লালমনিরহাট বার্তা
ভাওয়াইয়া গানের রানি শরীফা রাণী চলে গেলেন
বার্তা ডেস্ক | ২৭ এপ্রি, ২০২৩, ৫:১২ AM
ভাওয়াইয়া গানের রানি শরীফা রাণী চলে গেলেন

ভাওয়াইয়া গানের রানি হিসেবে খ্যাত রংপুরের জনপ্রিয় শিল্পী শরীফা রাণী আর নেই। তিনি এখন থেকে কিছুক্ষণ আগে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে ইহলোক থেকে বিদায় নিয়ে অনন্ত জগতের পথে যাত্রা করেছেন। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্নাইলাইহে রাজেউন।

শরীফা রাণী রাজধানীর শ্যামলী রিং রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত দুদিন আগে তাঁর রক্তচাপ প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এলে তাঁকে অচেতন অবস্থায় দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত তিনি অচেতন অবস্থায় থেকেই শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। শরীফা রাণীর জন্ম ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ই জুন, বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। শরীফা রাণী দীর্ঘদিন থেকে কিডনি রোগে ভুগছিলেন। তাঁকে গত ৮ বছর থেকে ডায়ালাইসিসের ওপর চলতে হয়েছে।

বিয়ের পর ১৯৭৪ থেকে শরীফা রাণী তাঁর স্বামী প্রকৌশলী নুরুন্নবীর সঙ্গে রাজধানীর আগারগাঁও তালতলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁদের এক মেয়ে, দুই ছেলে এবং নাতি-নাতনি রয়েছে। ঢাকায় থিতু হওয়ার পর ১৯৭৭/৭৮-এ বেতার ও টেলিভিশনে গান গাওয়া ছেড়ে দেন শরিফা। এরপর তিনি সংসার ও ধর্মকর্মে নিজেকে যুক্ত রাখেন। শরীফা রাণী হজব্রত পালন করেছেন।

বলে রাখা প্রাসঙ্গিক যে, নিলফামারী জেলার কৃতি সন্তান, গীতিকার, সুরকার ও গায়ক মহেশ চন্দ্র রায়ের "কানিচাত গাড়িনু আকাশি আকালি / আকালি ঝুমঝুম করে রে বন্ধুয়া / আকালি ঝুমঝুম করে...." গানটি মুক্তিযুদ্ধের আগে রংপুর বেতারে পরিবেশন করে শরীফা রাণী সেসময় আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। অর্ধ শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও তাঁর সেই সুরেলা গায়কি আজও কেউ অতিক্রম করতে পারেনি। তাঁর কণ্ঠে মিশে থাকতো রংপুরের সোঁদা মাটির আমেজ আর এ অঞ্চলের মানুষের নির্মল ভাবাবেগ।

তাই আজও ভাওয়াইয়ার এই কিংবদন্তি শিল্পীকে কেউই ভুলে যায়নি। 'কানিচাত গাড়িনু' গানটি আজও শহরে কিংবা গ্রামে অত্যন্ত মমত্ববোধের সঙ্গে পরিবেশন করা হয়। এ ছাড়াও 'বাওকুমটা বাতাস যেমন ঘুরিয়া ঘুরিয়া মরে/ বন্ধু ধন, ধন রে/ বন্ধু কাজল ভোমরা রে / ওকি গাড়িয়াল ভাই/ বাবার দ্যাশে রঙিন গাড়িয়াল ও/ ও মোর বানিয়া বন্ধু রে/ ওরে গাড়িয়াল বন্ধু রে/ তুই কোন্টে গেলু/ বাপোই চ্যাংড়া রে/ কারবা বাড়ির চিতিয়া বিলাই/ দোলা মাটির মোর বতুয়ারে শাক/ মুই না শোনোং না শোনোং তোর বৈদেশিয়ার কথা'... ইত্যাদি গান গেয়ে ভাওয়াইয়া সাম্রাজ্যের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন শরীফা রাণী।

তাঁর কন্ঠে গ্রামবাংলার যাপিত জীবনের মরমিয়া সুর খুব সহজে ঢেউ খেলে যেতো। তাঁর ভাওয়াইয়া গান শুনলে মনে হতো, সহজ-সরল গ্রাম্য বধুর প্রাণের আকুতি অবলীলায় প্রকৃতির প্রান্ত ছুঁয়ে গেছে। তাঁর গান শুনে আকুল হয়ে উঠতো গ্রামের অগণিত শ্রোতার মন ও প্রাণ। ভাওয়াইয়া শুনে তারা প্রাণের শেকড়কে বারবার ধারণ করে বিগলিত হয়ে পড়তেন।

শরীফা রাণীর আদি নিবাস রংপুর শহরের মুন্সীপাড়ায়। বাবা আব্দুল গণি ও মা শাহেদা বেগম আগেই অনন্তলোকে চলে গেছেন। চার ভাই চার বোনের মধ্য শরীফা রাণী সকলের বড়ো। ভাইদের মধ্যে বড়ো শামসুল আলম জবা সম্মুখ সমরের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ১০/১২ বছর আগে বিদায় নিয়ে তিনি আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন।

শরীফা রাণী মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল, রংপুর সরকারি গার্লস স্কুল ও কারমাইকেল কলেজে লেখাপড়া করেছেন। এরপর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। শরীফা রাণী আমার সহপাঠী বন্ধু শামীম আরা বেগম রুবির বড়ো বোন। তাই, তিনি আমারও বড়ো বোন। রাণী আপার মহাপ্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি এবং তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। একইসঙ্গে শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।(সূত্রঃ আলী আখতার গোলাম কিবরিয়ার ফেসবুক থেকে)

এই বিভাগের আরও খবর