা ১১ টা হতে দেড় ঘন্টাব্যাপী উভয় দেশের (ভারত- বাংলাদেশ) সীমান্তরক্ষীদের জরুরী পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিএসএফ-বিজিবি ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের এ বৈঠকে বিএসএফকে বাংলাদেশি নিহতের ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। ভবিষ্যতে এই এলাকার সীমান্তে হত্যার ঘটনা আর না হওয়ার আশ্বাস দেয় বিএসএফ।

পুলিশ ও বিজিবি এবং এলাকাবাসি সূত্র জানায়, শুক্রবার ভোরে ভারতের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানার ফুলকাডাবরী গ্রামের পকেট এলাকা ও বাংলাদেশের পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ঝালঙ্গী গ্রামের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার উভয় দেশের সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর প্রধান পিলার ও উপপিলার ৯ এর কাছে যায় ভারত- বাংলাদেশের চোরাকারবারীদের চার-পাঁচজনের একটি দল। এ সময় তাঁরা গরু ও অন্যান্য সামগ্রী পারাপারের চেষ্টা করতে থাকে।

এ সময় ভারতের ১৬৯ কোচবিহার রানীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের ডোরাডাবরী বিএসএফ ক্যাম্পের টহল দলের সদস্যরা উভয় দেশের চোরাকারবারীদের দেখে কয়েক রাউন্ট গুলি ছোড়ে। এতে বাংলাদেশি যুবক আবুল কালামের বুকের ডানদিকে গুলি লেগে বের হয়ে যায়। গুরুত্বর আহত অবস্থায় আবুল কালামের সহযোগীরা তাঁকে উদ্ধার করে পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় কাউয়ামারী বাজারের সড়কে তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত আবুল কালাম শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ডাঙ্গাপাড়া এলাকার মৃত অপির উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় সীমান্তে জরুরী পতাকা বৈঠকের আহবান জানায় বিজিবির, রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় সীমান্তের ৮৪৮ নম্বর প্রধান পিলার ও উপপিলার ৯ থেকে ১০ গজ অভ্যন্তরে ভুট্টা খেতের পাশে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

প্রায় দেঢ় ঘন্টাব্যাপী বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ১৪ সদস্যের নের্তৃত্ব দেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে.কর্নেল শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম। অপরদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) পক্ষে ১২ সদস্যের নের্তৃত্ব দেন ১৬৯ কোচবিহার রানীনগর বিএসএফ ব্যাটালিয়নের কমান্ড্যান্ট অজয় কুমার। কমান্ডার পর্যায়ের আয়োজিত এ বৈঠকে বিএসএফকে বাংলাদেশি নাগরিক নিহতের ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি। ভবিষ্যতে এই এলাকার সীমান্তে হত্যার ঘটনা আর না হওয়ার আশ্বাস দেয় বিএসএফ। সভায় উভয় বাহিনী সীমান্ত পথে চোরাচালান বন্ধে টহল জোরদার করা ও জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণে একমত হয়।

শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম প্রধান বলেন, ‘সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে আবুল কালাম নিহত হয়। তাদের বাড়িতে গিয়েছি। কালাম অবিবাহিত। তাঁর বাবা মৃত অপির উদ্দিন।’

আবুল কালামের মা মমতা বেগম বিলাপ করে বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে কালাম বিয়ে করার কথা। কি কারণে বা অপরাধে বিএসএফ আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করলো, আমি এ হত্যার বিচার চাই।’

পাটগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাইদ বলেন, ‘সীমান্তে আহত যুবক আবুল কালামকে হাসপাতালে আনার পথে মারা যায়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন সংগ্রহ করে ময়না তদন্তের জন্য পুলিশের মাধ্যমে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), রংপুর ৬১ (তিস্তা-২) ব্যাটালিয়নের অধিনায়কের (সিও) শেখ মোহাম্মদ মুসাহিদ মাসুম- বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আমরা জানার সাথে সাথেই ওদের (ভারতের) কমান্ড্যান্টকে ডেকে আমরা স্পট ভিজিট করেছি। সভা করেছি, ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিবাদপত্র দিয়েছি। বিএসএফের বক্তব্য অনুযায়ী নিহত ব্যক্তি ভারতে ঢুকেছিল। কর্তব্যরত বিএসএফকে অ্যাটাক করেছিল। এতে বিএসএফ ফায়ার করলে সে মারা যায়।’ .

এই বিভাগের আরও খবর