লালমনিরহাট বার্তা
বিদ্যালয়ের জমি বেহাত, ৬০ বছরেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি
স্টাফ রিপোর্টার | ১৯ অক্টো, ২০২৩, ১১:৫৬ AM
বিদ্যালয়ের জমি বেহাত, ৬০ বছরেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ২ একর ৫৮ শতাংশ জমি বেহাত ৬০ বছর ধরে। দীর্ঘদিনেও বিদ্যালয়ের এ সম্পতি/জমির দখল নিতে পারেনি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একাধিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয় পরিচালনা কর্তৃপক্ষ অনেকবার চেষ্টা করেও বিফল হয়েছেন। এতে বেসরকারি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি আর্থিক সমস্যায় পড়েছে। পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে, বিরুপ প্রভাব পড়ছে পরিচালনা পর্ষদ ও শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ওপর।

১৯৫৫ সালে বুড়িমারী মৌজার ১ একর ৬১ শতকের জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যালয়টিতে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১১ টি সেক্টরের মধ্যে একমাত্র ৬ নম্বর সেক্টরটি দেশের অভ্যন্তরে এ বিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে এ প্রতিষ্ঠানটি অন্যন্য মর্যাদার স্মৃতি বহণ করছে। মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিদ্যালয়ের ৫০ শতক জমি মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়কে দিয়েছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বুড়িমারী স্থলবন্দর এলাকার এ জমির মূল্য দুই কোটি টাকার অধিক। মুক্তিযুদ্ধে ৬ নম্বর হেড কোয়ার্টার স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর নির্মাণে ২০১১ সালের ১৩ এপ্রিল বিনামূল্যে এ জমি দলিল করে দেওয়া হয়।

বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার সময় উপজেলার বুড়িমারী মৌজার শামসুল হক প্রামাণিক ৫৬ শতক, আসাদুজ্জামান খোকা ৩১ শতক, আইনুল হক ২২ শতক, আলিমুদ্দিন ১ একর ১৩ শতক, নজরুল ইসলাম ৭০ শতক ও ইসলামপুর মৌজার জরিনা খাতুন ৫১ শতক, জকিমুদ্দিন ১ একর ৮৫ শতক, উফারমারা মৌজার শহীদুল্যা মাস্টার ৪৩ শতক, জাহামুদ্দিন ৫৪ শতক, তছির উদ্দিন ২৩ শতক ও আজিজুল ইসলাম প্রধান ৩৩ শতক জমি দান করেন। অন্যান্যসহ এসব জমি দলিল ও রেকর্ড মূলে মোট বিদ্যালয়ের জমি ৭ একর ১৯ শতক।

এরমধ্যে বুড়িমারী মৌজার নজরুল ইসলামের দেওয়া ৭০ শতক জমি শুরু থেকে বেদখল করে রেখেছেন ছেলে গোলাম মোস্তফা। অপরদিকে উফারমারা মৌজার ৯১ শতক জমি দাতা আজিজুল ইসলাম প্রধান। দাতার এ জমিও প্রথমে ছেলে আতাউর রহমান প্রধান (মৃত) পরে তাঁর স্বজনেরা ৬৮ শতক, দাতা শহীদুল্যাহ মাস্টারের ছেলে ফরহাদ হোসেন ৪৩ শতক, দাতা জাহামুদ্দিনের ছেলে আছির উদ্দিন আহমেদ ৫৪ শতক, দাতা তছির উদ্দিনের ছেলে কমির উদ্দিন মাস্টার ২৩ শতক জমি বেদখল করে রেখেছেন। এভাবে মোট ২ একর ৫৮ শতক জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য এক থেকে দেড় কোটি টাকা।

জমি উদ্ধারে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান শিক্ষক ২০০৭ সালে বিদ্যালয়ের সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্মরণাপন্ন হন। তৎকালীন ইউএনও জমি উদ্ধারে দখলদারদেরকে নোটিশ দেন। কিন্তু দখলদারেরা কোনো অবস্থাতেই জমি ছাড়তে রাজি হননি।

৭০ শতক জমি দখলে রাখার ব্যাপারে অসুস্থ গোলাম মোস্তফার ছেলে মেহেদী হাসান রিয়াল বলেন, ‘বাবা অসুস্থ। চাচারা জানেিয়ছে, দাদার অনেক জমি ছিল। কিছু জমি বিদ্যালয়ে মৌখিকভাবে দিতে পারে। লিখিত কোনো দলিল নাই। আমাদের এ জমির দলিল, লিখিত সবই আছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত দলিল নিয়ে আসলে আমরা জমি ছেড়ে দিবো।’

আতাউর রহমান প্রধান (মৃত)- এর ছেলে আবু মান্নান মো. আতিকুজ্জামান প্রধান বলেন, ‘কোন্ জমি কোথায় আছে বলতে পারবনা। আপনাকে জেনে জানাবো।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম খন্দকার বলেন, ‘জমি উদ্ধারে বহু চেষ্টা করেও বিদ্যালয়ের জমি গুলো উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।’

পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও বিদ্যালয়ের সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি জানলাম। কাগজপত্র দেখে জমি উদ্ধারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর