লালমনিরহাট বার্তা
ফারাক্কা লং মার্চ ওপালনবাদী রাজনীতি
আজাদ খান ভাসানী | ১২ মে, ২০২৪, ৬:৪০ AM
ফারাক্কা লং মার্চ ওপালনবাদী রাজনীতি

সেদিন হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো মওলানা ভাসানীর ডাকে লাখ লাখ লোক সমবেত হয়েছিল ফারাক্কার অদূরে কানসাট প্রান্তরে। দিনটি ছিল ১৯৭৬ সালের ১৬ মে। সকাল থেকেই সেদিন গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি পড়ছিল। রাস্তার দুই ধারে আবালবৃদ্ধবনিতা-সর্বস্তরের জনসাধারণ ফারাক্কা লং মার্চে এসেছেন। কেউ কেউ এসেছেন পানি, মুড়ি, চিড়া, কাঁচা আম দিয়ে মিছিলকারীদের প্রতি সহানুভূতি জানাতে। সে এক অপরূপ দৃশ্য! তারা জেনেছেন, ফারাক্কায় বাঘের নখর পড়েছে। তা থেকে বাঁচতে প্রয়োজন আগুন প্রতিরোধের। সেই প্রতিরোধ মিছিলের ডাক দিয়েছেন ৯৬ বছর বয়সী বাংলার প্রমিথিউস মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তখন তিনি প্রস্টেট অপারেশনজনিত কারণে হাসপাতালে শয্যাশায়ী। বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা ঘটছে-এটা তাঁর চেয়ে এত স্পষ্ট করে আর কেউ বোঝেননি। প্র¯্রাবের বেগ তিনি ধরে রাখতে পারছেন না। বেদনায় তাঁর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে। ওপারে ভারত ফারাক্কায় পদ্মা নদীতে বাঁধ দিচ্ছে। তবে কি ওরা আমাদের পানিতে মারতে চায়? ভাতে মারতে চাওয়া পশ্চিম পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সদ্যই আমরা বীরদর্পে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। না, তা হতে পারে না। হাসপাতাল থেকেই তিনি ফারাক্কার উদ্দেশে লং মার্চের ডাক দিলেন।

এদেশের গণমানুষের আন্দোলন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ নেতা মওলানা ভাসানী রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে ফারাক্কা লং মার্চ উপলক্ষে ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনামূলক এক ভাষণ দিলেন। ভাষণে তিনি স্পষ্ট করে বললেন- ‘আধিপত্যবাদীরা বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ, পানি, গ্যাস লুণ্ঠন করে নিয়ে যেতে চায়। তারা বাংলাদেশে নতুন করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গোড়াপত্তন করতে চায়।’ এরপর রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৩২ মাইল পথ লাখ লাখ মানুষ হেঁটে চলেছেন মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ফারাক্কা অভিমুখে। দূর থেকে এই আত্মিক জাগরণ বোঝা যায় না। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে তিনি উপস্থিত হলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সন্ধ্যা ৭টায় ফারাক্কা লংমার্চে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে বের হলো ঐতিহাসিক মশাল মিছিল। সে মিছিলের  স্লোগান ছিল- ভেঙে দাও-গুঁড়িয়ে দাও, ফারাক্কা বাঁধ-ফারাক্কা বাঁধ। পরদিন সকাল ৮টায় নদীর ওপরে নৌকা দিয়ে পুলের মতো করে দেওয়া হয়েছিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফারাক্কা পাদদেশ-সোনামসজিদ পর্যন্ত ১৫ মাইল পথ। ঐতিহাসিক সোনামসজিদে নামাজের পরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রেখে তিনি কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করলেন। দেশবাসীকে উদ্দেশ করে তিনি বললেন, আধিপত্যবাদী শক্তির এসব ষড়যন্ত্র ব্যর্থ করে দিতে হলে জনতার গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।

ফারাক্কা লংমার্চের ৪৮ বছর পর আজ ভেবে দেখতে হচ্ছে, আমরা সেই জনতার গণতান্ত্রিক ঐক্য গড়ে তুলতে পেরেছি কিনা। ততদিনে পদ্মা-তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-টিপাইমুখ দিয়ে অনেক পানি গড়িয়েছে। বাংলাদেশের উজানে ভারত থেকে আসা প্রায় সব কয়টি নদীতে তারা বাঁধ দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ আজ বর্ষায় ডুবে আর গ্রীষ্মে শুকিয়ে মরছে। উত্তরে মরূকরণ, দক্ষিণে লবণাক্ততা আমাদের অস্তিত্ব সংকটের কথা জানান দিচ্ছে। নদীনালা, খালবিল, পুকুর-জলাশয় শুকিয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে যাচ্ছে। পৃথিবীর মাত্র ৩ শতাংশ সুপেয় পানির আধার আমাদের জন্য ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে। মিঠাপানির অভাবে শুধু মানুষ নয়; সমস্ত জীবজন্তু, বৃক্ষ-তৃণ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, পোকামাকড়ের জীবনচক্র হুমকির মুখে। বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, লবনাক্ততা, মরুকরণ, ঋতু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ নানা রোগ, শোক, জরা, মহামারি আমাদের নিত্য সাথী হয়ে যাচ্ছে। ক্রমশ আমরা কারবালার দিকে অগ্রসর হচ্ছি।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। অথচ নদী নিয়ে আমাদের সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনা নেই। যে নদী সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ হিসেবে আমাদের দু'কূল ঢেলে দিয়েছিল, সেই নদীই আবার গলার ফাঁস হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। স্বাধীনতা পরবর্তী প্রায় প্রত্যেকটি সরকার নদী ব্যবস্থাপনায় উদাসীনতা দেখিয়েছে। উপরন্তু আমাদের পররাষ্ট্রনীতি ভারতের কাছ থেকে অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতেও ব্যর্থ হয়েছে। ভারত আন্তর্জাতিক রীতিনীতি, আইন কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অভিন্ন নদীতে বাংলাদেশের অধিকার অগ্রাহ্য করে চলছে।

স্বাধীন বাংলাদেশে অভিন্ন নদীতে ভাটির দেশের অধিকার নিয়েমওলানা ভাসানীই সর্বপ্রথম আমাদেরকে সোচ্চার করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৬মে ফারাক্কা লং মার্চের ডাক দিয়েতিনি প্রকৃতিবাদীদের পক্ষে বিশ্বজনমতের কাছে মানবতার এক অনন্য গীতিকাব্য রচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশের জন্য ফারাক্কা বাঁধ হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়েও ভয়াবহ ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি ডেকে আনবে। অনেকের কাছেই তখন তার এই দূরদর্শীতা বাড়াবাড়ি মনে হয়েছিল। কিন্তু আজ দেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক জনতাই এ ব্যাপারে শঙ্কিত। মওলানা ভাসানী যা বলেছিলেন পরিস্থিতি আজ তার চেয়েও ভয়াবহ।

যে ভাসানী স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে ভারতের ‘দালাল’ গালি হজম করেছিলেন; দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে সেই ভাসানীই ‘জলদেবতা’ হয়ে ‘জলজল্লাদ’ এর বিরুদ্ধে ফারাক্কায় লংমার্চের ডাক দিলেন। অশীতিপর বয়সেও তিনি সকল বিভেদ, অনৈক্য ও জড়তা ভেঙ্গে সার্বভৌমত্ব রক্ষার আন্দোলনে শরিক হবার ডাক দিয়ে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালার মতো নিয়ে গিয়েছিলেন ফারাক্কার প্রান্তরে। স্পষ্টত তিনি এই মিছিলকে জতীয় জাগরণ ও জাতীয় ঐক্যের সংগ্রাম বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। ফারাক্কার রাজনৈতিক গুরুত্ব ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের রক্ষাকবচ বলে উল্লেখ করেছিলেন। ফারাক্কার প্রাণঘাতি ব্যারাজ ধ্বংস করে দিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তের দুই পাশের মানুষ, পশুপাখি, জীব-অনুজীব-অর্থাৎ দৃশ্যগ্রাহ্য বা দৃশ্যের বাইরে থাকা সকল প্রাণের রক্ষা এবং তাদের হেফাজত নিশ্চিত করার জন্য এক অভূতপূর্ব মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ভাসানীর এই ডাক কেবল ফারাক্কার ন্যায্য হিস্যা আদায়ের ডাকই নয়; এই ডাক জুলুমের বিরুদ্ধে মজলুমের টিকে থাকার ডাক। মাথা নত না করার ডাক। অধিকার আদায়ে বিশ্বজনমতের ডাক।কিন্তু দুঃখের বিষয়, মওলানার মৃত্যুর পর সেই ঐক্য ধরে রাখা যায়নি। উজানের দেশ ভারতকে ভাটির দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে পানি ব্যবহার নিয়ে ন্যায্য চুক্তিতে বাধ্য করার জন্য যে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা ছিল তা আজ অবধি গড়ে তোলা যায়নি।

