গবাদি পশু থেকে ছড়ানো ব্রুসেলোসিস রোগ নিয়ে সতর্ক করল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক। গত বছরও এই সময় ব্রুসেলোসিসের সংক্রমণ ছড়িয়েছিল। গত বছর সংক্রমণ ছড়ানো শুরু হতে অসুখ ঠেকাতে নির্দেশিকা জারি করেছিল স্বাস্থ্যমন্ত্রক। পূর্ব ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলাতেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছিল।
মূলত গবাদি পশু থেকেই ছড়ায় ব্রুসেলিসিস। পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া, নদিয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বীরভূম, হুগলিতে একটা সময় ব্রুসেলোসিস মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণত গবাদি পশুর খামারে যারা কাজ করেন, বা পশু চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তাদেরই এই রোগ বেশি হয়। কিংবা গবাদি পশুদের ব্রুসেলোসিসের টিকা দিতে গিয়ে এই রোগে আক্রান্ত হন অনেকে।
সম্প্রতি দক্ষিণ ভারতের কেরলে কয়েকজন খাটালের কর্মী, পশু চিকিৎসক ব্রুসেলোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ব্রুসেলা ব্যাকটেরিয়া থেকে বাঁচতে তাই সতর্কতা জারি করেছে কেরল প্রশাসন।
ব্রুসেলা নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে ছড়ায় ব্রুসেলোসিস। এই রোগে মূলত আক্রান্ত হয় গবাদি পশু। গবাদি পশুকে ‘ব্রুসেলোসিস’ (বন্ধ্যাত্বকরণ)-এর টিকা দেওয়া হয়। সেখান থেকেও মানুষের শরীরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ভেড়া, শুয়োরও এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হয়। পশুদের মল, কাঁচা মাংস ও দুধ থেকে সংক্রমণ ছড়ায়।
ব্রুসেলোসিস-এ ব্যাকটেরিয়া থেকে পশুপাখি এবং মানুষ উভয়েই আক্রান্ত হয় এবং উভয়ের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। এটি ‘ভূমধ্যসাগরীয় জ্বর’ বা ‘মাল্টা জ্বর’ নামেও পরিচিত। ব্রুসেলোসিস সাধারণত গবাদি পশু, গরু, শূকর, ছাগল,ভেড়া এবং কুকুরের থেকে ছড়ায়।
পশুদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগ এবং দুধ বা মাংসের মত প্রাণীজ খাবার খাওয়ার ফলে পরোক্ষভাবে সংক্রমণ পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষের মধ্যে সংক্রমণের প্রধান কারণ হল, কাঁচা দুধ বা কাঁচা দুধ থেকে তৈরি চিজ খাওয়া। যাঁরা খামারে বা প্রাণীজ খাদ্য তৈরির কাজ করেন, তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ জীবিকার কারণে হয়। এই রোগ যে কোনও বয়সের মানুষের হতে পারে।
এই রোগের উপসর্গ অনেকটা করোনার মতো। হাল্কা জ্বর, গা-হাত পায়ে ব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথায় যন্ত্রণা, ওজন ও খিদে কমে যাওয়া ইত্যাদি। এর সংক্রমণ দেখা যায় এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ ও মধ্য যুক্তরাষ্ট্র-সহ একাধিক জায়গায়।
পশু স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ না দিয়ে টিকা দেওয়ার কাজে পাঠানো হয়। যে গ্লাভস দেওয়া হয় তাও নিম্নমানের। তাই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত।
