লালমনিরহাট বার্তা
রক্তের হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমলে অবহেলা করা উচিত নয়
ইত্তেফাক পত্রিকা | ৪ অক্টো, ২০২৩, ১২:৩৮ PM
রক্তের হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা কমলে অবহেলা করা উচিত নয়

রক্তের হিমোগ্লোবিন এক জন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য অতি দরকারি একটা প্রোটিন উপাদান। এক জন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের রক্তে ১৪ থেকে ১৭. ৫ গ্রাম পযর্ন্ত প্রতি ডিসিলিটারে হিমোগ্লোবিন থাকা উচিত এবং মহিলাদের রক্তে হিমোগ্লোবিন ১২ গ্রাম/ ডিসিএল পর্যন্ত স্বাভাবিক ধরা হয়। হিমোগ্লোবিন রক্তের রেড ব্লাড সেল বা লোহিত কণিকার একটি অংশ। মূলত শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ এই লোহিত কণিকার প্রধান কাজ।

শরীরে যদি কোনো কারণে লোহিত কণিকার পরিমাণ কমে যায় তাহলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণও কমে যেতে পারে। ফলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল ও ক্লান্ত হয়ে পড়ে। তবে রক্তে লোহিত কণিকার পরিমাণ হ্রাস পাওয়া ছাড়াও নানা কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যেতে পারে। রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, অ্যানিমিয়া বা রক্ত শূন্যতা। এই রক্ত শূন্যতারও নানা কারণ রয়েছে। যেমন—শরীরের আয়রন হজম ও শোষণের ক্ষমতা কমে যাওয়া, আয়রন সমৃদ্ধ খাবার কম খাওয়া, মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া, শরীরে দীর্ঘমেয়াদি ইনফেকশন থাকা, শরীরের ভিতরে রক্তক্ষরণ বা ইন্টারনাল ব্লিডিং, আয়রন, ভিটামিন বি ১২-এর ঘাটতি, দীর্ঘমেয়াদি কিডনির সমস্যা ইত্যাদি। এছাড়া রক্তের হিমোগ্লোবিন হ্রাসের আরো অনেক বিশেষ বিশেষ কারণ রয়েছে যা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ আলোচনা করে থাকেন।

হিমোগ্লোবিন হ্রাসের এই বিশেষ কারণগুলো সাধারণ আলোচনায় জানা জরুরি নয়। সাধারণত পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রনসমৃদ্ধ খাবার আহার করলেই রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যে সব খাবারে আয়রন বেশি থাকে তার মধ্যে রয়েছে রেড মিট বা লাল মাংস, লিভার বা কলিজা, সব ধরনের ছোট মাছ, ডিম, লালশাক, কচুশাকসহ সবধরনের সবুজ পাতাওয়ালা শাকসবজি, ডাল, শিম ও শিম জাতীয় সবজি, বাদাম, শুকনো বেরী, গাজর, তরমুজসহ বিভিন্ন ধরনের ফলমূলে প্রচুর আয়রন রয়েছে। এসব খাবার প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ আহার করলে রক্তের হিমোগ্লোবিন বাড়তে পারে। প্রথমে জানতে হবে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমার প্রধান কারণ। তবে পর্যাপ্ত আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খেয়েও যদি রক্তের হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ না বাড়ে তবে অবশ্যই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রাথমিকভাবে রুটিন ব্লাড টেস্ট করার পরামর্শ দিতে পারেন। তাছাড়া প্রয়োজনে সেরাম আয়রন, ফেরিটিন এবং টিআইবিসি টেস্ট করা হয়ে থাকে। শরীরে আয়রন অ্যাবসরবশন কেমন হচ্ছে এটা দেখার জন্য রক্তের টিআইবিসি টেস্ট করা হয়ে থাকে। এছাড়া যাদের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম তারা প্রতিদিন আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি একটা করে আয়রন ট্যাবলেট খেতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে অনেক সময় রক্তের হিমোগ্লোবিন যদি অব্যাহতভাবে কমতে থাকে, তবে এটা কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। সংশ্লিষ্ট কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ ডায়াগনসিস করে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

লেখক : ডা. মোড়ল নজরুল ইসলাম, চর্ম ও যৌনরোগ এবং ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ।

এই বিভাগের আরও খবর