লালমনিরহাট বার্তা
বিশ্ব শিক্ষক দিবস: প্রাসঙ্গিক কথন -নজরুল ইসলাম হক্কানী
বার্তা ডেস্কঃ | ৬ অক্টো, ২০২১, ১:২২ PM
বিশ্ব শিক্ষক দিবস: প্রাসঙ্গিক কথন -নজরুল ইসলাম হক্কানী
৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়েছে।
বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শিক্ষক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচি পালন করেছে।আমি নিজেও শিক্ষকতার পেশায় ছিলাম দীর্ঘকাল।
শিক্ষক সে তো অনেক কঠিন সাধনা।অনেক চেষ্টা করেও আমি প্রকৃত শিক্ষক হতে পারিনি। চেষ্টা করছিলাম।সময় বড় নিষ্ঠুর।সাধনা অসমাপ্ত রেখেই সময়ের ডাকে অবসরে যাই,২০১৫ সালে।বর্ধিত মেয়াদে ২০১৮ সাল অবদি তোমাদের প্রাণোচ্ছল বাঁধনে আমার জীবনের অনেকটা সময় কেটেছে তোমাদের স্পর্শে। ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় কলেজে দীর্ঘ ২১ বছর ছিলাম তোমাদের পাশে,ইটাকুমারীর মাটি ও মানুষের সাথে।১৪ বছর শিক্ষকতার পেশায় যুক্ত ছিলাম কাউনিয়া ডিগ্রী কলেজে।
সাধনা থেকেছে অসমাপ্ত।শিক্ষক বড় সম্মানের পেশা।শিক্ষককে শিক্ষার্থীরা স্যার ডাকে।শিক্ষার্থীর বাবা- মা, দাদা-দাদি-নানা-নানি -পাড়াপড়শি, কাছের দুরের সবাই স্যার বলে সম্মোধন করে।বিশাল সম্মান। সচিব,ডি,আই,জি,পিডি,ডিডি,যুগ্নসচিব,ডিসি- এস,পি প্রশাসনিক নানাস্তরের কর্মকর্তাদের সবাই স্যার বলে ডাকে।স্যার-স্যার,জ্বি- স্যার-ইয়েস স্যার!সবাই থাকে ভয়ে টটস্ত।তবে, ওনারা অবসরে গেলে হন অবসরপ্রাপ্ত আমলা। তখন কেউ ওনাদের স্যার বলেনা। শিক্ষক ব্যতিক্রম।অবসরে গেলেও শিক্ষককে সবাই স্যার বলে।এ যেন এক অন্যরকম পেশা।সম্মান, ভালবাসা অর্জনের পেশা।এ সম্মান ধরে রাখতে শিক্ষকদের " সাধনা-গবেষণার" কাজে নিবেদিত থাকতে হবে আমৃত্যু। রাষ্ট্রকে দিতে হবে শিক্ষকদের সর্বোচ্চ সম্মান। সার্বক্ষণিক শিক্ষা- গবেষণার কাজে শিক্ষককে নিয়োজিতরাখতে দরকার তাঁদের সর্বোচ্চ
আর্থিক সুযোগসুবিধা। তাহলেই মেধাবীরাই এ পেশায় যুক্ত হবেন সবাই।
জ্ঞান বিক্রি নয়- করতে হয় উজাড় করে বিতরণ।জ্ঞান সাধনার অর্জিত ফল।এ ফল প্রতি শিক্ষার্থীদেরকাছ থেকে ১২ দিনে মাস ধরে ১ হাজার অথবা ২ হাজার টাকায় বিক্রির বস্তু নয়। গ্রামের নিজ শিক্ষালয় ফাঁকি দিয়ে শহরে গিয়ে টাকা উপার্জনের ধন্ধায় টিউশনি করানো বা ব্যবসাবানিজ্যে নিজকে সমর্পিত করা শিক্ষকের পেশা হতে পারেনা। সমাজ পচে গেলেও
শিক্ষককে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়!নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা সার্বক্ষণিক সময় ও মনোযোগ না দিলে গ্রামের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থির হার কমবে।গ্রামের সকল স্তরের শিক্ষালয়ে " মানসম্পন্ন " শিক্ষা দেয়া না গেলে শিক্ষার্থীরা শিক্ষার সটকাট চাহিদা পূরণের পথেই ছুটবে।দলবেঁধে কোচিং বা প্রাইভেট টিউটরের বাসায় ডাল,তেল কেনার মতো শিক্ষাও কিনতে যাবে এসব দোকানে।
বিপর্যয় ঘটবে নীতি,নৈতিকতা ও শ্বাশত মানবিক মূল্যবোধের।বিচ্ছিন্ন হবে শিক্ষার সঙ্গে মানবতার যোগ।মানবপ্রেম,মুক্তবুদ্ধি,ইতিহাস,ঐতিহ্য, ক্রীড়া-সংস্কৃতি এবং বিঙান-প্রযুক্তি চর্চার পথ হবে রুদ্ধ। পিছিয়ে পড়বে গ্রাম- গ্রামের গরিব ঘরের সন্তানসন্ততি'রা।মানুষিক স্বভাবে শিক্ষার্থীরা হবে উচ্ছৃঙ্খল। প্রান্তিক স্তরের ছেলেমেয়েরা ঝড়ে পড়বে শিক্ষার প্রবাহমান ধারা থেকে।শিক্ষা বাজেটে শিক্ষা বরাদ্দ না বাড়ালে, কারিগরি-কর্মমূখি, বিঙান- প্রযুক্তি অভিমূখে শিক্ষাক্রমকে সাজাতে না পারলে চলমান শিক্ষার সব আয়োজন মুখথুবড়ে পড়বে।
সমাজের আর্থসামাজিক ব্যবস্থা বাণিজ্যমুখি হলে শিক্ষা এবং শিক্ষকরা কি ওই স্রোতের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন!(?)।
হ্যাঁ, উজান ঠেলে হলেও বাণিজ্যিক ব্যবস্থার বিপরীতে শিক্ষকদেরকেই নতুন পথ দেখাতে হবে। সমাজে অতীতে এরকম অনুকরণীয় অনেক শিক্ষক ছিলেন যারা আলোর পথেই হেটেছেন । তাঁরা অসীমের দেশে চলে গেলেও এখনো কিংবদন্তি হয়ে বেঁচে আছেন।বেঁচে থাকবেন আকাশের তারা হয়ে। বর্তমানে এ সংখ্যা কমলেও অনেক শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের আমরা সন্ধান পাবো।এঁনারা বৈষম্য পীড়িত আর্থসামাজিক ব্যবস্হার মধ্যেও আলোর পথেই হাঁটছেন। অন্ধকারের বিপরীতে সমাজের সমষ্টিগত স্বার্থে আলো বিতরণ করছেন।বলছেন,' তোমরা সবাই মানুষ হও।মানুষের বিপদাপদে, দুর্যোগে মানুষের পাশে থাক।'
শিক্ষক দিবসে ওইসব ব্রতচারী, শিক্ষার ফেরিওয়ালা নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষকদের নিবেদন করছি "শ্রদ্ধাঞ্জলি"।
শিক্ষক দিবসে সকল শিক্ষক, আমার অগনিত
ছাত্রছাত্রীদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন,
শুভেচ্ছা ও অফুরন্ত ভালবাসা।

লেখক: নজরুল ইসলাম হক্কানী
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, ইটাকুমারী শিবচন্দ্র রায় কলেজ,সভাপতি তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও
সংগ্রাম পরিষদ।
এই বিভাগের আরও খবর