লালমনিরহাট বার্তা
নিরাপদ প্রস্থান চান নাকি ক্ষমতাচ্যুতি চান, সিদ্ধান্ত নিন— মির্জা ফখরুল
ভয়েস অফ আমেরিকা | ১৯ অক্টো, ২০২৩, ৪:৪৫ AM
নিরাপদ প্রস্থান চান নাকি ক্ষমতাচ্যুতি চান, সিদ্ধান্ত নিন— মির্জা ফখরুল

বিরোধী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আগামী ২৮ অক্টোবরের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার) কি ক্ষমতা ছেড়ে নিরাপদে সরে যাবে, নাকি জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হবে।

তিনি বলেন, আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে সরকার পতন এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রচারণা জোরদার করতে মহাযাত্রা শুরু করবে বিএনপি।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ ঘোষণা দেন।

বিএনপির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মীদের নিয়ে এই সমাবেশের আয়োজন করে।

সরকারের পদত্যাগ এবং বিদেশে চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তিসহ দলের এক দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

ঘোষিত মহাসমাবেশকে আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ের আংশিক কর্মসূচি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ২৮ অক্টোবর বিরোধী দল ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে।

তিনি নেতা-কর্মীদের উৎসাহ দিয়ে বলেন, “মহাসমাবেশের পর ইনশাল্লাহ আমরা এই সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত থামব না”।

মির্জা ফখরুল বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই মহাসমাবেশের আয়োজন করা হবে। “আমরা সকল রাজনৈতিক দল, যারা যুগপৎ আন্দোলন করছি তারা এই কর্মসূচি সফল করব”।

তিনি বলেন, “এটি একটি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি হবে। দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী এই সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ সরকারের পতন আমরা নিশ্চিত করব”।

মির্জা ফখরুল বিএনপি নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, মহাসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার অনেক বাধা-বিপত্তি সৃষ্টি করতে পারে। “কিন্তু জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হলে সম্ভাব্য সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে সমাবেশকে সফল করতে হবে”।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপপ্রচার চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, সরকার আসন্ন পতন উপলব্ধি করে বিভিন্ন অশুভ কৌশল অবলম্বন করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে বিএনপির সমাবেশের আগে সরকার বিএনপির আড়াই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

তারা সম্মানের সঙ্গে ক্ষমতা ছাড়বেন নাকি জনগণের হাতে ক্ষমতাচ্যুত হবেন, সে বিষয়ে দুর্গাপূজার শেষ নাগাদ সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অবৈধভাবে সংবিধান সংশোধন করে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের অজুহাত হিসেবে সংবিধানকে দেখাচ্ছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সংবিধানের কথা বললেও তারা সবসময় এর ধারা লঙ্ঘন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, এটা বাস্তবতা যে সরকার দমনমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করে জনগণ ও আন্দোলনকে দমন করতে পারবে না। “সরকার যত তাড়াতাড়ি এটা উপলব্ধি করবে, ততই তাদের জন্য মঙ্গল হবে”।

মঙ্গলবার রাতে এভারকেয়ার হাসপাতালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার কোনো বিকল্প না থাকায় চিকিৎসকেরা তাঁর শারীরিক অবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন।

তিনি বলেন, সরকার এতটাই নৃশংস ও অমানবিক যে, জীবন বাঁচাতে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।

সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বর্তমান সরকারের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাওয়ায় দমনমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।

তিনি বলেন, বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে না দেওয়ার জন্য তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য সরকার অনেক নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। “কিন্তু তারা তা করতে পারেনি। বিএনপি নেতারা এখন কোনো কিছুকে ভয় পান না। কারণ তাদের লক্ষ্য এই সরকারকে উৎখাত করা”।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের হুঁশিয়ারি— ‘শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশের চেয়েও ভয়াবহ পরিণতি বিএনপিকে ভোগ করতে হবে’ প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, হঠাৎ করে রাজপথে নামার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। “আমরা আমাদের কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকব”।

তিনি আরও বলেন, হেফাজতের সমাবেশ চলাকালে সরকার শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে বলে ওবায়দুল কাদের তাঁর বক্তব্যে স্বীকার করেছেন।

ওবায়দুল কাদেরের হুমকি প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির এই নেতা বলেন, হেফাজত ও বিএনপি এক রকম সংগঠন নয়, কারণ আমাদের দল নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় ছিল।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাদের আন্দোলনকে সফল করবে।

ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী ব্যানার, ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি নিয়ে মিছিল নিয়ে সমাবেশ যোগ দেন।

ফকিরাপুল থেকে বিজয়নগর পর্যন্ত সড়ক ও গলি-গলিতে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভিড়ে ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সমাবেশের অতিরিক্ত জনতা আশেপাশের রাস্তা এবং স্থানগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে।

বিএনপি ছাড়াও সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোও এক দফা দাবিতে বিভিন্ন শহরে পৃথক সমাবেশ করেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নয়াপল্টন এলাকায় বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর