লালমনিরহাট বার্তা
অমিতাভ-রেখার প্রেম আজও আলোচনায়
ইত্তেফাক | ১০ অক্টো, ২০২৩, ৩:২৭ PM
অমিতাভ-রেখার প্রেম আজও আলোচনায়

বলিউডে এত বছরে এত মানুষের প্রেম, পরকীয়া, বিচ্ছেদ ও নতুন জুটি এসেছে। তবু, আজও একসময়ের আলোচিত জুটি অমিতাভ বচ্চন ও রেখা একেবারেই আলাদা। আজও যেন কী একটা রয়েই গিয়েছে দু’জনের মধ্যে! আর তাই হয়তো রেখার জন্মদিন ১০ অক্টোবর, ঠিক তার পরের দিনই অর্থাৎ ১১ অক্টোবর জন্মদিন অমিতাভের। তাদের অভিনীত ‘সিলসিলা’র মতো দু’জনের সত্যিকারের জীবনেও এক অদ্ভুত ‘সিলসিলা’ অর্থাৎ রহস্যময় মিল রয়েই গেছে!

১৯৬৬ সালে রাঙ্গুলা রত্নম নামে একটি তেলেগু সিনেমার মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে তার অভিনয় জীবন শুরু হয়। কিন্তু নায়িকা হিসেবে ১৯৭০ সালে শাওন ভাদো নামে একটি সিনেমাতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি বলিউডে যাত্রা শুরু করেন। শুরুর দিকে খুব একটা সাফল্য না দেখলেও, সত্তরের দশকের মাঝামাঝিতে এসে পরিচিতি পান রেখা। এদিকে,বলিউড শাহেনশাহ অমিতাভের শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৯ সালে ‘সাত হিন্দুস্তানি’ সিনেমার মাধ্যমে। নবাগত হিসেবে ওই সিনেমায় তিনি জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছিলেন। তবে তার উত্থান হয় ‘আনন্দ’ সিনেমার হাত ধরে। এর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি অমিতাভের।

১৯৭৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দো আনজানে’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো জুটি বেঁধে অভিনয় করেন অমিতাভ বচ্চন ও রেখা। একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে রেখার প্রেমে পড়ে যান অমিতাভ। কিন্তু অমিতাভ-রেখার রেখার প্রেমের তিন বছর আগেই জয়া ভাদুড়িকে বিয়ে করেছিলেন অমিতাভ।

তবে প্রেমের সম্পর্ক তারা কেউই কখনো স্বীকার না করলেও, একের পর এক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই সফল জুটি। অমিতাভ-রেখার কোন সিনেমা মুক্তি পেলেই তাদের রোমান্টিক রসায়নের স্বাদ পেতে দর্শকরাও প্রেক্ষাগৃহে হুমড়ি খেয়ে পড়তেন। বাস্তব জীবনে তাদের রহস্যময় প্রেমের কারণেই সম্ভবত দর্শকের মধ্যে এ জুটিকে নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ ছিল। অমিতাভ ও রেখা অভিনীত সিনেমা ‘দো আনজানে’ (১৯৭৬), ‘আলাপ’ (১৯৭৭), ‘ঈমান ধরম (১৯৭৭), ‘খুন পাসিনা’ (১৯৭৭), ‘গঙ্গা কি সুগন্ধ’ (১৯৭৮), ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’ (১৯৭৮), ‘মিস্টার নটবরলাল’ (১৯৭৯), ‘সোহাগ’ (১৯৭৯), ‘রাম বলরাম’ (১৯৮০) ও ‘সিলসিলা’ (১৯৮১) প্রভৃতি প্রায় সব ছবিই বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে।

অমিতাভ-রেখা জুটির সর্বশেষ ছবি ‘সিলসিলা’ মুক্তি পেয়েছিল ১৯৮১ সালে। অমিতাভ, রেখা ও জয়ার ত্রিভুজ প্রেমের বিষয়বস্তু নিয়ে ছবিটি নির্মাণ করেছিলেন নির্মাতা যশ চোপড়া। অত্যন্ত সচেতনভাবে এ সিনেমার পাত্র-পাত্রী হিসেবে অমিতাভ, রেখা ও জয়া বচ্চনকে নির্বাচন করেছিলেন তিনি। আজও হিন্দি চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসাসফল ছবি হিসেবে মাইলফলক হয়ে আছে ‘সিলসিলা’। ছবিটি মুক্তির পর আর কখনোই একসঙ্গে অভিনয় করেননি অমিতাভ-রেখা। এমনকি আর কোনো অনুষ্ঠানেও একসঙ্গে হাজির হতে দেখা যায়নি একসময়ের পর্দা কাঁপানো এই জুটিকে।

ইয়াসের উসমানের লেখা ‘রেখা: দি আনটোল্ড স্টোরি’ গ্রন্থে ১৯৭৮ সালে একটি পত্রিকায় দেয়া রেখার সাক্ষাৎকার তুলে ধরেছেন। যেখানে রেখা জানিয়েছিলেন, ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’ ছবির এক স্ক্রিনিংয়ে প্রথম সারিতে বসা জয়া বচ্চনের দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে আসা অশ্রুকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন তিনি। এর এক সপ্তাহ পরেই অমিতাভের কাছ থেকে বার্তা আসে, আর নয়। আর কোনো ছবিতে তিনি ও রেখা একত্র হবেন না। কেন এমন সিদ্ধান্ত, প্রশ্ন অবশ্যই করেছিলেন রেখা। কিন্তু অমিতাভের উত্তর ছিল— না, এবিষয়ে কোনো শব্দ তিনি উচ্চারণ করতে চান না।

ওই একই সাক্ষাৎকারে রেখা আরো জানিয়েছিলেন, অমিতাভ এক সময়ে তাকে দু’টি আংটি উপহার দেন। সেই আংটি দু’টি তিনি কখনোই খুলে রাখেননি। কিন্তু ‘মুকদ্দর কা সিকন্দর’-এর ঘটনার পরে তিনি আর সেগুলি পরেননি। উপহারদাতাকেই ফিরিয়ে দেন। ‘খুবসুরত’ এর পর সেই আংটি দু’টি আর দেখা যায়নি রেখার অনামিকায়।

আজ আর কোনো আড়াল নেই রেখার অধরে। ৬১ বছর বয়সে দাঁড়িয়ে কুহককে সামলিয়ে অকপট হয়ে দাঁড়িয়েছেন ‘উমরাও জান’। তার বক্তব্য কোনো বিস্ফোরণ সৃষ্টি করল কি করল না, তাতে আজ আর কিছু যায় বা আসে না। অমিতাভ নামক মহাকাব্যে তিনি ‘অন্য নারী’ হয়েই থাকলেন কিনা জনতে চান আজকে অনেকেই। রেখার ভাষায়— এমন ত্রিভুজে লোকে স্ত্রীকেই সমর্থন করেন। কারণ, স্ত্রীর অধিকারেই স্বামী থাকেন। কিন্তু ‘অন্য নারী’ সে-ই, যাকে পুরুষ স্ত্রীর উপস্থিতিকে অতিক্রম করে কামনা করে। আজ জয়ার অধিকারে কী রয়েছে না রয়েছে, তাতে তার কিছু এসে যায় না।

এই বিভাগের আরও খবর