রংপুরের সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে বিক্রি সংক্রান্ত মামলায় এক বছরের দন্ড প্রাপ্ত হওয়ায় সাময়িক বরখাস্ত হলেন রংপুর সিটি করর্পোরেশনের ১৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর। জাকারিয়া আলম শিপলু নগরীর তাজহাট মেট্রোপলিটন থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক । শিপলুকে সাময়িক বরখাস্ত করে সোমবার ( ১৫ মে) প্রজ্ঞাপন জারি করেন স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থাণীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব মোহাম্মদ জহিরুল আলম।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, শিপলু রংপুর চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে দায়েরকৃত সিআর ১৭২/৭২ মামলায় দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ৪২০ ধারায় এক বছরের কারাদন্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও তিন মাসের কারাদন্ডাদেশ থাকায় স্থানীয় সরকার ( সিটি করর্পোরেশন) আইন ২০০৯ এর ১২ ধারার উপ ধারা ১ অনুযায়ী তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া একই আইনের ১৩ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী স্থায়ীভাবে অপসারণের লক্ষে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
গত ১ এপ্রিল জাকারিয়া আলম শিপলুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে বিক্রি সংক্রান্ত মামলায় দন্ড প্রাপ্ত, তিনটি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্তসহ ৮ মামলার আসামী, সিটি নির্বাচনের হলফনামায় তথ্য গোপন, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কবরস্থানের জমি বেদখল, মাদকে পৃষ্ঠপোষকতা সহ গড়ে তোলা বাহিনীর বিভিন্ন অপকর্মের বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে যমুনা টেলিভিশনের ক্রাইম সিন।এতে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ৫ এপ্রিল ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী হওয়া সত্বেও স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সাইবার আদালতে যমুনার স্টাফ করেসপনডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্বা আইনে মামলার আবেদন করেন শিপলু।আদালত দাখিল হওয়া মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মামলা গ্রহণ কিংবা গ্রহণ না করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিবেন আদালত।ওই মামলায় নূর মোহাম্মদ এবং শাফিউল ইসলাম শাফি নামের আরো দুইজনকে আসামি করা হয়েছে।এরমধ্যে নূর মোহাম্মদের কাছেই তিনি এবং তার দুই সহযোগী জহরুল আলম শাহীন এবং খায়রুল ইসলাম রাসেল সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমি জাল দলিল করে রেজিস্ট্রি বায়না করেছিলেন। এ বিষয়ে নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন।এই মামলায় পত ২০ ফেব্রæয়ারি শিপলুসহ তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এক বছরের কারাদন্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায় আরও তিন মাসের কারাদন্ডাদেশ দেন রংপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।ওই মামলায় সাজাবৃদ্ধির জন্য হাইকোর্টে আপিল করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা নূর মোহাম্মদ।ওই দন্ডাদেশের কারণেই জাকারিয়া আলম শিপলুকে সাময়িক বরখাস্ত করলো স্থানীয় সরকার বিভাগ।
জাকারিয়া আলম শিপলু কর্তৃক যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্টের বিরুদ্ধে মামলার পর পরই পুলিশ অনুসন্ধান করে পায় তার বিরুদ্ধে চারটি মামলার ওয়ারেন্ট রয়েছে।চারটি মামলায় গত ৭ এপ্রিল তাকে নগরীর বিনোদপুরের বাড়ি থেকে গেপ্তার করে পুলিশ। এসময় বিভিন্নভাবে গ্রেপ্তার অভিযান বাধা গ্রস্থ করার চেস্টা চালায় তার বাহিনী।৮ এপ্রিল আদালতের বিচারক তিনটি মামলায় জামিন দিলেও জিআর ১৮১/২২ মামলায় জামিন নাকোচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন জানিয়েছেন, রংপুর সিটি কর্পোরেশনের ১৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকারিয়া আলম শিপলুকে মামলার ওয়ারেন্টের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে জমি দখল, বাড়ি নির্মাণে বাধা দেয়া, ভাঙচুর, মারপিট, চাঁদাবাজির অভিযোগে ২৪৪/২২ এবং এবং ১৮১/২২ নম্বর মামলা এবং বিদ্যুৎ কোর্টে বিল বকেয়া রাখার কারণে ৪০৫৪/২১ নম্বর মামলায় ওয়ারেন্ট ছিল।তার বিরুদ্ধে আরো একাধিক মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়াও তিনি একটি মামলার এক বছরের দন্ড প্রাপ্ত আসামি। ওয়ারেন্টগুলো আগেই আদালত জারি করলেও প্রক্রিয়াগতভাবে ওয়ারেন্টগুলো আমাদের কাছে না থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সরকার মাজহারুল মান্নানের নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার আবেদনের ঘটনায় ফুঁসে উঠে সাংবাদিক সমাজ। তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে মামলাটি প্রত্যাহার কিংবা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছেন।
রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহবায়ক জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আব্দুস সাহেদ মন্টু এবং সদস্য সচিব লিয়াকত আলি বাদল জানান, সাংবাদিক নেতারা মনে করেন, গণমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করার জন্যই অপরাধীরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার করে মামলা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের হয়রানি এবং সত্য প্রকাশ যেন না করতে পারে সেজন্য ভীতি তৈরি করা হচ্ছে।