মনে রাখতে হবে এ লড়াই কোনো দেশ বা জাতীর বিরুদ্ধে নয়। এই লড়াই মানুষ এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধাচারণের বিরুদ্ধে প্রকৃতিবাদীদের লড়াই। ভারতের নিপীড়িত জনতা আমাদের পাশে থাকবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।এক্ষেত্রে উজান-ভাটির দেশসমুহের পানিসহ অন্যান্য অমীমাংশিত বিষয়সমূহ ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমাধানে বড় দেশগুলোকেই অগ্রনী ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোকে আস্থায় নিতে হবে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য ভারত বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ হওয়া সত্তে¡ও বহু দিন ধরে যৌথনদীগুলোর সমস্যা সমাধানে তালবাহানা ছাড়া কার্যকরী কোনো ভূমিকা পালন করছে না। তাই এতদঞ্চলের জনসাধারণের মনে ভারতের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন ক্রমেই বড় হচ্ছে। এই মনোভাবের প্রকাশ্য বিরোধীতাও সরব হচ্ছে। বল এখন ভারতেরই কোর্টে। তাদের সহনশীল ও মানবিক উপলব্ধির ওপর এতদঞ্চলের শান্তি ও সংহতি অনেকাংশে নির্ভর করছে। আমার মনে হয় ভারত যদি আজ তার প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আন্তরিক হতো তাহলে চীনও এতোটা আশকারা পেতো না।

এসব দিক বিবেচনায় রেখে অত্রাঞ্চলের জীববৈচিত্র রক্ষাসহ জনগণের মৈত্রী ও সংহতিকে প্রাধান্য দিয়ে এখনই সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সন্দেহ, অবিশ্বাস, দূরন্ত কমিয়ে আনা। অত্রাঞ্চলের জনসাধারণের মাঝে অভিন্ন ভ্রাতৃত্ব ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আমাদের পথ দেখাতে পারে। হাজার বছর ধরে একসাথে শান্তিতে বসবাস করার নজীর আমাদের রয়েছে। জনগণের এই ঐক্যকে পানি আগ্রাসন দিয়ে নস্যাৎ করার প্রচেষ্টা রুখতে হবে।

এক্ষেত্রে সমাধানের পথ হিসেবে ২০১৪ সালের ১৭ আগষ্ট কার্যকর হওয়া ‘আন্তর্জাতিক নদীধারা সনদ’টিকে সামনে আনা যেতে পারে। এই সনদের ৭.১ ধারায় বলা হয়েছে যে, উজানে কোনো দেশ আন্তর্জাতিক নদীর পানি এমনভাবে ব্যবহার করতে পারবে না যাতে ভাটির দেশের কোনো ক্ষতি হয়। অববাহিকার এসব দেশের ক্ষতি ও ক্ষতিপূরণ, পানি ব্যবহার নিয়ে বিরোধ, আন্তর্জাতিক আদালত, পরিবেশ রক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে ওই সনদে। ধারা ৭.২ তে বলা হয়েছে যে, উজানের দেশের পানি ব্যবহারের ফলে ভাটির দেশের ক্ষতি হয় তাহলে তাকে (ভাটির) দেশের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সনদটিকে কার্যকর করতে একটি শক্তিশালী আঞ্চলিক নদী কমিশন গঠন করা যেতে পারে। যাতে করে এক দেশ বা অঞ্চল ওপর কোনো দেশ বা অঞ্চলের ওপর যেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে পানি আগ্রাসন চালাতে না পারে। স্নায়ুযুদ্ধের কৌশল হিসেবে মরুকরণ বা বন্যায় ভাসাতে না পারে। তবে বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, কোনো এক অজানা কারণে বাংলাদেশ আজও ওই সনদ অনুসমর্থন করেনি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সনদটি আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানিপ্রবাহ ব্যবহারে একটি মানদন্ড। এতে অভিন্ন নদীর পানি ব্যবহারের সার্বিক নির্দেশনা রয়েছে। সনদটি কার্যকর হওয়ায় ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সংযুক্ত নদীগুলো থেকে প্রবাহিত পানির ন্যায্য হিস্যা না পেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারবে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে নদীবিষয়ক অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে আর্বিট্রেশন বা আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার সুযোগও থাকবে।

পৃথিবীর কোনো দেশই আন্তর্জাতিক আইন, কনভেনশন, চুক্তি এবং জনমত উপেক্ষা করে প্রতিবেশী দেশের ওপর পানি আগ্রাসন চালাতে পারে না। এটা পরমাণু সন্ত্রাসের চেয়ে কম নয়। খোদ ভারতের আদালতেই ফারাক্কা ব্যারাজের ফলে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে ১৩ হাজার কোটি টাকার মামলা হয়েছে। ফারাক্কা ব্যারাজ ভাঙার দাবিতে বিহার রাজ্যেও তীব্র প্রতিবাদ হয়েছে। ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার পানি চুক্তি না হওয়ার সমালোচনা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের পরিবেশবাদীরা উচ্চকণ্ঠ হচ্ছেন। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশ আজ অকাল বন্যা আর নিদারুণ খরায় মাতম করছে। ভারত শুধু ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করেই ক্ষান্ত হয়নি; উজানের প্রায় প্রতিটি নদীর প্রবাহ কোনো না কোনোভাবে রুদ্ধ করে চলেছে। তিস্তা চুক্তি না করে মরার ওপর খারার ঘা হিসেবে নতুন করে পানি সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এতে করে ভবিষ্যত বাংলাদেশের জন্য আরও ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে।

বিশ্বব্যাপী পানি নিয়ে যুদ্ধ নতুন মাত্রা পাচ্ছে। পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে- বিশ্বে আজকে তেল নিয়ে যে যুদ্ধ হচ্ছে অদূর ভবিষ্যতে তা পানিতে গড়াবে। কেউ কেউ সেই যুদ্ধকেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ইউরোপ থেকে এশিয়া, লন্ডন থেকে ঢাকা; সর্বত্রই পুড়ছে মানুষ, পশুপাখি, কীটপতঙ্গ, গাছপালা, তরুলতা; পুড়ছে মানুষ্য জাতির ভবিষ্যত। এই আগুন যতটা না প্রকৃতির তার চেয়ে বেশি আমাদের লোভের। জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে ক্রমশ আমরা একটা মহাপ্রলয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। দিন যতই যাচ্ছে ততই অসুস্থ হয়ে পড়ছে শ্রান্ত পৃথিবী। মানুষেরই কর্মফলে দিনদিন এই গ্রহ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। আজ থেকে প্রায় দুই’শ কোটি বছর আগে যখন ধীরে ধীরে এই গ্রহ ঠান্ডা হলো, গড়ে উঠলো বায়ুমণ্ডল, সমস্ত সৌরজগতের মধ্যে কেবলমাত্র এই গ্রহেই প্রাণের সঞ্চার ঘটেছিল। অথচ আজ বিজ্ঞানীদের গবেষণায় উঠে এসেছে, আগামী দুই’শ কোটি বছর পর পৃথিবী আবার নিষ্প্রাণ হয়ে উঠবে, এমন শঙ্কা। মাঝের এই চার’শ কোটি বছরে মানুষের প্রতিনিয়ত বেড়ে ওঠা লোভ, ভোগের লিস্পা সুজলা-সুফলা, শস্যশ্যামলা সপ্রাণ এই গ্রহকে শীতল, অন্ধকার, নিস্প্রাণ একটা গ্রহতে পরিণত করতে যাচ্ছে। জর্জিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র ভূবিজ্ঞানী অধ্যাপক ক্রিস রেনহার্ড ও জাপানের তোহো বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক কাজুমি ওজাকি জাবির মতে, ‘সূর্য্যরে তাপে ভস্মীভূত হওয়ার অনেক আগেই বিষাক্ত মিথেন গ্যাসে ভরে যাবে পৃথিবী। অক্সিজেনের লেশমাত্র না থাকায় প্রাণ স্তব্ধ হয়ে যাবে। ক্ষতিকর বিকিরণ এবং সূর্য্যরে প্রচন্ড তাপে ধ্বংস হয়ে যাবে ওজোনস্তর, গোটা পৃথিবীতে বিরাজ করবে শুধুমাত্র মিথেন গ্যাস। মানুষ তো দুরস্ত নামমাত্র কয়েকটি অণুজীব ছাড়া কোথাও কোনো প্রাণের অস্তিত্ব থাকবে না।’ অথচ মানুষের এমন ট্রাজিক পরিণতির দিকে অগ্যস্ত যাত্রার জন্য অন্য কোনো জীব নয়, কেবলমাত্র মানুষই দায়ী।

এসব জানা ও উপলব্ধির পরও আমরা প্রতিকারহীন একধরণের বয়লিং ফ্রগ সিনড্রোমে ভুগছি। আর এই সিনড্রোম তৈরীতে ঘি ঢেলেছে পুঁজিবাদ। পুঁজি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, আস্তিক, নাস্তিক ভেদাভেদ জ্ঞান করে না; পুঁজির কাছে সকলই কেবল পণ্য; মুনাফাই তার কাছে বড়। বিশ্বব্যাপী পুঁজি প্রাণ, প্রকৃতি, প্রতিবেশের যে বিনাশ ঘটাচ্ছে এবং মানুষসহ সকল জীবের বেঁচে থাকা কঠিন করে তুলছে, তা আমরা আমলে নিচ্ছি না। যদিও আমলে নিচ্ছি, এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছি না। ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় উন্নত দেশগুলোর নানান প্রতিশ্রæতি সত্তে¡ও সদিচ্ছার অভাবে তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কেবলমাত্র আইন, কানুন, কনভেনশন, চুক্তি আর সম্মেলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে পরিবেশভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম।

অন্যদিকে চলমান সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিকে ঘিরে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর কেউ কেউ তাদের নতুন নতুন ব্যবসায়িক ছক কষছে। যেমন ধরুন পানি। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই বেশিরভাগ মানুষকে পানির প্রাপ্যতা এবং সরবরাহ নিয়ে বড় কোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়নি। প্রকৃতি থেকে সরাসরি আমরা তা আহরণ ও ভোগ করতে পারতাম। কিন্তু গত প্রায় একশ বছরের মধ্যে এই ব্যবস্থার বিপুল পরিবর্তন ঘটেছে। এই শতককেই আবার পুঁজির বিকাশকাল বলে ধরা হয়ে থাকে। বর্তমান পুঁজিতান্ত্রিক গোলকায়নের কালে পানির সহজলভ্যতা সকল জীবের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। পুঁজি পানিকে ব্লুগোল্ড’ বা ‘নীল সোনা’ নামে অভিহিত করে শেয়ার বাজারের প্রধান পণ্য বানিয়েছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায় এখন পানির একচেটিয়া ব্যবসায়িক আধিপত্য কায়েম হয়েছে। এছাড়া পানি ও পানির উৎস নিয়ে বিভিন্ন দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে। উজানের দেশগুলো ভাটির দেশের নদীর প্রবাহে বাঁধ দিয়ে আধিপত্য বিস্তার করতে চাচ্ছে।

