লালমনিরহাট বার্তা
রংপুর অঞ্চলের জনপদ তিস্তা ও ঘাঘট গ্রাস করছে
রংপুর অফিসঃ | ৫ সেপ, ২০২১, ১:৫৪ PM
রংপুর অঞ্চলের  জনপদ তিস্তা ও ঘাঘট গ্রাস করছে
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলার বুক চিরে বয়ে চলা তিস্তা নদীকে বলা হয় পাগলা নদী। প্রয়োজনীয় পানির অভাবে বছরের বেশির ভাগ সময়ে এ নদীর বুক থাকে পানিশূন্য। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে তিস্তার গতিমতি বদলে যায়। উজানের ঢলে যৌবন ফিরে পাওয়া নদী হয়ে ওঠে রাক্ষুসে রূপে। দীর্ঘ সময় পানিশূন্যতায় থাকার আক্ষেপ মেটাতে ভাঙতে থাকে নদীর দুকূল।প্রতিদিন ভাঙ্গন খেলায় তিস্তার পরিধি বাড়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে নদীপাড়ের মানুষের আহাজারি। এবারও বদলায়নি এ নদীর স্বভাবসুলভ আচরণ।গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণ, দফায় দফায় ভারতের ছেড়ে দেয়া পানির ঢলে তিস্তা এখন জল রাশিতে পূর্ন। কখনো পানি বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী ভাঙ্গন কবলিত মানুষ। অব্যাহত নদীভাঙনে বদলে যাচ্ছে গঙ্গাচড়ার কোলকোন্দ ও লক্ষীটারী ইউনিয়ন।লালমনিরহাটের গোকুন্ডা ইউনিয়ন,রাজপুর ইউনিয়ন,রংপুরের পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের অনেক গ্রাম। তিস্তা নদীর সঙ্গে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে ঘাঘট নদেও।গত দুদিন ধরে গঙ্গাচড়ায় ঘাঘট নদের ভাঙনে বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে নদগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে কবরস্থান। হুমকিতে পড়েছে রাস্তা সহ ফসলি জমির ক্ষেত ও বেশ কিছু বসতভিটা। তিস্তার কোল ঘেঁষা আলমবিদিতর ইউনিয়নের চওড়াপাড়ায় দুদিনের ভাঙনে ঘাঘটে ছয়টি পরিবারের বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া সেখানকার নগরবন এলাকার কবরস্থানটি এখন ঘাঘটে মুখের কাছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে অনেক পরিবারকেই হতে হবে আশ্রয় হীন ।
আজ রোববার সরেজমিনে দেখা গেছে, আলমবিদিতর ইউনিয়নের চওড়াপাড়ায় ঘাঘট নদের হঠাৎ ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে আতঙ্কে আছেন সেখানকার মানুষজন। অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ঘরবাড়ি ভেঙে আসবাব নৌকায় নিয়ে অন্যত্র যাচ্ছেন।আবার কেউ কেউ বসতভিটা বাঁচানোর চেষ্টায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ফসলি জমি আর জীবন-জীবিকার আশ্রয় হারিয়ে অনেকে অন্যের জমিতে আশ্রয় নিয়েছেন। গত দুইদিন আগে তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নতুন করে আবার ভাঙন ভয় তাড়া করছে ঘাঘট পাড়ে।
ভাঙনকবলিত চওড়াপাড়ায় মতিয়ার রহমান জানান, তার মতো অনেকেই অর্থের অভাবে বাড়ি নির্মাণ করতে পারছেন না। এখন নদী থেকে একটু দূরে ঘরের চাল ও আসবাব নিয়ে রেখেছেন। কিন্তু উপায় না থাকায় পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে রাতযাপন করছেন।তিনি বলেন, ‘‘মোর চোখের সামনোত আবাদি জমিগুলা, ঘরবাড়ি কত কিছু নদীত ভাঙি গেল”। মেলা মাইনষের বসতভিটাও যায় যায় অবস্থা। ঘরবাড়ি যে সারে নিয়া অন্যটে যাইমেন, তারও তো টাকা লাগে। এই বানের সময় কোটে টাকা পামো। হামার তো চাইরোপাকে কপাল খারাপ। এমন করিয়ায় নদীর সাথে যুদ্ধ করি হামার জীবনটা চলি যাওছে”।
একই এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তার একটি ঘর ও টয়লেট ভেঙে গেলেও অর্থসংকটে অন্য ঘর সরাতে পারছে না। পাশাপাশি গ্রামে আরও কিছু বাড়ি, রাস্তা ও আবাদি জমি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে। নগরবনের এলাকায় ঘাঘটের ভাঙনে কবরস্থানটি ভেঙে যাচ্ছে।
ভাঙনের খবর পেয়ে শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন আলমবিদিতর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, সহ জন প্রতিনিধিরা। এ সময় তারা ভাঙন রোধে দ্রæত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওকে অবগত করেন। পরে ইউএনও ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতি গ্রস্থ পরিবারকে সহায়তা প্রদানসহ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।
রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাসলীমা বেগম জানান, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবগত করেছেন। তারা ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলানোসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। এ ছাড়া ভাঙনকবলিত পরিবার গুলোকে খাদ্যসহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এই বিভাগের আরও খবর