লালমনিরহাট বার্তা
শিশু গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা নড়ছে নাজিরা
রংপুর অফিস | ২০ এপ্রি, ২০২৪, ৪:৩১ AM
শিশু গৃহকর্মীকে খুন্তির ছ্যাকা রংপুর মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা নড়ছে নাজিরা

ঢাকায় কাজ করতেগিয়ে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারপিট সহ গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হয়েছে নাজিরা (৯) এক শিশু গৃহকর্মীকে সে এখন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যু যন্ত্রণায় পাঞ্জা নড়ছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রাজধানী ঢাকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত আনোয়ার হোসেনের বাসায়। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঈদের দু’দিন পর কাজের বিনিময়ে এক প্লেট ভাত চাওয়ায় শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এসময় অসহ্য যন্ত্রণায় এক গ্লাস পানি চাইলে বুকে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হয়। মুখে কাপড় দিয়ে বেধে রেখে এই পাষবিক নির্যাতন চালিয়েছে আনোয়ার ও তার স্ত্রী।

ঘটনার পর গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে নাজিরার দাদা তাকে সেখান থেকে গাইবান্ধায় নিয়ে আসেন। এরপর প্রথমে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করান।

জানা গেছে, নাজিরা গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব বালেয়াপাড়ার বাসিন্দা দৃষ্টি প্রতিবন্ধি ইসা খা আর অসুস্থ্য জোছনা বেগম দম্পতির কন্যা। অভাবের সংসারে কিছুটা ভার কমাত গত রমজান মাসে প্লাবন নামের স্থানীয় যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে গৃহকর্মী হিসেবে ঢাকায় পাঠান বাবা-মা।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বেডে শুয়ে ভুক্তভোগী নাজিরা জানায়, কাজে যোগদানের পর থেকেই নানা অজুহাতে তাকে বেধরক মারধর করত গৃহকর্তা আনোয়ারের স্ত্রী। ঈদের দুইদিন কাজ শেষে খাবার চাওয়ায় হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে উঠেন আনোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী। এক পর্যায়ে স্বর্ণ চুরির অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর ও গরম খুন্তি দিয়ে আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয় তারা। খবর পেয়ে গত ১৩ এপ্রিল গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমার দাদা ঢাকা থেকে আমাকে গাইবান্ধার বাড়িতে নিয়ে আসেন।

নাজিরার পরিবারের দাবি, দিনভর কাজের পর ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে চেয়েছিলেন এক প্লেট ভাত আর তাতেই খুন্তি গড়ম করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় গৃহকর্মী নাজিরার শরীরের বিভিন্ন অংশ।

নাজিরার মা জোছনা বেগম জানান, ঢাকা থেকে নিয়ে আসার পরদিন খুব অসুস্থবোধ করলে নাজিরাকে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে ছাড় পত্র দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বলা হলে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা। বর্তমানে মেয়ের অবস্থা ভালো নয় জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে রমজান মাসে প্লাবন নামের এক যুবকের মাধ্যমে নাজিরাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। পাবন বিমানবন্দরের উচ্চমান সহকারী আনোয়ার হোসেনের বাসায় তাকে গৃহকর্মী হিসেবে রাখে । কাজে যোগদানের পর থেকেই আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী নির্যাতন করতো নাজিরাকে। সর্বশেষ ঈদের পর স্বর্ণ চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে গরম খুন্তি দিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাকা দেয়ার অভিযোগ করেন নাজিয়ার মা।

কিশোরীকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া যুবক প্লাবনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বিমানবন্দরে অফিস পিয়ন হিসেবে চাকরি করি। আনোয়ার স্যারের অনুরোধে তার বাসার কাজের জন্য আমার আত্মীয় নাজিরাকে গৃহকর্মীর কাজে ঢাকায় নিয়ে যাই। নাজিরা যখন কাজে যোগ দেয় এর পর থেকে আমাকে আনোয়ার স্যার আর তার সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি। কোনো খোঁজ খবর জানতে চাইলে তিনি গুরুত্ব দিতেন না। হঠাৎ ঈদের পর আনোয়ার স্যার আমাকে ফোন করে জানান তিনি নাজিরাকে নিয়ে কুমিল্লায় আছেন। সেখানে নাজিরার শারীরিক অবস্থা খারাপ। কি হয়েছে সেটা জানতে চাইলে তিনি আমার সাথে রাগারাগি করেন। পরে আমি খোঁজ নিয়ে ঘটনা জানতে পেরে নাজিরার দাদাকে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই।আনোয়ার স্যার মাইক্রোবাসে করে নাজিরাকে নিয়ে এসে তার দাদার তুলে দেন। এরপর থেকে আনোয়ার স্যারের ফোন নম্বর বন্ধ রয়েছে।শুনেছি নাজিরা কাজের যোগদানের কয়েকদিনের মাথায় একবার পাঁচ হাজার চুরি করে ধরা পড়ে। এ ঘটনার পর থেকে আনোয়ার স্যারের স্ত্রী নাজিরাকে খুব নির্যাতন করত।আমি নাজিরাকে দেখে মর্মাহত। গাইবান্ধা সদর হাসপাতাল ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির সময় আমি তার সঙ্গে ছিলাম।আমার সামর্থ্য অনুযায়ী চিকিৎসার জন্য চেষ্টা করছি। আনোয়ার স্যারকে ভালো মানুষ মনে করেছিলাম কিন্তু তিনি আমার বিশ^াস কেড়ে নিয়েছে।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডাঃশাহীন শাহ জানান, গত ১৭ এপ্রিল বুধবার নাজিরাকে (৯) রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করানো হয়েছে। তার ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাকা দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত কোন সঠিক চিকিৎসা না হওয়ায় ওই স্থানগুলোতে ইনফেকশন হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমত চেষ্টা করছি। তবে তার অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়।

এই বিভাগের আরও খবর