লালমনিরহাট বার্তা
করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রভাবে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | ২৭ জুন, ২০২২, ১:৫৬ PM
করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রভাবে বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি
হঠাৎ করেই করোনার ঊর্ধ্বগতির মধ্যে ডেঙ্গুর প্রভাব বেড়েছে৷ বিশেষজ্ঞরা চিকিৎসকরা বলছেন, কেউ করোনার পর ডেঙ্গু বা ডেঙ্গুর পর করোনার আক্রান্ত হলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে৷ সামনে ঈদ, ফলে এখনই সতর্ক না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে৷কেউ কেউ বলছেন, এটা করোনার চতুর্থ ঢেউ, আবার কেউ বলছে এটা পঞ্চম ঢেউ৷ এটা ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷ গত রোববার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৬৮০ জন, মৃত্যু দুই জনের৷ আগের দিনও একজনের মৃত্যু হয়েছে৷ একই দিন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৩২ জন৷ এর মধ্যে ২৯ জনই ঢাকার৷ চলতি বছরের এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রন্ত হয়েছেন ৯৫২ জন৷ এর মধ্যে একজন মারা গেছেন৷ ডেঙ্গুর মৌসুম সবে শুরু হয়েছে৷
জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এক সপ্তাহ আগেও কোন রোগী ছিল না৷ অনেকদিন পরপর দু'একজন আসত৷ আর এখন ১০-১২ জন আছে৷ যারা আছে তারা টিকা নেওয়ায় তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ ভালো৷ তবে করোনার পর যদি কারো ডেঙ্গু হয় সেটা ভয়ঙ্করভাবে মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করে৷ গত বছর এমন বেশ কয়েকজন রোগী পাওয়া গেলেও এখনও এই হাসপাতালে এমন কোন রোগী আসেনি৷”
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সরকার রাজধানীর পুরাতন পাঁচটি সরকারি হাসপাতাল প্রস্তুত করেছে৷ আর করোনা রোগীদের জন্য ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "শনাক্তের হার ৫ শতাংশের ওপরে গেলেই বিপজ্জনক পর্যায়ে চলে যায়৷ আর এখন নমুনা পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ৷ ফলে অবশ্যই এটা পঞ্চম ঢেউ৷ যদি কেউ কেউ এটাকে চতুর্থ ঢেউ বলছেন৷ সেটা যাই হোক, সামনে ঈদ এখনই সতর্ক না হলে বড় ধরনের বিপর্যয় হতে পারে৷ টিকার প্রভাব মূলত তিন মাস থাকে৷ ফলে যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন৷”
সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের ১২ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ সোমবার আপিল বিভাগে বিচারকাজ পরিচালনার সময় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন৷ প্রধান বিচারপতি বলেন, ১২ জন বিচারক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় কোর্ট পরিচালনা কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে৷ দ্বৈত বেঞ্চের একজন করোনায় আক্রান্ত হলে ওই বেঞ্চের বিচার কাজ বন্ধ থাকে৷ এক্ষেতে তিনি আইনজীবীদের সহযোগিতার আহ্বান জানান৷
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, "করোনা, ডেঙ্গু ও মৌসুমি সর্দি-জ্বর এই তিনের সংমিশ্রণে বিপজ্জনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে৷ কেউ যদি কোন একটা রোগে আক্রান্ত হন তাহলে অন্যগুলোর পরীক্ষা করাও জরুরি৷ যদি একেকটা রোগের ধরণ আরেকরকম৷ করোনার কারণে আক্রান্ত হয় ফুসফুস৷ আর ডেঙ্গু আক্রান্ত করে রক্ত৷ ফলে আমাদের স্বাস্থ্য বিধি মানতে হবে৷ আর ডেঙ্গু মোকাবিলার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান চালাতে হবে৷ এডিস মশার উৎসস্থল ধ্বংস করতে হবে৷
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, "করোনার উর্ধ্বগতির মধ্যেই আমরা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করলাম৷ সেখানে কতজন মাস্ক পরে গিয়েছিল সেটা আমরা টিভিতে দেখেছি৷ সিলেটে ত্রাণের জন্য বহু মানুষ একত্রিত হচ্ছে, সেখানে তো আর স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ নেই৷ আবার সামনে ঈদ বহু মানুষ শহর থেকে গ্রামে যাবেন৷ ফলে ঝুঁকি বাড়ছেই৷ এর সঙ্গে ডেঙ্গু যোগ হওয়ায় সামনের সময়ে কঠিন পরিস্থিতি হতে পারে৷ ফলে সরকারকে সচেতন হতে হবে, আমাদেরও সচেতন হবে৷”
করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের দাপট কমলে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হাজারের নিচে নেমে আসে৷ ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে একপর্যায়ে ২৬ মার্চ তা ১০০ এর নিচে নেমে এসেছিল৷ গত ৫ মে দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা নেমেছিল চার জনে৷ শনাক্তের হার ১ শতাংশের নিচে ছিল বেশ কিছু দিন৷ তবে গত ২২ মে'র পর থেকে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে৷ ১১ সপ্তাহ পর দৈনিক শনাক্ত কোভিড রোগীর সংখ্যা গত ১২ জুন আবার ১০০ ছাড়িয়ে যায়৷ ১৪ দিনের মাথায় রোববার তা দেড় হাজারের ঘরও ছাড়িয়ে গেছে৷

বাংলাদেশে টিকায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন
দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয় ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে৷ প্রথমে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রার কথা জানালেও পরে তা কমিয়ে ৭০ শতাংশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা৷ গত ২৬ জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির ১৬ মাসে প্রথম ডোজ গ্রহীতার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার ৮০৯ জন৷ যা জনসংখ্যার ৭৬ দশমিক ২৮ শতাংশ৷ আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ কোটি ৯১ লাখ ৯৯ হাজার ২৪৫ জন৷ যা মোট জনসংখ্যার ৭০ দশমিক ৪৯ শতাংশ৷ সেই হিসাবে দেখা যায়, লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও প্রায় ১ কোটি বেশি মানুষকে প্রথম ডোজের টিকা দেওয়া হয়েছে৷ ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে দ্বিতীয় ডোজেও৷
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২০'-এর হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯১ লাখ৷ সুতরাং মোট জনসংখ্যার দেশের ৭০ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকার আওতায় আনতে হবে৷ সেই হিসাবে ১১ কোটি ৮৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষকে টিকা প্রাপ্তির কথা থাকলেও প্রায় এক কোটি ছয় লাখ ২৫ হাজার ৮০৯ জন বেশি মানুষ এসেছে প্রথম ডোজের আওতায়৷ আর লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে আট লাখ ২৯ হাজার ২৪৫ জন অতিরিক্ত মানুষকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে৷ আর বুস্টার ডোজ নিয়েছেন দুই কোটি ৮৭ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ জন৷

টিকা দেওয়া হবে পাঁচ-১২ বছর বয়সিদেরও
জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে পাঁচ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে৷ এজন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে হবে৷ সোমবার দুপুরে রাজধানীতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান৷ তিনি বলেন, "যাদের জন্ম নিবন্ধন নেই, তাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে করে নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি৷” করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশকে আরও ৪০ লাখ ফাইজারের টিকা অনুদান দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র৷ ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশকে ফাইজারের টিকার আরও চার মিলিয়ন (৪০ লাখ) রেডি টু ইউজ ডোজ অনুদান দিতে পেরে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত৷(সূত্র: ডয়েচে ভেলে)
এই বিভাগের আরও খবর