রংপুরে বেশ ঘটা করে মধুমাসে সনাতন ধর্মামল্বীদের বাংলার লোক সংস্কৃতির একটি অংশ জামাই ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করা হয় । উৎসবটি আদিকাল থেকে সনাতন সম্পদায়ের সমাজের ঘরে ঘরে লোকাচার হিসেবে পালন হচ্ছে। বৃহস্পতিবার রংপুর নগরীর ২০নং ওয়ার্ডের পালপাড়া মদন মোহন ঠাকুরবড়ী আখঁড়ায় মন্দিরে জামাই ষষ্ঠী পূজার আয়োজন করা হয়। সকাল থেকে সনাতন সম্প্রদায়ের বউ-শ^াশুড়ীরা হরেক রকম জাতের মৌসুমী ফল ও বিভিন্ন ধরনের উপকরণ দিয়ে ডালা সাজিয়ে মন্দিরে উপস্থিত হয়েছিলেন।মন্দিরের পূজারী সকল জীবের মঙ্গল কামনা করে পূজা আর্চনা করেন।

জানা যায়, জ্যৈষ্ঠ মাসে শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের রমনীরা বিশেষ করে শাশুড়ি মায়েরা ষষ্ঠী ব্রত পালন করেন। এই ষষ্ঠী ব্রত উপলক্ষে শাশুড়ি কর্তৃক জামাইকে দেওয়া সংবর্ধনাই মূলত জামাই ষষ্ঠী। এক সময় এ প্রথাটি এ দেশের গ্রামে ও শহরের ঘরে-ঘরে খুব ঘটা করে পালিত হতো। কালের বিবর্তনে প্রথায় ভাটা পড়েছে। জামাই ষষ্ঠীর রেওয়াজটা সমাজ থেকে একবারে উঠে যায়নি। মধুমাসে জামাই ষষ্ঠী উপলক্ষে অর্চনার পর্ব কোথাও কোথাও ঘরে, উঠানে ও মন্দিরে আয়োজন করা হয়। আবার বটের ডাল, ডুমুরের ডাল বা করমচার ডাল উঠানে পুঁতে বন বা অরণ্য তৈরি করে ষষ্ঠীর অর্চনা করা হয়। জ্যৈষ্ঠের ষষ্ঠীর আরাধনায় সন্তান-সন্তুতির মঙ্গল কামনায় ষষ্ঠী ব্রত পালন করা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী তিথিতে আম-জাম, কাঁঠালসহ নানা মৌসুমী ফলের ঘ্রাণে চারদিক যখন মৌ-মৌ করে ঠিক সেই সময় জামাই ষষ্ঠী উৎসবের আয়োজন করে। এ সময় শ্বশুড়বাড়িতে জামাই আমন্ত্রিত হয়। গ্রামীণ জনপদে সোনাতন ধর্মামল্বীদের জামাই অত্যন্ত আদরের। বছরে অন্তত একবার এই দিনটির জন্য জামাই যেমন অপেক্ষা করে তেমনি শাশুড়ি জামাইকে ষষ্ঠী জানানোর জন্য দিন গুণে। শাশুড়ি যতদিন বেঁচে থাকেন জামাই ষষ্ঠীর দিন শাশুড়ির কাছ থেকে জামাই নতুন কাপড়-চোপড়, আদর-আপ্যায়ন, পারিতোষিক ও ষষ্ঠীর উপহার পাবেন।জামাই ষষ্ঠীর সকল আয়োজন করা জামাইকে নিয়ে। সনাতন ধর্মে ষষ্ঠী দেবী মাতৃত্বের প্রতীক বা জননী। তিনি সন্তান কোলে ধারণ করে থাকেন। মায়ের পূজা শেষে তার কাছে জামাইয়ের দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করেন।

পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষে আসে জামাই সংবর্ধনা পর্ব। এ পর্বে দুপুরে পঞ্চ ব্যাঞ্জনে ভূড়িভোজ, মাছ-মাংসের হরেক রকম লোভনীয় তরকারী, রকমারী বড়া ভাজা, চাটনী, দই, মিষ্টি, আম-দুধ, কাঁঠালসহ মধু মাসের সব ফল ফলাদি আরো কত কি। এদিন সকাল থেকে শাশুড়ি মায়েরা উপোস থেকে জামাই ভোজের রান্না-বান্না করেন আবার শাশুড়ি বিধবা হলে তিনি নিরামিশ খান। জ্যৈষ্ঠ মাসের জামাই ষষ্ঠীর মূল উপকরণ হচ্ছে ফল। ফল ছাড়া জামাই ষষ্ঠীর পর্ব থাকে অসমাপ্ত। এ পার্বণে যেমন বিভিন্ন গাছের ডাল প্রয়োজন হয়, তেমনি সনাতন পরিবারে মধু মাসের মৌসুমী ফল দরকার হয়। নগরীর পালপাড়া মদন মোহন ঠাকুরবড়ী আখঁড়ায় (মন্দির) এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সভাপতি নিখিলেন্দ্র সরকার গুহ রায়, সাধারণ সম্পাদক রতন কুমার দাস, সহ-সভাপতি শ্যামল কুমার দে, কোষাধ্যক্ষ চন্দ্রজিৎ দাস প্রমুখ।