লালমনিরহাট বার্তা
সুজনের আয়োজনে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠক
বার্তা ডেস্কঃ | ৫ অক্টো, ২০২১, ৪:১৫ AM
সুজনের আয়োজনে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা শীর্ষক অনলাইন গোলটেবিল বৈঠক
৪ অক্টোবর সকাল ১০.৩০ টায় নাগরিক সংগঠন সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক-এর পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা শিরোনামে একটি অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি জনাব এম হাফিজউদ্দিন খান -এর সভাপতিত্বে ওসম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের সঞ্চালনায়এই অনলাইন গোলটেবিল বৈঠকটি আয়োজিত হয়।

বৈঠকটিতে বক্তব্য রাখেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম, বিচারপতি এম এ মতিন,সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন, সাবেক সচিব আবদুল লতিফ মণ্ডল,অ্যাডভোকেট ড. শাহদীন মালিক,সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, বিশিষ্টজনস্বাস্থ্য ব্যক্তিত্ব ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স,বিশিষ্ট আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম, বিশিষ্ট অধ্যাপক আসিফ নজরুল, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুর্শিদ, মানবাধিকারকর্মী এবং নারীনেত্রী শিরিন হক, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ড. আব্দুল আলিম,আর্টিকেল নাইনটিনের ফারুক ফয়সাল , সুজনকেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিরসহ সম্পাদক জাকির হোসেন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রফেসর সিকান্দর খান, সুজন লালমনিরহাট জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার ড. শফিকুল ইসলাম কানু, সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন সহ আরও অনেকে।

বৈঠকে সুজন-এর পক্ষ থেকে 'প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন ২০২১ নামে একটি আইনের খসড়া উপস্থাপন করা হয়। সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী জনাব দিলীপ কুমার সরকার এই খসড়াটি পাঠ করেন।

