লালমনিরহাট বার্তা
অপ্রসন্ন নিশিথ
এন এইচ আশিক | ২ অক্টো, ২০২৩, ৪:২১ AM
অপ্রসন্ন নিশিথ

নিশিথ আজ মন খারাপের সুর ধরেছে হারিয়ে যেতে চায় কয়েক ক্রোশ দূরে৷

যেথায় সন্ধ্যে নামার পর ভাতের হাঁড়ি নামে,আয়োজন চলে রাতের খাবারের,এখানে সন্ধ্যে মানে সন্ধ্যে আর রাত মানে ঠিক রাতই৷

যেথায় সকাল মানে পাখির কলরবে ঘুমের ছুটি কৃষকেরর বৌ'র বাড়ির উঠোন ঝাঁট দেওয়ার শব্দে হাঁস মুরগির চেঁচামেচি,রাতের বেচে যাওয়া ভাত পেট পুরে খেয়ে কৃষকের মাঠে যাওয়া৷

যেথায় ক্লান্ত দুপুরে নদীর তীরে পল্লীবালাদের স্নানের মেলা বসা ডিঙ্গি বেয়ে জেলেদের ছোটমাছ ধরা৷

যেথায় বেলা গড়াতেই পতিত জমিতে কিংবা ছোট্ট মাঠে ছেলেদের বল খেলার হৈচৈ,বাড়ির বড় উঠোনে মৃৎশিল্পের ভাঙা টুকরো দিয়ে মেয়েদের খেলায় মাতা৷

যেথায় ঠিক সন্ধ্যে নামার আগেই হাটুরের বাজারের থলে ভরে সানন্দে ঘরে ফেরা চারণভূমির আলপথ দিয়ে রাখালসহ তৃপ্ত গরু বাছুর নীড়ে ফেরার আনন্দে আত্মহারা৷

যেথায় গ্রীষ্ম মানে কাঠফাঁটা রোদ প্রশান্তি পেতে স্বাস্থ্যবানদের প্রকৃতির সমীরে গা ভাসিয়ে দেওয়া,মিষ্টি গন্ধে চারদিক ভরে যাওয়া আম জাম কাঁঠাল খাওয়ার ধুম পড়া৷

যেথায় বর্ষা মানে বৃষ্টি আর বৃষ্টি ব্রহ্মপুত্র আর তিস্তার মিলিত হানায় একূল ওকূল সমান হয়ে যাওয়া,চারপাশে পানি আর পানি,কলা গাছের ভেলায় চেপে নতুন পানিতে দুষ্ট ছেলেদের চলে বিরতিহীন গোসল চলা৷

যেথায় শরৎ মানে নীল আকাশে সাদা মেঘের হুড়োহুড়ি,ফোটে শিউলি, নদীর ছেঁড়া দ্বীপে কিংবা কিনারে কাঁশফুলের সমারোহ দেখামেলা ৷

যেথায় হেমন্ত মানে ফসলের মাঠ সোনালি রঙে ছেঁয়ে যাওয়া আনন্দ ফেরে নবান্ন ঘিরে গৃহবধূর ব্যস্ততায় সময় কাটা৷

যেথায় শীত মানে উত্তুরে হাওয়া বওয়া,ছাইতান ফুলের কড়া গন্ধ নাকে আসা,মোড়ে মোড়ে চিতুই,ভাঁপার ভ্রাম্যমাণ দোকানে খদ্দের ভীড় জমা৷ খেজুর গুড়ের কদর বাড়া৷

যেথায় বসন্ত মানে ফুরফুরে বাতাস বওয়া,কোকিলের ডাকাডাকিতে বৃক্ষরাজিতে নতুন পত্র পল্লবের অতিথি হওয়া৷

এসব ভাবতে ভাবতে নিশিথের সমাপনী,আলো ফুটেছে ভোরের,পাখির কলরব নেই,নেই সদ্য আলো পাওয়া সুর্যের হাসির ঘুম ভাঙেনি এখানকার সাহেব বেগমদের৷

এখানে রাত মানে সন্ধ্যে আর সন্ধ্যে মানে সকাল, এখানে নেই ভোর কিংবা সকালের অস্তিত্ব৷

কত তফাত নিশিথের হারিয়ে যেতে চাওয়া কয়েক ক্রোশ দূরের আর এখানকার!

এই বিভাগের আরও খবর