এসব সমস্যাকে আড়াল করে তথাকথিত প্রথম বিশ্ব নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জন্য সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করেই চলেছে। বিভিন্ন ধরনের সামরিক জোটভুক্ত হয়ে যুদ্ধের নামে তারা নিজেদের স্বার্থ ও শক্তিমত্তার জানান দিতে গিয়ে নিরিহ নারী, শিশু ও প্রতিবেশের চরম ক্ষতি করছে। অথচ এই অস্ত্রের মজুদের আড়ালে তৃতীয় বিশ্বের লক্ষ কোটি ভুখা নাঙ্গা মানুষের বঞ্চনা আর নির্মমতার ইতিহাস রয়েছে। এসব দেশের সম্পদ লুট করেই তারা ধনী হয়েছে। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে এখন তারা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ছবক দিচ্ছে। অন্যদিকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোকে তারা তাদের যুপকাষ্ঠের বলি বানিয়েছে। সারা বিশ্বের প্রাণ, প্রকৃতি, প্রতিবেশ ধ্বংস করে দিয়ে বিশ্বের ধনী রাষ্ট্রগুলো তাদের জন্য ভোগের স্বর্গ গড়তে চাইছে। এক্ষেত্রেও তারা বিশেষ সিনড্রোমে ভুগছে বৈ কী। কারণ আমরা জানি, নগরে আগুন লাগলে দেবালয় রক্ষা পায় না। এই সিনড্রোম থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতি দরকার।

অতীতেও পৃথিবীরবিভিন্ন দেশে বহুমানুষপানির জন্য লড়াই করেছে। পানির সঙ্গে সংঘাতের সম্পর্ক জটিল ও গভীর। নীল নদ নিয়ে প্রাচীন নুবিয়া ও মিসরের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। কেনিয়ায় বিভিন্ন আদিবাসী গোত্রের মধ্যেও পানি নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। সুদানের দারফুরে গৃহযুদ্ধ শুরুর অন্যতম প্রধান কারণ ছিল পানি সংকট। এছাড়া নীল নদের ওপর রেনেসাঁ বাঁধ তৈরির জের ধরে ইথিওপিয়া এবং মিশরের মধ্যেও ব্যাপক দ্ব›দ্ব চলছে। এর পাশাপাশি আমাজন, মেকং এবং দানিউবের মতো বড় বড় উৎসের পানির অংশীদারিত্ব নিয়ে সংঘাতের দীর্ঘ ইতিহাস আছে। যা বর্তমানে নতুন মাত্রা পাচ্ছে।ব্যাবিলনীয় রাজা হাম্বুরাবির আমল থেকে এ অবধি পানি নিয়ে ছোট-বড় প্রায় ৯২৫টি সংঘাতের বিবরণী পেশ করেছেন প্যাসিফিক ইনস্টিটিউটের প্রধান পেটার গিøক ও তার দল। তারা অনুসন্ধান করে বলেছেন, সেসব সংঘাত নিয়ে যা ঘটেছে, পানির জন্য। এগুলো সরাসরি যুদ্ধ না হলেও এর প্রভাব ছিল যুদ্ধের সমান।

এছাড়াও লেবানন-ইসরাইলের মধ্যে হাসবানি নদী; তুরস্ক, সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যে ইউফ্রেটিস নদী; সিরিয়া ও ইসরায়েলের মধ্যে গ্যালিলি সাগর; ইসরাইল, ফিলিস্তিন ও জর্ডানের মধ্যে জর্ডান নদী; সুদান, মিশর, ইথিওপিয়া ও আরও কিছু দেশের মধ্যে নীলনদ; সেনেগাল ও মৌরিতানিয়ার মধ্যে সেনেগাল নদী; ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে হেলম্যান্ড নদী নিয়ে বিরোধ তৈরি হয়েছে।

আমরা এখন আর এগুলোকে কেবল বিরোধ বা সংঘাত বলছি না। আমরা পানি নিয়ে সরাসরি বিশ্বযুদ্ধের আশঙ্কার কথাবলছি। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘেরতৎকালীন মহাসচিব ভুট্রোস ঘালি বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে পরবর্তী যে যুদ্ধ আসন্ন, তা রাজনীতিভিত্তিক হবে না, যুদ্ধগুলো হবে পানিভিত্তিক। পোপ ফ্রান্সিস একটি মর্মান্তিক প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছিলেন, ‘আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করি যে, টুকরো টুকরো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে যে আমরা বসবাস করছি, তারা কি পানির জন্য একটি মহাবিশ্বযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি না?’

বর্তমান পানির প্রাপ্যতা এবং ভবিষ্যতের অনুমান বিশ্লেষণ করে জাতিসংঘ নিশ্চিত করেছে, প্রায় ৩০০টি এলাকায় পানি নিয়ে সংঘাতের আশঙ্কা রয়েছে। গবেষকদের মতে, আগামী ৫০ থেকে ১০০ বছরে পানিযুদ্ধের আশঙ্কা ৭৫ থেকে ৯৫ শতাংশ।বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ পানিযুদ্ধের যে তত্ত্বটি বারবার উচ্চারণ করছে, তাকে নিরীক্ষা করেছে ইউরোপীয় কমিশনের যৌথ গবেষণা কেন্দ্র  এই কমিশনের বক্তব্য হলো, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এবং সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা ও সামাজিক অস্থিরতাকে ভয়ানক করে তুলতে পারে। এর ফলে রাজনৈতিক সমস্যা বাড়তে পারে এমন এলাকায়, যেখানে মিষ্টি পানির অভাব রয়েছে বা তৈরি হচ্ছে। পানির বিভিন্ন উৎস নিয়ে দেখা দিতে পারে সংঘাত। ২০১৮ সালে যৌথ গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুসারে, এ ধরনের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্পট পাঁচটি। সেগুলো হচ্ছে নীল, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, সিন্ধু, টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস এবং কলোরাডো নদী।

এর মানে হচ্ছে, পানি নিয়ে যুদ্ধের প্রধান স্পট যেসব নদী অববাহিকা, তার দুই নদীর সঙ্গে বাংলাদেশযুক্ত। সেগুলোহচ্ছে পদ্মা ও ব্রহ্মপুত্র। এই দুই নদীর পানি আটকাচ্ছে ভারত ও চীন, তাদের নিজেদের প্রয়োজনে।

পৃথিবীতে যে ২৬৩টি স্বাদু পানির হ্রদ ও নদী অববাহিকা রয়েছে, তা বিশ্বের ১৪৫ দেশের সীমানায় অবস্থিত। এ অববাহিকাগুলোতেই পৃথিবীর বড় বড় সভ্যতার বাস। টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিসে শাতিল আরব; ইউরোপের দানিয়ুব নদী অববাহিকায় সতেরটি; কঙ্গো, নাইজার, নীল, রাইন, জাম্বেজি নদী অববাহিকায় নয়টির বেশি এবং আমাজন, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা, মেকং, ভলগা নদী অববাহিকায় কমপক্ষে পাঁচটি দেশে সভ্যতা রয়েছে। ঐতিহাসিক সত্য হচ্ছে, এসব আন্তঃসীমান্ত নদী বা হ্রদ যুগে যুগে একাধিক দেশের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি করেছে। সময়ের পরিক্রমায় আমাদের পরিবেশ যেমন বিপর্যস্ত হচ্ছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে পানির চাহিদা যা ভবিষ্যতে সংঘাত আরও নিশ্চিত করবে। জাতিসংঘের জন্মের পর গত ষাট বছরে পৃথিবীতে কম আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়নি। তবুও একাধিক দেশের মধ্যে ঘটছে সংঘাতের ঘটনা।