খসড়ায় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের লক্ষ্যে প্রাক্তন একজন জেষ্ঠতম প্রধান বিচার পতিকে আহŸায়ক করে ছয় সদস্যের একটি অনুসন্ধান কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে। খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, “কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার জন্য ধারা ৪ এর অধীন যোগ্যতা ও গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের সমন্বয়ে প্যানেল তৈরির লক্ষ্যে ধারা ৪ এর অধীন যোগ্যতা ও গুণাবলী সম্পন্ন ব্যক্তিদের অনুসন্ধান করিবে। একই সঙ্গে কমিশনে নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্যে নাগরিকদের নিকট হইতে নাম আহŸান করিবে।” প্রাপ্ত নাম গুলো থেকে কমিটি যাচাই বাছাই করে ন্যূনতম ৫ জন নারীসহ ২০ জনের একটি প্রাথমিক তালিকা ও তাঁদের যোগ্যতা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন গণবিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করার কথা খসড়ায় বলা হয়। এরপর প্রাথমিক তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পর্কে অনুসন্ধান কমিটি গণশুনানির আয়োজন ও তাঁদের সাক্ষাতকার গ্রহণ করে সর্বসম্মতভাবে ন্যূনতম ২ জন নারীসহ ৭ জনের একটি প্যানেল প্রস্তুত করে রাষ্ট্রপতিকে জমা দেয়ার কথা উলে­খ করা হয়। অনুসন্ধান কমিটির কর্তৃক প্রকাশিত ও প্রেরিত প্যানেল হতে রাষ্ট্রপতি তালিকা প্রাপ্তির ৭দিন পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন পদে নিয়োগ প্রদান করার কথা বলা হয়েছে খসড়ায়।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান মেনে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হলে নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের কোনো বিকল্প নেই। তবে আইন প্রণয়ন করলেই হবে না, আইনটি হতে হবে জনস্বার্থে Ñ দলীয় বা কোটারি স্বার্থে নয় Ñ এবং এটি প্রয়োগও হতে হবে জনগণের স্বার্থে, যাতে কয়েকজন সৎ, নির্ভীক ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পান। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন,আমাদের সংবিধানের ধারা গুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে আইনটি নিয়ে কাজ করতে হবে। এর আগেও ২০১১ সালে আমরা একটি খসড়া প্রস্তাব করেছিলাম, দুঃখজনক হলেও এটি নিয়ে পরবর্তীতে তেমন কোন আলোচনা হয়নি। আমাদের এমন একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করা উচিত যেটি দূরদর্শী হবে, শুধু বর্তমান প্রেক্ষাপটে নয়।
ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম বলেন,সংবিধানের "ঙপপঁঢ়রবফ অৎবধ"কে সম্মান প্রদর্শন করেই এই কাজটি করতে হবে। অন্যান্য দেশের প্র্যাকটিস গুলো কিভাবে হচ্ছে, আমরা সে বিষয়ে আবারও চিন্তা করতে পারি। ড. শাহদীন মালিক বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি উলে­খ না করে আপিল বিভাগ কর্তৃক মনোনীত একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বা বিচারপতি বলা যায়। কমিশনের কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে প্রথম চারজন নিয়োগ দিয়ে এক বছর পর আরেকজন কমিশনার নিয়োগ দেওয়ার বিধান রাখা যেতে পারে। সৎ, ন্যাপরায়াণ এসব ক্যাটাগরি গুলো আইনে জটিল এবং পরিমাপ যোগ্য না, এগুলো উলে­খ না করে অভিজ্ঞতা আরও সুনির্দিষ্ট করা দরকার। প্যানেল নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংসদকে পাশ কাটানোর কোনো সুযোগ নেই। সরকার চাইলে এরকম একটি আইন পাশ করতে বেশি সময় লাগার কথা না। বর্তমানে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গঠিত সার্চ কমিটির ব্যাপারে বলব, এটির মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দেয়ার প্রক্রিয়া চালু হয়েছে।
আলী ইমাম মজুমদার বলেন, আমাদের মূল উদ্দেশ্য কিন্তু নির্বাচন করা এবং সে নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। সেই লক্ষ্যে এ ধরনের একটি আইন হলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে বলে আমি মনে করি। তবে এটাও সত্য যে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার মধ্যে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে না পারলে কোনো কমিশন দিয়েই সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারব না। আসিফ নজরুল বলেন, অবশ্যই একটি ভালো নিয়োগ আইন আমাদের দরকার। কিন্তু এই সরকার ব্যবস্থাই সুষ্ঠু নির্বাচন করা অসম্ভব। গত তের বছর ধরে পুলিশ ও প্রশাসনকে যেভাবে সাজানো হয়েছে এতে কোনো শক্তিশালী কমিশনের পক্ষেও ফাংশন করা সম্ভব হবে না। তাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আইন করার পাশাপাশি সরকার ব্যবস্থা নিয়েও কথা বলতে হবে।
শিরীন হক বলেন, আইনের প্রয়োগ যেন নায্যভাবে হয় সেটি নিশ্চিত করার বিষয়টি সমানভাবে ভাবা উচিত। কমিশনে নিয়োগের জন্য সুপারিশকৃত প্যানেলে নারীর সংখ্যা আরও বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি। জাকির হোসেন বলেন, আইন করে কী হবে কে মানবে - সবাই সবসময় এই প্রশ্নটি করছে। এটি আসলে সমস্যাজনক বলে আমি মনে করি। আমাদের মধ্যে যে গভীর হতাশা দেখা দিয়েছে বারবার এই প্রশ্নের উত্থাপিত হওয়ার মধ্য দিয়ে সেটিই ¯পষ্ট হচ্ছে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনাটাও সমাজে বিদ্যমান আছে, কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়নের পক্ষে আমাদের কন্ঠস্বরও অব্যাহত রাখতে হবে। রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, আমাদের ধাপে ধাপে এগুতে হবে। এখন নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলাপ হচ্ছে এরপর নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার ও নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা নিয়ে আলাপটাই ধাপে ধাপে করতে হবে।
আব্দুল লতিফ মন্ডল বলেন, প্যানেল প্রণয়নে নির্বাহী ক্ষমতার প্রভাব রাখা যাবে না। নাম চ‚ড়ান্ত করার ক্ষেত্রে বেশি বিকল্প না রাখলেই ভালো হবে বলে আমি মনে করি। শহীদুল আলম বলেন, করে কী হবে - নিপীড়কের এর চেয়ে ভালো কোনো কিছু শোনার নাই। করে কী হবে বলার মধ্য দিয়ে নিপীড়কের কাজটাই আমি করে দিচ্ছি। জাফর উল­াহ চৌধুরী বলেন, সা¤প্রতিককালে বিচারপতির বিভিন্ন কার্যাকলাপে তাঁদের প্রতি পুরোপুরি শ্রদ্ধা রাখা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে, তাই অনুসন্ধান কমিটি বিচারপতিদের একতরফা যাতে না হয়। আর নাম অনুসন্ধান করার ক্ষেত্রে জনগণের হাতে ছেড়ে দিতে হবে, সাধারণ জনগণই নাম প্রস্তাব করুক। বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, অনুসন্ধান কমিটিতে বিচারপতিদের না আনাই ভালো মনে হয়। কারণ কমিটি নিয়োগ দেওয়ার পর কমিশন ভালো না হলে বিচারপতিগণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে। তাঁদেরকে এই বিতর্কের ঊর্দ্ধে রাখাই উত্তম। তাছাড়া বিচারপতিদের প্রশাসনিক ব্যাপারে তেমন ভালো অভিজ্ঞতাও নেই; প্রশাসনিক কাজে দক্ষ এমন ব্যক্তিদেরই কমিটির সদস্য করা উচিত। ( প্রেস বিজ্ঞপ্তি)
এই বিভাগের আরও খবর