লালমনিরহাট বার্তা
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন: নদীগর্ভে বসত-বাড়ি, আবাদি জমি
ভয়েস অফ আমেরিকা | ৪ জুল, ২০২৩, ১২:৫২ PM
কুড়িগ্রামে তিস্তার ভাঙন: নদীগর্ভে বসত-বাড়ি, আবাদি জমি

অব্যাহত বৃষ্টিপাতে বাংলাদেশের কুড়িগ্রামে তিস্তা নদী তীরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে গত ১৫ দিনে কয়েকশ’ বিঘা আবাদি জমি, অর্ধ শতাধিক বাড়িঘর এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কিছু স্থাপনা নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে আরো দেড় শতাধিক বাড়িঘর।

ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে। আর ভাঙন কবলিত মানুষ বসতবাড়ি রক্ষায় স্থায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলার উলিপুর উপজেলার বজরা পশ্চিমপাড়া গ্রামের ভাঙন কবলিত মানুষ তাদের বাড়িঘর সরিয়ে খোলা আকাশে ফেলে রেখেছে। ঈদের ১০/১২ দিন আগে থেকেই এখানে ভাঙন চলছিলো। জিও ব্যাগ ফেলে একটি সরকারি স্কুল রক্ষার চেষ্টা করা হলেও, সেটি নদী গর্ভে চলে গেছে। এসময় ভেঙে গেছে আরও ৪৫ থেকে ৫০টি বসতবাড়ি। সবজি ও পাটখেতসহ কয়েকশত বিঘা আবাদি জমি গ্রাস করেছে নদী। সেই সঙ্গে, নদীতে বিলিন হয়ে গেছে গাছপালা-পুকুর।

নদী তীরবর্তী শহিদুর ইসলাম (৫৬) জানান, ভাঙনে বজরা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আর রক্ষা করা যায়নি। সেই সঙ্গে ঠিকানা হারিয়েছে অর্ধ শতাধিক পরিবার। আরো দেড় শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের হুমকীতে রয়েছে। এছাড়া ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে ৬ থেকে ৭শ’ পরিবার।

সত্তোর্ধ্ব আব্দুল খালেক জানান, “এই নিয়ে ১২বার আমার বসতবাড়ি নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। নদীতেই আমাদের সমস্ত জমিজমা পরে আছে। আমরা বাধ্য হয়ে রাস্তার মধ্যে জিনিসপত্র রেখেছি। এখন আমারা কোথায় যাবো, কি করবো কিছুই ভেবে পাচ্ছি না।”

ভাঙন কবলিত নুর আলম (৬০) জানান, গতকাল (২ জুলাই) পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) থেকে লোকজন এসে ১৮০ মিটার খোলা জায়গায় জিও ব্যাগ ফেলবে বলে জানিয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে কোন কিছু রক্ষা করা যাচ্ছে না। আমরা ত্রাণ-টাকা-পয়সা কিছুই চাই না। আমরা তিস্তা নদীতে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের কার্যক্রম চাই।”

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক জায়গায় ভাঙন হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে নজর রেখেছি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, লোকায়লয় ভাঙনের কবলে পরলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পশ্চিম বজরায় আমরা জিও ব্যাগ ফেলার কার্যক্রম শুরু করেছি “

নারায়ণগঞ্জের ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা

ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা বাধ (ডিএনডি বাধ) এলাকায় কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা জটিল আকার ধারণ করেছে। ডিএনডির জলাবদ্ধতার স্থায়ী নিরসনে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকার মেগা প্রকল্প চলছে। এ প্রকল্পে আদৌ কোনো সমাধান হবে কিনা বা কতদিনে হবে; এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন এলাকাবসী।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, “আমরা এখন পানির মধ্যে কারাবাস করছি। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এভাবে জলের কারাগারে থাকতে হয় আমাদের।”

ডিএনডি এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের পানি এসে মিশেছে আবদ্ধ পানির সঙ্গে। একারনে, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। আর দেখা দিয়েছে ঠাণ্ডা, জ্বর, ডায়রিয়া, চর্মরোগ, আমাশয়সহ পানিবাহিত নানা রোগ।

ডিএনডি প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রকল্পের আওতাধীন ডিএনডির নিজস্ব জায়গায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যা উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা রয়েছে। পাশাপাশি তিতাস, ডিপিডিসিসহ (ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড) বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ভূগর্ভস্থ পাইপলাইনগুলোও সরানো হয়নি। এতে আমরা অনেক স্থানেই কাজ করতে পারছি না।”

তিনি আরো বলেন, “পানি নিষ্কাশনের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো; নিষ্কাশনের শাখা খালগুলো সংস্কার করার পর আবার ময়লা-আবর্জনা ফেলে ভরে ফেলা হয়েছে। অনেক স্থানে আমরা খাল পুনরুদ্ধার করেছি, নতুন খাল খনন করেছি। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই সেগুলো আবার ময়লা দিয়ে স্থানীয় লোকজন ভরে ফেলেন “

আরো বৃষ্টি হতে পারে: আবহাওয়া অফিস

এদিকে, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অংশে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

সোমবার (৩ জুলাই) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর নিয়মিত বুলেটিনে জানিয়েছে যে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়; ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অনেক জায়গায় এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।এছাড়া, দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে যে মৌসুমি বায়ুর অক্ষ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে সক্রিয় এবং দেশের অন্যত্র মোটামুটি সক্রিয়। এটি বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরেও সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর