লালমনিরহাট বার্তা
লালমনিরহাটে নদ-নদী রক্ষায় ১৭ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান
স্টাফ রিপোর্টার: | ২৫ নভে, ২০২১, ৭:৪৯ AM
লালমনিরহাটে নদ-নদী রক্ষায় ১৭ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান
আজ ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন লালমনিরহাট জেলা শাখার আয়োজনে নদ-নদী রক্ষায় জাতীয় কমিটি ঘোষিত ১৭ দফা বাস্তবায়নের দাবীতে জেলা প্রশাসক এর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।
জেলা প্রশাসকের অনুপস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) তৌহিদুর রহমান এর নিকট স্মাকরলিপি প্রদান করেন সংগঠনের জাতীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ও জেলা সভাপতি গেরিলা লিডার ড. এস.এম. শফিকুল ইসলাম কানু। এ সময় নদীয় বাঁচাও আন্দোলনের জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে সহ-সভাপতি এ্যাড. চিত্ত রঞ্জন রায়, সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক তৌহিদুল ইসলাম লিটন, কার্যনির্বাহী সদস্য এনামুল হক টিপু, আবু বকর সিদ্দিক, শহীদ ইসলাম, তাহ্-হিয়াতুল হাবিব মৃদুল, সোহাগী বেগম সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় যে, সুজলা, সুফলা, শস্য শ্যামল নদী মাতৃক বাংলাদেশ খ্যাত এ বাংলাদেশের পরিবেশ, জীববৈচিত্র, প্রাকৃতিক ভারসাম্য, মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সাহিত্য-সংস্কৃতি, সামাজিক বন্ধন সব কিছুই আবহমান কাল থেকে নদ-নদী গুলোর উপর নির্ভরশীল। দেশের নদ-নদী গুলো রক্ষায় ‘বাংলাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন’ ২০০৫ সালের ২৫ নভেম্বরের সূচনালগ্ন থেকে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে। নদ-নদী রক্ষায় মহামান্য হাইকোর্ট ইতোমধ্যে নদীগুলোকে জীবন্ত স্বত্ত¡া হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তাই নদীগুলোকে যারা ক্ষতিগ্রস্ত করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে নির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা দরকার। দ্বিতীয়ত: জাতিসংঘ পানি প্রবাহ কনভেনশনে (যা ২০১৪ সালে আইনে পরিণত হয়েছে তাতে) স্বাক্ষর করে উজানের অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিশ্চিৎ করতে পদক্ষেপ নেয়া দরকার। তৃতীয়ত: সীমানা নির্ধারণ পূর্বক বন্যা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধে টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও নাব্যতা নিশ্চিৎ করা অতীব জরুরি। চতুর্থত: জলবায়ূ পরিবর্তন ও নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এখন সময়ের দাবি। উপরোক্ত বিষয় ও ১৭ দফা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক এর সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ ও বিশেষ সুদৃষ্টি কামনা করা হয়েছে।
১৭ দফা দাবী সমূহ:
১। শিল্পবর্জ্যরে দূষণ থেকে নদী রক্ষায় শিল্পকারখানায় ২৪ ঘন্টা ইটিপি চালু রাখার ব্যবস্থাসহ মানবসৃষ্ট বর্জ্য ও শিল্পঘন অঞ্চলের বর্জ্য পরিশোধনের জন্য “সেন্ট্রাল ইটিপি” স্থাপনের দাবি আদায় করে দূষণ রোধ করা। ২। নদীর সীমানা রক্ষায় স্থায়ী সার্ভে কমিটি গঠন করে ৩ মাস অন্তর নদীর পাড় সরেজমিনে পরিদর্শন পূর্বক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশবাদী সংগঠনের কাছে রিপোর্ট জমা দিতে এবং অবৈধ দখল থেকে নদী রক্ষায় দখলদারদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ৩। নদী ও সুপেয় পানি রক্ষায় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে “নদী ও পানিসম্পদ” মন্ত্রণালয় হিসেবে পুনর্গঠন করতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া। ৪। মন্ত্রণালয় বা জেলা প্রশাসন কর্তৃক সমন্বিত ও পরিকল্পিত ভাবে নদী খনন, ড্রেজিং এবং বালি ও পলি অপসারণের ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৫। সুপেয় পানির জলাধার সৃষ্টির জন্য ভরাট, অর্ধ-ভরাটকৃত মজা পুকুর ও দীঘিগুলো খনন ও পুন:খননের আওতায় আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৬। বিভিন্ন হাওড়-বাওড়-বিলে পতিত নদী-নালাগুলোর উৎস মুখের বাঁধসমূহ অপসারণ করে নি¤œ ভ‚মিতে পানি প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। (ক) হাওড় অঞ্চলের নদীগুলো থেকে বালু-পাথর অপসারণ সহ নদী ও খাল খননের উদ্যোগ নিতে হবে। হাওড়ের মাতৃমাছ রক্ষা করা সহ হাওড়ে বিষ প্রয়োগ ও কারেন্ট জালের মাধ্যমে মাছ নিধন বন্ধের পদক্ষেপ নিতে হবে। ৭। বিলুপ্ত বা অর্ধবিলুপ্ত নদী ও খালগুলো রক্ষায় মন্ত্রণালয়, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে যৌথ নদী-নালা ও খাল পুনরুদ্ধার কমিটি গঠন করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৮। নদীবান্ধব অর্থনীতি ও যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুকল্পে নদীবন্দরগুলো পুনর্গঠন ও সংস্কারের ব্যবস্থা করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ৯। নদী, নালা ও খালে অপরিকল্পিত ব্রিজ, কালভার্ট, বাঁধ ও সীমানাপ্রাচীর অপসারণ করে তা পরিকল্পিতভাবে করতে হবে এবং প্রতিটি ব্রিজ কালভার্টে সংশ্লিষ্ট নদী, নালা বা খালের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিমূলক নাম ফলক লাগানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা । (বিশেষ করে ব্রিজ গুলিতে নদীর নাম ফলক লাগানো)। ১০। নদী ভাঙ্গন রোধে জলজবৃক্ষ (হিজল, তমাল, গাব, বট) লাগানোর কর্মসূচি নিতে এবং নদীর বাঁকে বাঁকে জলজ প্রাণি ও মৎসের অভয়াশ্রম গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সংশোধিত দফা : ১০ (ক)। নদী ভাঙন রোধে নদী-খালের তীরভূমিতে জলজবৃক্ষ ও শ্বাসমূলীয় বৃক্ষ (হিজল, তমাল, গাব, বট, শৈল্ল্যা ইত্যাদি) লাগানোর কর্মসূচি গ্রহণসহ নদীর নিদিষ্ট বাঁকে জলজ প্রাণি ও মৎসের প্রজনন ও অভয়াশ্রম গড়ে তোলার ব্যবস্থাসহ এলাকাটিকে সংরক্ষিত ঘোষণার উদ্যোগ গ্রহণে ভূমিকা পালন করা। ১১। দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ টিম তৈরি করে স্থানীয় পদ্ধতিতে বাস্তব সম্মতভাবে পূর্বাহেœই নদী ভাঙ্গন রোধে চিহ্নিত স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার করা, পানির ঘূর্ণিপাক প্রতিরোধ বাঁধ তৈরি বা সিমেন্ট-বালির বস্তার বেস্টনী তৈরি কিংবা লতাপাতার বেষ্টনী তৈরি সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা । ১২। উজানের ৫৪টি নদীর ন্যায্য পানি প্রাপ্তিতে এবং বাঁধ দেয়া রোধকল্পে যৌথ নদী কমিশনের ক‚টনৈতিক তৎপরতা ও কর্মকাÐের পরিধি বাড়াতে, প্রয়োজনে জাতিসংঘে বিষয়গুলো তুলে ধরার ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সংশোধিত দফা : ১২ (ক)। উজানের অভিন্ন ১০৬টি নদীর পানির অববাহিকা ভিত্তিক ন্যায্য হিস্যা প্রাপ্তিতে জাতিসংঘ পানি প্রবাহ কনভেশন-১৯৯৭-এ রাষ্ট্রের অনুসমর্থন করার জন্য সরকার প্রধান ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সংবেদনশীলতা সৃষ্টির পাশাপাশি যৌথ নদী কমিশনের কূটনৈতিক তৎপরতা বৃদ্ধিসহ নিয়মিত বৈঠকের বিষয়ে পরামর্শ করার উদ্যোগ গ্রহণ করা ১৩। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি দূষিত বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা, বালু, বংশী ও কর্ণফুলির পানি রিসাইক্লিং করে নদীর স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনার পদক্ষেপ নিতে কর্তৃপক্ষকে চাপ প্রয়োগ করা। ১৪। নদীরক্ষায় ও নদীর প্রতি ভালবাসা সৃষ্টিতে গণসচেতনার জন্য নদীরক্ষা ভিত্তিক গল্প, কবিতা, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যবস্থাসহ পাঠ্যপুস্তকে লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা এবং নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১৫। মাঝারি ও ছোট নদী-নালা, খাল-বিলগুলোকে সামাজিক বনায়নের মত- “সামাজিক মৎস্য চাষের” আওতায় আনতে এবং ডিম, পোনা ও জাটকা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট জেলেদের প্রজনন মৌসুমে বিকল্প কর্মসংস্থানের কিংবা আর্থিক প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ১৬। বন্যাকবলিত এলাকায় উচ্চফলনশীল ও দ্রæতবর্ধনশীল ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনতে আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ১৭। নদী-নালা, খাল-বিল, দীঘি-পুকুর ও সমুদ্র সৈকতে ইঞ্ছিন চালিত নৌকার পোড়া মবিল, তৈল, গৃহবর্জ্য, শহর হাট-বাজার ও রাস্তা-ঘাটের ময়লা-আবর্জনা, প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন ইত্যাদি ফেলা বন্ধকল্পে আইনগত পদক্ষেপের পাশাপাশি গণসচেতনতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এই বিভাগের আরও খবর