লালমনিরহাট বার্তা
সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত
বার্তা অনলাইন ডেস্ক | ২৪ অক্টো, ২০২৩, ৩:১৬ PM
সমুদ্র বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে বলা হয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় 'হামুন' তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দরসহ উপকূলের ব্যাপক এলাকায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় প্রস্তত রাখা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। ঘূর্ণিঝড় 'হামুন' বুধবার (২৫ অক্টোবর) দুপুর নাগাদ ভোলার কাছে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।

মঙ্গলবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৯ নম্বর বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হামুন উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটি তীব্রতর হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা বা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রের কাছে সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। দমকা হাওয়ার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছ থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

সাগরে সৃষ্টি হওয়া প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে, ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিজস্ব ‘অ্যালার্ট ৩’ জারিসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে অবস্থানরত ২২টি জাহাজকে গভীর সাগরে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, “আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেতের ওপর নির্ভর করে, বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত ‘অ্যালার্ট- ৩’ জারি করা হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের ৫, ৬ ও ৭ নম্বর সতর্কতা সংকেতের জন্য এ অ্যালার্ট জারি করা হয়। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকাল ১১টায় বন্দর ভবনে কর্মকর্তাদের জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।”

এদিকে, চট্টগ্রাম বন্দরে পাইলটের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কনট্রোল রুমে খোলা হয়েছে। বন্দরের মেরিন ডিপার্টমেন্ট, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের সহায়তায় বন্দর চ্যানেল ও জেটি থেকে ছোট বড় সব জাহাজ বহির্নোঙরে কিংবা শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব ছোট জাহাজ ও নৌযানগুলো জেটিতে বাঁধা হয়।

এদিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন উপকূলীয় এলাকার লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে আনা, সচেতনতামূলক মাইকিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

বরিশাল থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ

উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'হামুন' ক্রমশ উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায়, বরিশাল থেকে সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বরিশালের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন।

তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, চট্টগ্রাম, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষীপুর ও চাঁদপুর জেলা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। তবে বরিশাল নদীবন্দরে ২ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।”

নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যাবস্থাপনা বিভাগ, বরিশালের সহকারী পরিচালক রিয়াদ হোসেন বলেন, “ মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে অভ্যন্তরীণ ও ঢাকা-বরিশাল রুটের সকল লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মাইকিংয়ের মাধ্যমে মাছ ধরার নৌকা, যাত্রীবাহী ট্রলারসহ সকলকে নিরাপদে চলাচল করতে বলা হয়েছে। লঞ্চগুলো নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নোঙর করার জন্য বলা হয়েছে।”

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় হামুন মোকাবেলায় বরিশাল জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় বরিশাল জেলার সকল সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, বরিশাল জেলায় ৫৪১ টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতির পাশাপাশি ৬১টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়াও দুর্যোগ মোকাবেলায় ৩২২ মেট্রিক টন চাল মজুদ রাখা হয়েছে। দুর্গতদের তাৎক্ষণিক খাদ্য সরবরাহের জন্য ৭৭০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিশুদ্ধ পানি ও শুকনো খাবারের মজুদ রয়েছে বলেও তিনি।

খুলনায় ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত

ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবেলায় খুলনায় প্রস্তুত রয়েছে ৬০৪টি সাইক্লোন শেল্টার। এসব সাইক্লোন শেল্টারে ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার স্বেচ্ছাসেবককে। প্রস্তত রাখা হয়েছে শুকনো খাবার ও ওষুধ। প্রস্তত রয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড।

খুলনার জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসির আরেফীন বলেন, “মঙ্গলবার সকালে অনলাইনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলার জন্য ৬০৪ টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাতে পরিস্থিতি অনুযায়ী ঝুঁকিপূর্ণ লোকজন সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। এসব সাইক্লোন শেল্টারে মোট ৩ লাখ ১৫ হাজার ১৮০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। এছাড়া, ৩টি মুজিব কিল্লায় ৪৩০ জন মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে ও ৫৬০টি গবাদি পশু রাখা যাবে।”

তিনি জানান, কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলায় ৫ হাজার ২৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককে প্রস্তুত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিজ কর্মস্থলে থাকার জন্য বলা হয়েছে।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আমিরুল আজাদ জানান, “ঘূর্ণিঝড়ের যে গতিপথ আছে, তা পরিবর্তন না হলে আপাতত ঘূর্ণিঝড় খুলনা উপকূলে আঘাত হানার আশঙ্কা নেই। তবে ঝড়ের প্রভাবে দমকা বাতাস, ভারী বৃষ্টি ও নদীতে পানির উচ্চতা বাড়তে পারে।”

বাগেরহাটে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় হামুন উপকূলের দিকে অগ্রসর হওয়ায়, বাগেরহাটের উপকূলীয় এলাকায় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বলেশ্বর নদী পাড়ে ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।বাগেরহাটের মোংলা উপজেলাসহ বিভিন্ন নদী পাড়ে ১৮৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক রয়েছে।

জেলায় ১০টি কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষদের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ৪৪৬টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতিমূলক সভা করা হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. খালিদ হোসেন জানান, জেলায় ১০টি কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। দুর্গত এলাকার মানুষদের আশ্রয়ের জন্য ৪৪৬টি সাইক্লোন শেল্টার, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মাদরাসা ও কলেজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

বাগেরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ জানান, বলেশ্বর নদীতীরে ২৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে ৩ কিলোমিটার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে বালুর বস্তা ফেলে ডাম্পিং করা হচ্ছে।

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, আবহাওয়ার সতর্ক বর্তার ওপর নির্ভর করে বন্দরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে

আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) আবহাওয়া অধিদপ্তরের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীদমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।(সুত্র:ভয়েস অফ আমেরিকা)

এই বিভাগের আরও খবর