বিশ্বে মিঠা পানির দেশের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ষষ্ঠ। আমাদের মিঠা পানির প্রধান ক্ষেত্র নদী-নালা। কিন্তু পদ্মা-ব্রহ্মপুত্র-তিস্তাসহ বাংলাদেশে অভিন্ন ৫৪টি নদীর মধ্যে ৪৭টি নদীর গতিপথে ছোট-বড় ৫ শতাধিক বাঁধ নির্মাণ করেছে ভারত। আন্তর্জাতিক এই নদীগুলো থেকে ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে চলছে। বাংলাদেশ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে এখন পর্যন্ত দেশের প্রায় ১৫৮টি নদ-নদী, খাল-বিল শুকিয়ে গেছে। বাংলাদেশ গুরুতর পানি সঙ্কটের শিকার। মরুকরণ হচ্ছে ব্যাপক, কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে, নদীতে প্রবেশ করছে সমুদ্রের লবণাক্ত পানি, উপকূলীয় জেলাগুলোতে লবণাক্ততা বাড়ছে, ভূ-গর্ভের পানির স্তর অব্যাহতভাবে নেমে যাচ্ছে, প্রাণ ও প্রকৃতি ভীষণভাবেবিপন্ন হচ্ছে।সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তা ডুয়ান ইভান্স তার সারা জাগানো উপন্যাস ‘নর্থ ফ্রম ক্যালকাটা’ লিখেছেন‘ফারাক্কা সমস্যা’কে উপজীব্য করে। পানি সমস্যাকে ঘিরেই এই উপন্যাসের কাহিনী। বস্তুত এই উপন্যাসের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্যের লড়াই; পানি ও প্রাণসম্পদের ওপর কৌশলগত ও নিরাপত্তাজনিত নিয়ন্ত্রণ কায়েমের রাজনৈতিক ভাষ্য প্রতিভাত হয়েছে।

পৃথিবীর মানচিত্রে আমরা এমন একটা জাতি যারা কোনদিন কারও শান্তি বিনষ্ট করিনি। কারও ভূখণ্ড শোষণ জুলুম আধিপত্য লাভের চেষ্টা করিনি। তাই অন্য কোনো রাষ্ট্র সে যত শক্তিশালীই হোক না কেন আমাদেরকে দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সময়ের প্রয়োজনে ফারাক্কা লং মার্চের চেতনার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই নতুন করে আমাদের ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে।

পানি নিয়ে হক আর ইনসাফ প্রতিষ্ঠা আজ বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম পূর্বশর্ত। এই ইনসাফকে যারা অস্বীকার করে তারা মানবতার শত্রু। প্রাণ, প্রকৃতি ও প্রতিবেশের শত্রু। প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ রক্ষা বা প্রতিপালন রবুবিয়াতের মূল কথা। আর রবুবিয়াতের বরখেলাপ সৃষ্টিকর্তার অমেঘ নিয়মের বিরুদ্ধচারণ বৈকি। তাহলে প্রশ্ন জাগতেই পারে প্রকৃতির চাইতে মানুষ কি বেশী শক্তিশালী? তাই যদি না হয় তবে প্রকৃতির বিরুদ্ধবাদীরা যত শক্তিশালীই হোক না কেন তাদের পরাজয় অবশম্ভাবী। সভ্যতার পরিবর্তনের এই আগমন ধ্বনি প্রকৃতির দিকে কান পাতলে অনায়েশেই শোনা যায়।

আশার কথা হচ্ছে, আমাদের দেশের তরুণরা এ নিয়ে ভাবছে। ফারাক্কা লংমার্চের চেতনা তাদের তাড়িত করছে। সর্বপ্রাণের হক ও ইনসাফ রক্ষার পালনবাদী রাজনীতি গুরুত্ব পাচ্ছে।

(লেখক- আজাদ খান ভাসানী, সভাপতি, মওলানা ভাসানী কৃষক সমিতি; সদস্য সচিব, ভাসানী পরিষদ এবং প্রকল্প সমন্বয়ক, ভাসানী গবেষণা প্রকল্প)

এই বিভাগের আরও খবর