লালমনিরহাট বার্তা
রংপুরের তিস্তা নদী পাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে
রংপুর অফিসঃ | ৫ সেপ, ২০২২, ১:৫৬ PM
রংপুরের তিস্তা নদী পাড়ের ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে

রংপুরের তিস্তা নদী পাড়ে বসবাসরত ২ কোটি মানুষের জীবনে মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে বলে অভিযোগ করেছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।সোমবার দুপুরে রংপুর প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন সমাবেশ থেকে এসব অভিযোগ তুলে অবিলম্বে ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ। মানববন্ধনে রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার সহ¯্রাধিক মানুষ অংশ নেন।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতার বলেছেন, আন্তঃদেশীয় ব্যবস্থাপনায় তিস্তা নদী অববাহিকার দুই দেশ ভারত-বাংলাদেশ মিলে নদী ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারা ও দেশীয় ব্যবস্থাপনায় নদী খনন, ভাঙন রোধে কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করতে না পারায় তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশের ১১৫ কিলোমিটারে পরিষদের নেতাদের অভিযোগ, তিস্তা অববাহিকার জনপদে খরা, বন্যা ও নদী ভাঙনে ঘরে ঘরে আহাজারি চলছে। নদী ভাঙনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বর্তমানে কোথাও কোথাও তিস্তা নদীর প্রস্থ হয়েছে ১০-১২ কিলোমিটার। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিস্থিতি ক্রমাগত বেসামাল হয়ে উঠছে তিস্তা নদী পাড়ের মানুষের জনজীবন। এ পরিস্থিতিতে তিস্তা চুক্তি সই এবং নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞান সম্মত ভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গেরিলা লিডার শফিকুল ইসলাম কানু, ড. তুহিন ওয়াদুদ, সাদেকুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আলী, বখতিয়ার হোসেন শিশির, কেন্দ্রীয় নেতা সাজু সরকার, মোস্তাফিজার রহমান, আশিকুর রহমান ও বাবুল আকতার, নজরুল ইসলাম মোল্লা, কালীগঞ্জ উপজেলা কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক, আদিতমারী উপজেলা কমিটির আহবায়ক ইঞ্জিনিয়ার দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। সূচনা বক্তব্য রাখেন লালমনিরহাট জেলা সহ-সভাপতি মাখন লাল দাস।

সংহতি জানিয়ে রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগ, জাসদ, কমিউনিস্ট পার্টি, ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ জাসদ, বাংলার চোখ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এবছর ভারত থেকে ধেয়ে আসা অসময়ের উজানের ঢলে রংপুর অঞ্চলের তিস্তা অববাহিকায় সপ্তমবারের মতো বন্যা হয়েছে। হরকা বন্যা ও নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় এই অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়েছে। খরা মৌসুমে গজল ডোবায় বাঁধ দিয়ে শুকনো মৌসুমে পানি আটকে রাখে ভারত। আবার একটু পানি বেশি হলেই বাংলাদেশকে কিছু না জানিয়ে গজল ডোবার গজবে ভাসাচ্ছে এই অঞ্চলের মানুষদের।প্রতিবছর ব্যাপক ফসলহানি ঘটছে। হুমকিতে পড়ছে খাদ্য নিরাপত্তা।নদী ভাঙনে বাড়ছে উদ্বাস্তু মানুষের সংখ্যা, বাড়ছে।বাড়ছে গড় দারিদ্রের হার।তাদের অভিযোগ, ২৩৫ বছর বয়সী নদী তিস্তার জন্ম লগ্ন থেকে আজ অবধি কোনো পরিচর্যাই করা হয়নি। তিস্তা নদীর নাব্যতা নেই। নেই সামান্য গভীরতা। নদী শাসন ও বন্যা রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার নিয়ন্ত্রণ বাঁধ তৈরি করেছিল। তিস্তার ডান তীরে নড়বড়ে ওই বাঁধ থাকলেও তিস্তা নদী বা তীর সম্পূর্ণ অরক্ষিত ও কোন বাঁধ নেই। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ ।

মানববন্ধনে তিস্তা নদীর দু”পাড়ের জেলা নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বিভিন্ন উপজেলা থেকে শত-শত রংপুরে আসেন।মানববন্ধনটি রংপুর প্রেসক্লাব চত্বর থেকে জাহাজ কোম্পানী মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ হয়।

এই বিভাগের আরও খবর