লালমনিরহাট বার্তা
দেশ জুড়েই গুঞ্জন ছিল ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে
ইত্তেফাক | ৬ আগ, ২০২৩, ৪:১৬ AM
দেশ জুড়েই গুঞ্জন ছিল ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার আগে দেশে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছিল। বঙ্গবন্ধু বাকশাল গঠন করেছিলেন। যা পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সেই অস্থির সময়ে সারা দেশে মানুষের মধ্যে গুঞ্জন ছিল যে, দেশে ভয়ংকর কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে। এ খবর চক্রান্তকারীদের কানেও পৌঁছেছিল। ফারুকের বোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনই একটি গুঞ্জন শুনে এসে কর্নেল রশিদকে জানায়। সে শুনেছিল যে, দেশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে যাচ্ছে। যার নেতৃত্বে রয়েছে সামরিক বাহিনীর তরুণ অফিসাররা। মেজর রশিদ ও ফারুকের বুঝতে কষ্ট হলো না যে খবর ফাঁস হচ্ছে। তারা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। খুনিচক্র খুব বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সারা দেশে ত্রাসের সৃষ্টি করতে পেরেছিল। মানুষের মনে এই অভ্যুত্থানের আতঙ্ক এমনভাবে ছড়ানো হয়েছিল যে, যখন সত্যিকার আক্রমণ এলো তখন তার প্রতিরোধ করার শক্তি মানুষের মধ্যে ছিল না। বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যা করার পরে সারা দেশের মানুষ ভয়ানক আতঙ্কে স্থবির হয়ে পড়েছিল যেন।

রশিদ ও ফারুক সবার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল। একদিকে খন্দকার মোশতাক, জিয়া, জেনারেল ওসমানীর এডিসি মেজর নূর, মেজর শাহরিয়ার সবার সঙ্গেই আলাদাভাবে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিল। ১৯৭৫ সালের ১৩ আগস্ট দুপুরে আগা মসিহ লেনে খন্দকার মোশতাকের বাসায় রশিদ কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই দেখা করতে যান। মাত্র ১০ মিনিট সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। রশিদ মোশতাককে জিগ্যেস করেছিল কিছুদিনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বিদেশে যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। তিনি ঢাকাতেই আছেন কি না। মোশতাক কর্নেল রশিদকে কিছুই জিগ্যেস করেননি, শুধু হেসে বলেছিলেন, না দেশেই আছেন। মোশতাক অত্যন্ত ধুরন্ধর মানুষ ছিলেন তার বুঝতে কষ্ট হয়নি যে, ঘটনা ঘটতে চলেছে।

১৫ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ১৪ আগস্ট রাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বঙ্গবন্ধুর আসার প্রতিবাদে গ্রেনেড চার্জ হয়। এরপর ঢাকার রাস্তায় ট্যাংক নামে। সেদিন রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। তিনি বঙ্গবন্ধুকে জিগ্যেস করেন, ‘রাস্তায় এত ট্যাংক কেন?’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রেনেড চার্জ হয়েছে। সে কারণে আমি তিনটি ট্যাংক নামাতে বলেছি।’

কাদের সিদ্দিকী জানান যে, ‘তিনটি নয়, বেশি বেরিয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘তোর তো সব কিছুতে সন্দেহ।’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় ট্যাংক নামানো এমন কি সেদিন ভোরে যখন সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা হলো তখনো কেউ সন্দেহ করতে পারেননি যে, এটা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। এমন কি বঙ্গবন্ধুও ভেবেছিলেন যে, এটা জাসদ বা বিপ্লবী কোনো গ্রুপের কাজ।

এই বিভাগের আরও খবর