লালমনিরহাট বার্তা
রংপুর সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী মোস্তফাকে ঘোষণা করেছেন বেগম রওশন এরশাদ
রংপুর অফিস | ২৯ নভে, ২০২২, ৩:৫৫ AM
রংপুর সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী মোস্তফাকে ঘোষণা করেছেন বেগম রওশন এরশাদ

সকল জল্পপনা কল্পপনার অবসান ঘটিয়ে রোববার রাতে আসন্ন রংপুর সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়রপ্রার্থী ঘোষণা করেছেন বেগম রওশন এরশাদ। তিনি হলেন সাবেক মেয়র ও জাতীয়ার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য,জনমানুষের প্রিয় নেতা মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা।রোববার দুপুরের দিকে রাজধানীর হোটেল ওয়েষ্টিংএর হলরুমে এটি সংক্ষিপ্ত মিটিং করে সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে সিটিকর্পোরেশনের নির্বাচনে মনোনিত করেছেন বেগম রওশন এরশাদ।

মাননীয় বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ এমপি বক্তব্যে বলেন,সর্বপ্রথম, আমার সুস্থতা ও স্বদেশে ফিরে আসার জন্য সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে শোকরিয়া জানাই। আলহামদুলিল্লাহ। আমি এখন ঠিক আছি কিন্ত আমার পায়ে কিছু সমস্যা আছে এবং ফিজিওথেরাপি নিচ্ছি।আমার সুস্থতা কামনায় দোয়া করার জন্য পার্টির নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।ব্যাংককে আমার চিকিৎসার সময় সহযোগিতা এবং স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নেয়ার জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই।আমি থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও ধন্যবাদ জানাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সময় সহায়তা ও সহযোগিতার জন্য।আগেও বলেছি, আজও বলছি- আমি সব সময়ই জাতীয় পার্টির ঐক্য চাই। আপনারা সবাই জানেন আমার স্বামী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা কত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। আমি দেখেছি গত ৩২ বছরে জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীরা কতটা কঠোর পরিশ্রম করেছেন।জাতীয় পার্টির জন্য যারা কষ্ট করেছেন, জেল খেটেছেন এবং জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের সবার নিকট আমি কৃতজ্ঞ।

তিনিআরো বলেন,জাতীয় পার্টিকে বিভক্ত করার প্রশ্নই উঠে না। বরং আমি জাতীয় পার্টির সব সদস্যকে খোলা মনে আহ্বান জানিয়েছি-যারা জনাব আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, জনাব নাজিউর রহমান মঞ্জু, জনাব কাজী জাফর আহমদের সঙ্গে চলে গেছেন এবং নিস্ক্রিয় হয়ে গেছেন, তাদের ফিরে আসার জন্য। ১৯৯১ হতে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত জাতীয় পার্টির কঠিন ও প্রতিকুল সময়, যারা আমাদের সঙ্গে ছিলেন-তাদের আমাদের অবশ্যই যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হবে।আমি ঢাকায় ফিরে এসেছি, আমি পার্টির সব এমপি, প্রেসিডিয়াম এবং অন্যান্যদের সঙ্গে যেকোনো বিভ্রান্তি ও ভুল বোঝাবঝি দূর করতে বসবো। আমি নিশ্চিত, সেই ভুল বোঝাবুঝি দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে শিগগিরই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরতে পারবো, ইনশাআল্লাহ।এসব ভুল বোঝাবুঝির জন্য এবং পার্টিকে দুর্বল করতে কিছু ষড়যন্ত্র হতে পারে।যেমন আমরা ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০১৪ সালে দেখেছি।ইনশাআল্লাহআমরা সেই ষড়যন্ত্রগুলোকে নস্যাৎ করব এবং ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী জাতীয় পার্টি গড়ে তুলবো।

রংপুর সিটি করর্পোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,মনে রাখবেন রংপুর জাতীয় পার্টি প্রাণ। এটা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বাড়ি। তাই আসনটি যেকোনো মূল্যে ধরে রাখতে হবে এবং জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ নিয়ে নির্বাচনে জয়ী হবে এমন যোগ্য প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবো, ইনশাআল্লাহ। এজন্য সব নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন বজায় রাখতে সর্ববাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছেন। দুর্নীতি, অর্থনীতিতে অব্যবস্থাপনা এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির মতো কিছু ক্রটি রয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এসব বিষয়ে অবগত আছেন এবং আমি তাঁকে অনুরোধ করব এই বিষয়গুলোকে আরো ঘনিষ্টভাবে সমাধান করতে এবং তাঁর মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের আরো বেশি আন্তরিক ও সক্রিয় হতে হবে।

তিনি বলেন,বর্তমান ভূ-রাজনীতি বিশেষ করে ইউক্রেনের যুদ্ধ গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়েছে আমাদের দেশেও। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সবাইকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত এবং সরকারকে সহযোগিতা করা উচিত।

বিএনপি প্রসঙ্গে বলেন,বিএনপির অধীনে জাতীয় পার্টি খুবই ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। আমাদের নেতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং আমি ও আমার নাবালক সন্তান সহ দলের হাজার হাজর নেতাকর্মী জেল খেটেছিলেন। তখন আমাদের জনসভাও করতে দেয়া হয়নি। ঢাকা সহ বিভিন্নস্থানে অনেক জনসভায় হামলা চালিয়ে শত-শত নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। সেই অন্ধকার দিনগুলো আমরা ভুলবো কি করে? তাছাড়া আমরা তাদের শাসনামলে “হাওয়া ভবনের” দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপতৎপরতা দেখেছি।জনগণ উন্নতি ও শান্তি জন্য পরিবর্তন চায়, যা জাতীয় পার্টিই দিতে পারে সেই শান্তি। অবশ্যই তা বিএনপি নয়। বিএনপির সঙ্গে জোটের প্রশ্নই আসে না।

নেতাকর্মী ও সাংবাদিকদের বলেন, শেষ করবার আগে আপনাদের জন্য একটি ঘোষণা দিতে চাই- আর তা হলো রংপুরে আমাদের প্রিয় নেতা সাবেক রাষ্ট্রপতি পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্নেহ ধন্য পুত্র তুল্য এবং তাঁর পছন্দের যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই আসন্ন রংপুর সিটি করর্পোরেশন নির্বাচনে লাঙ্গলের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করছি, তিনি হলেন সাবেক মেয়র ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, জনমানুষের প্রিয় নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তার নির্বাচন ও বিজয়ের মধ্যদিয়ে জাতীয় পার্টি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী দল হিসেবে নতুন করে প্রতিষ্ঠা পাবে,ইনশাল্লাহ।

এদিকে মেয়র প্রার্থী আব্দুর রউফ মানিকের বিশ^স্ত মোঃ সাইফুল ইসলাম মোবইল ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রোববার দুপুরের দিকে রাজধানীর হোটেল ওয়েষ্টিংএর হলরুমে এটি সংক্ষিপ্ত মিটিং করে সাবেক মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফাকে লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে সিটিকর্পোরেশনের নির্বাচনে মনোনিত করেছেন বেগম রওশন এরশাদ।

মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, দলের পক্ষে মহাসচীব মোঃ মুজিবুর রহমান চুন্নু সাক্ষর করেছেন। গত ১৩ নভেম্বর চুন্নুর করা সাক্ষরিত দলীয় মনোনয়ন মোস্তফার পক্ষে সংগ্রহ করেন দলের কেন্দ্রীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম ইয়াসির। দলীয় প্রার্থী হিসেবে ১৫ নভেম্বর রংপুর রিটার্ণি অফিসারের কাছ থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়েছে।জাতীপার্টির মহাসচীব মুজিবুল হক চুন্নু বলছেন, ‘নির্বাচন কমিশনের আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান বা মহাসচীব বা তাদের মনোনীত ব্যক্তি দলীয় মনোনয়ন দিতে পারেন। সে অনুযায়ী মোস্তফাকে আমি মনোনয়ন দিয়েছি। তাতে আইনী কোন বাধা নেই’।প্রতীক বরাদ্দ নিয়েও সমস্যা নেই জানিয়ে চুন্নু বলেন, ‘এর আগের নির্বাচনও দলীয় প্রার্থীকে আমরা সেভাবে প্রতীক বরাদ্দ দিয়েছি’। তিনি বলেন, লাঙ্গল প্রতীক পেয়ে আমি অনেক খুশি। নির্বাচিত হলে রংপুর নগর বাসীর জন্য অসমাপ্ত কাজ গুলো শেষ করবো।

এই বিভাগের আরও খবর