লালমনিরহাট বার্তা
সন্তোষে মওলানা ভাসানীর নাতিরা ভাড়া করা টিনের তৈরী বাসায় বসবাস করেন।
বার্তা ডেস্কঃ | ১৩ সেপ, ২০২১, ২:৪৮ PM
সন্তোষে মওলানা ভাসানীর নাতিরা ভাড়া করা টিনের তৈরী বাসায় বসবাস করেন।
এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার মেহনতি মানুষের অবিসংবাদিত নেতা আসাম গণ পরিষদের এবং পাকিস্তান গণ-পরিষদের সদস্য। যিনি ছিলেন আসাম এবং কংগ্রেস ও আসাম মুসলিম লীগের সভাপতি। মুসলিম আওয়ামী লীগ, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা, সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনের অন্যতম নেতা, ৬৯-এর গণ আন্দোলন পুরোধা ঘেড়াও আন্দোলনের প্রবক্তা । মুক্তিযুদ্ধ কালীন সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি সর্বপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতার নির্মাতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। তাঁর নাতি হাসরত খান ভাসানী ও আজাদ খান ভাসানী সহ পরিবারে সদস্যরা বিশ্ব বিদ্যালয়ের পার্শ্বের একটি গ্রামে টিনের তৈরী ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।
ইতিহাস বিকৃতকারী কতিপয় নিকৃষ্ট ইতর প্রচার করে থাকেন, মওলানা ভাসানী সন্তোষের হিন্দু জমিদারের জমিজমা রাজবাড়ী সহ সব কিছুই দখল করে নিয়েছেন। সত্য ইতিহাস বলার কিংবা মিথ্যা প্রচারনাকে পর্দাঘাত করায় মানুষ না জম্মিলে মিথ্যা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরেরে মহান নেতা নেউইন বলেছেন, শিক্ষিত ও জ্ঞানী লোকেরা যখন, রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবেন। তখন গোটা জাতিকে মুর্খের শাসন মেনে দিতে হবে অর্থ্যাৎ ভোগ করতে হবে।
সন্তোষ জমিদার বাড়ীর ইতিহাস এদেশের শতকরা ১০জন লোকও জানেন না। যেরুপ এদেশের শতকরা ২০ জন লোকও দাবী করতে পারবেন না যে তারা বাংলাদেশের রক্তখচিত সংবিধান সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। অনেকেই শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের জন্য সংবিধান পড়েছিলেন। পরবর্তীতে নিজেরা প্রতিষ্ঠা পাওয়ার পর সব কিছুই ভুলে গেছেন।
বর্তমান সন্তোষ, পূর্বনাম ছিল খোশনাদপুর। এটি ছিল কাগমারী পরগনার একটি গ্রাম। স¤্রাট আওরঙ্গজেব পবিত্র ইসলামের আদর্শ প্রচার ও জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে মানুষের কল্যানের জন্য পীর শাহ জামানকে তামার পাতায় সন্তোষ গ্রামসহ কাগমারী পরগনা লিখিত সনদ প্রদান করে ছিলেন। পীর শাহ-জামান উক্ত পরগনার রাজস্ব আদায় করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, কাঙালী ভে, মুসাফির আপায়ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালনসহ বিভিন্ন সৎকর্ম পালন করেছিলেন তিনি ইন্তেকালের পূর্বে মুতাওয়াল্লী শাহ এনায়েত উল্লাহ চৌধুরীকে উক্ত পরগনার দায়িত্ব অর্পন করেন। কাগমারীতে পীর শাহ জামান এর মাজার শরীফ রয়েছে। পরবর্তীতে হিন্দু জমিদার নানা রুপ জালিয়াতি ও কারচুপির মাধ্যমে কাগমারী পরগনা নিজেদের আয়ত্বে নেন।
মওলানা ভাসানী পুরানো কাগজপত্র পর্যালোচনা করে জানতে পারেন যে, এই পরগনার সম্পত্তি স¤্রাট আওরঙ্গজেব দানপত্র করেছিলেন। বাংলা ১৩৩৭ সাল হতে ১৩৩৯ সাল পর্যন্ত কাগমারী পরগনার বিশাল সম্পত্তি নিয়ে সন্তোষের জমিদারের সাথে মওলানা ভাসানীর মামলা মোকদ্দমা ও লাঠিয়ালদের প্রত্যক্ষ সংগ্রহ হয়। জমিদারের দাবী ছিল, হযরত পীর শাহ জামানের সম্পত্তি হলেও তারা শত বছর ধরে তারা ভোগ দখল করে আসছেন কাজেই মুসলমানদের দাবী তামাদী হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে মওলানা ভাসানীর বক্তব্য ছিল আল্লাহর নামে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি যেমন মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ , কবরস্থান ইত্যাদি যে কেউ দখল করে যুগের পর যুগ ভোগ করলেও তামাদী হবে না। তাই মামলার মওলানা ভাসানী বিজয়ী হন। তিনি সেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন জনহিতকর প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। সন্তোষে তিনি ইসলামী বিশ্ব বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দিয়েছিলেন। তা তিনি বাস্তবায়ন করতে পারেন নি। পরবর্তীতে মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এই সকল সম্পত্তি লিখে দেয়া হয়। সন্তোষে মওলানা ভাসানীর একখন্ড জমিও নেই। তাই তার নাতিরা অন্যের বাসায় ভাড়া থাকেন।
উপ-মহাদেশের কিংবদন্তীর এই নেতা পরিবারের জন্য বলতে গেলে কিছুই রেখে যাননি। তাই মওলানা ভাসানীর উত্তরসূরীরা প্রায় বলে থাকেন মওলানা ভাসানী আমাদের জন্য কি রেখে গেছেন? দেশ স্বাধীনের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও তাদের সন্তান, নাতী-পুতি, দূর্নীতিবাজ সরকারী আমলা, কর প্রতারক ব্যবসায়ী, চোরাচালানী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, সহ অন্যান্য পেশায় নিয়োজিত অনেকেই অবৈধভাবে শত শত কেউবা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক।
সর্বশেষ মওলানা ভাসানী আসাম পরিত্যাগের পূর্বে তার সমস্ত সম্পক্তি হামিদাবাদ ওয়াকফ স্টেস্ট এর নামে লিখে দেন। উক্ত উইলে তিনি লিখেছেন , ওয়াকফকৃত সম্পক্তি থেকে যা আয় হবে তা থেকে তার পরিবারের কেহই কিছুই পাবে না। সমস্ত আয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এতিমখানা, খানকাসহ অন্যান্য কল্যাণ মূলক কাজে ব্যয় হবে।
এই বিভাগের আরও খবর