রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমবারের মতো এন্ডোস্কপিক ব্রেইন টিউমার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই অস্ত্রোপচার করেছে হাসপাতালের ছয় সদস্যের একটি চিকিৎসক দল। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি জানাজানি হলেও সাফল্যগাথা এই অস্ত্রোপচারটি গত সোমবার রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই সম্পন্ন হয়। সেইদিন (১৬ মে) রাত সাড়ে দশটায় শুরু হওয়া এ অস্ত্রোপচার আলোর মুখ দেখে রাত তিনটার দিকে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ মোঃ তোফায়েল হোসাইন ভূঁইয়াএই অস্ত্রোপচারে নেতৃত্ব দেন ।সঙ্গে অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজকুমার রায়, সহকারী অধ্যাপক ডাঃ হাবিবুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক ডাঃ শামীমা সুলতানা ও হাসপাতালের অ্যানেস থেশিওলজি বিভাগের ডাঃ হাসি। এছাড়া সঙ্গে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ ইসমে আজম জিকো ।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই প্রথম অস্ত্রোপচার প্রসঙ্গে ডাঃ ইসমে আজম জিকো বলেন, হাসপাতালে ৩৫ বছর বয়স্ক এক রোগী ভর্তি হন। তিনি উত্তরবঙ্গে মানুষ। তাঁর সমস্যা চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছে। তিনি ডান চোখে দেখেন না, বাম চোখে দেখেন, কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে কম।রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জনরা চৌম্বকীয় অনুরণন প্রতিচ্ছবি (এমআরআই) করে ওই রোগীর চোখের নার্ভের নিচে একটা টিউমার দেখতে পান। টিউমারটি দিন দিন বাড়তে থাকায় যেখানে চোখের নার্ভের জাংশন হয়, সেখানে প্রেসার দিচ্ছে।তিনি আরও বলেন, টিউমারটি চোখের নার্ভে চাপ দেওয়ার কারণে রোগীর দৃষ্টিশক্তি কমে যাচ্ছিল। টিউমার শনাক্তের পর চিকিৎসকরা অস্ত্রোপচারের পরিকল্পনা করেন। অস্ত্রোপচারটি দুই ভাবে করা যায়, কেটে অথবা নাক দিয়ে এন্ডোস্কপি দিয়ে।এর আগে হাসপাতালে কেটে অনেক সফল অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু কখনো উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে নাক দিয়ে এন্ডোস্কপিক করা হয়নি। এন্ডোস্কপিক করতে যত সুযোগ-সুবিধা ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্রয়োজন, সেটা পুরোপুরি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিল না।একারণে সেখানকার নিউরোসার্জনরা প্রয়োজনীয় বাকি সাপোর্টটা ঢাকা থেকে নেয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই সূত্র ধরেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডাঃ ইসমে আজম জিকোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ডাঃ জিকো বলেন, আমাকে ফোনে বলা হলো ঢাকা থেকে সাপোর্ট দিলে অপারেশনটি সফলভাবে সম্পন্ন করা যাবে। এবং আমাকে তাঁরা আমার ব্যক্তিগত যন্ত্রপাতি নিয়ে রংপুরে ডেকে নেয়। আমি তাদের সঙ্গে অপারেশনটিতে অংশ নিয়েছি।ওই রোগীর এন্ডোস্কপিক ব্রেইন টিউমার অস্ত্রোপচার সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যম একটি নতুন ইতিহাসও সৃষ্টি হলো।ব্যাপারটা আমি খুব আনন্দ সহকারে নিয়েছি। আমার ব্যক্তিগত লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে যাই। পরে আমরা রাত সাড়ে দশটার দিকে রোগীকে অ্যানেস্থেশিয়া দেই। কাজ শেষ করতে তিনটা বেজে যায়। সোয়া তিনটার দিকে তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। রোগীর অবস্থা এখন খুবই ভালো। রোগী কথা-বার্তা ও হাঁটা-চলা করতে পারছেন, খেতেও পারছেন। তাঁর অবস্থা উন্নতির দিকে।
এব্যাপারে জানতে চাইলে অস্ত্রোপচার দলের অন্যতম সদস্য রংপুর মেডিকের হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. শামীমা সুলতানা বলেন, এই অপারেশনটি সম্পন্ন করতে পেরে আমরা খুবই খুশি। এমন একটি অপারেশন প্রথমবারের মতো রংপুরে করতে পেরেছি। আমাদের এখানে অনেক যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা রয়েছে। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে সাফল্যের সঙ্গে অপারেশনটি শেষ করতে পেরে আমরা সবাই আনন্দিত। সরকার আমাদেরকে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দিলে ভবিষ্যতেও এমন অপারেশন আরও করা সম্ভব।