লালমনিরহাট বার্তা
ট্রেন দুর্ঘটনা: নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়লো তিন শিশু, বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন গার্ড
বার্তা অনলাইন ডেস্ক | ৮ ডিসে, ২০২১, ১:১৪ PM
ট্রেন দুর্ঘটনা: নীলফামারীতে ট্রেনে কাটা পড়লো তিন শিশু, বাঁচাতে গিয়ে মারা গেলেন গার্ড
রেলসেতুর উপর বসে খেলছিল তিনটি শিশু। তাদের দিকে ছুটে আসছিল একটি ট্রেন। পাশেই একটি ইট ভাঙার মেশিন চলছিল বলেই হয়তো তারা শুনতে পায়নি ট্রেনের হুইসেল। তাই তাদের বাঁচাতে ছুটে আসেন সেতুর নিরাপত্তারক্ষী। কিন্তু শিশু তিনটিকে বাঁচাতেতো পারলেনই না তিনি, নিজেও প্রাণ হারালেন।
নিহত শিশু তিনটির দুজন মেয়ে, একটি ছেলে। আট থেকে দেড় বছর বয়সের শিশু তিনটি আপন ভাই-বোন। ঘণ্টা দুয়েক পর তাদের মর্মান্তিক এই মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান তাদের নানা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, নীলফামারী সদর উপজেলার কুন্দুপুকুর ইউনিয়ন সংলগ্ন দেওনাই নদীর ওপর রেললাইন ব্রিজের সংস্কার কাজ চলছে গত কিছুদিন যাবৎ।
বুধবার সকালেই এক ট্রাক ইট এসেছে সে কাজে। আনার পরপর শুরু হয়েছে ইট ভাঙার কাজ। রেললাইনের অদূরে খেলছিল তিনটি শিশু।
সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ চিলাহাটি থেকে খুলনাগামী রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেনটি যখন আসে, তখন ইট ভাঙার মেশিনের শব্দে সে ট্রেনের হুইসেলের শব্দ শোনা যায়নি।
বাচ্চারা যে শব্দ শুনতে পায়নি সেটা সম্ভবত লক্ষ্য করেছিলেন, সেতুর নিরাপত্তারক্ষী সালমান ফারসি শামীম। মুহূর্তে দৌড়ে ছুটে আসেন তিনি। ছোট্ট শিশুটিকে কোলে আর বাকি দুইটি শিশুর হাত টেনে লাইনের বাইরে আনার চেষ্টা করেছিলেন।
কিন্তু এর মধ্যে একটি শিশুর পা আটকে যায় রেলের স্লিপারে।
এরপর মুহূর্তেরও কম সময়ে দ্রুতগামী ট্রেনটি প্রাণ কেড়ে নেয় চারজনেরই। বড় দুটি শিশু কাটা পড়ে ট্রেনে। আর দেড় বছরের ছেলে শিশুটিকে কোলে নিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিনের ধাক্কায় ব্রিজ থেকে ছিটকে নিচে পড়ে যান শামীম। হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তার কোলে থাকা অবস্থায় আগেই মারা যায় দেড় বছরের শিশুটি।
পুরো ব্যাপারটি ব্রিজের একশো মিটারের মধ্যে থাকা চায়ের দোকানে বসে দেখেছেন মোঃ আব্দুল মোমেন।
প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান:
আব্দুল মোমেন পেশায় রঙ মিস্ত্রী। নিহত নিরাপত্তারক্ষী মি. শামীমের খালাতো ভাই তিনি।
বিবিসিকে তিনি বলেছেন, দুই-তিন মিনিটের মধ্যে ঘটলো পুরো ব্যাপারটা।
"কেউ তাদের সাহায্য করতে যাবারও উপায় বা সময় ছিল না।"
তিনি বলেছেন, নিহত শিশুদের পরিবার, শামীম এবং তিনি তারা সকলেই রেললাইন সংলগ্ন বৌবাজার মনসাপাড়ায় থাকেন।
শিশু তিনটির বাবা রেজোয়ান মিয়া পেশায় রিকশাচালক, মা নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে কাজ করেন।
সকালে মা-বাবা কাজে বেরিয়ে যাবার পর প্রতিদিনের মত বাড়ির লাগোয়া রেললাইনের কাছে খেলতে যায় বাচ্চারা।
মি. মোমেন বলেছেন, কয়েকদিন ধরে কুয়াশা পড়ার কারণে স্থানীয় মানুষের অনেকেই রোদ পোহাতে রেললাইনের ওপর এবং আশপাশের চায়ের দোকানে ভিড় জমান।
তিনিও চায়ের দোকানে চুলার পাশে বসে চা খাচ্ছিলেন।
মি. মোমেন বলেছেন, ট্রেনটি যখন আসে ইট ভাঙার মেশিনের শব্দে ট্রেনের হুইসেল শোনা যাচ্ছিল না।
তখন শামীম ওই বাচ্চাদের নাম ধরে চিৎকার করতে করতে ছুটে যান রেললাইনের দিকে।
নিহত শামীমের বয়স ২৮ থেকে ত্রিশের মধ্যে।
স্ত্রী আর সাত বছর বয়েসী এক কন্যাকে নিয়ে মনসাপাড়ার বাড়িতে থাকতেন শামীম।
পুলিশ কী বলছে?
নীলফামারী সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ, বলেছেন চারজনের লাশ ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তুতি চলছে।
ইতিমধ্যে রেলওয়ে পুলিশ বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনার পর খুলনাগামী ট্রেনটিকে থামতে বাধ্য করে স্থানীয় মানুষজন, এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা আটকে রাখার পর পুলিশের মধ্যস্থতায় ট্রেনটিকে ছেড়ে দেয়া হয়।
পুলিশ বলছে, রেললাইন থেকে মানুষজন সরে যেতে ট্রেনটি সিগনাল দিয়েছিল কিনা সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। (সূত্র: বিবিসি বাংলা)
এই বিভাগের আরও খবর