লালমনিরহাট বার্তা
দহগ্রাম তিনবিঘা করিডর গেটে ব্যবসায়ী- বিজিবি মারপিট, আহত ২
আজিনুর রহমান আজিম, পাটগ্রাম | ২৩ সেপ, ২০২১, ২:২৪ PM
দহগ্রাম তিনবিঘা করিডর গেটে ব্যবসায়ী- বিজিবি মারপিট, আহত ২
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের দহগ্রাম বিজিবি চৌকিতে মাংস ব্যবসায়ীকে বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মারপিট করার ঘটনায় দুইজন ব্যবসায়ী আহত হয়েছে।
মাংস ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা জানায়, বিজিবি’র লাইনম্যানকে গাড়ি প্রতি নিদ্দিষ্ট হারে টাকা দিয়ে প্রতিদিন গরুর মাংস আনে পাটগ্রাম উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ব্যবসায়ীরা। বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯ টায় ৪ ভ্যান গাড়ি মাংস গেট দিয়ে পার করতে বিজিবি’র লাইনম্যান মইনুল ইসলাম বাঘা ও ওসমান আলী ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। এক ভ্যান গাড়ি মাংসের জন্য দুই হাজার টাকা দেন পানবাড়ি পাবনাপাড়া এলাকার ব্যবসায়ী সোহরাব আলী ও তাঁর ছোট ভাই ইদ্রিস আলী। টাকা নেওয়ার পরও তিনবিঘা করিডর গেট দায়িত্বরত ৪ বিজিবি সদস্য ওই দুই লাইনম্যান টাকা পাননি জানিয়ে মাংসের গাড়ি তাঁদেরকে (সোহরাব ও ইদ্রিস) পার করতে নিষেধ করেন। এ সময় সোহরাব আলী ও তাঁর ছোট ভাই ইদ্রিস আলীর সাথে দায়িত্বরত বিজিবি’র সদস্যদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। বিজিবিও উত্তেজিত হয়ে মাংস ব্যবসায়ীদেরকে খারাপ ভাষায় গালি- গালাজ করে। একপর্যায়ে ওই দুই ভাইকে চর, থাপ্পর, লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় বিজিবির সদস্যরা। স্থানীয়রা আহতাবস্থায় সোহরাব আলীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। অপর আহত ভাই ইদ্রিস আলীকে বিজিবি দহগ্রাম ক্যাম্পে নিয়ে প্রায় ৫ ঘন্টা আটকে রাখেন। দুপুর পৌনে ৩ টায় দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান ও কুচলিবাড়ি ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফজলুল হক পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার এবং ৬১ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সিও’র সাথে কথা বলে মুচলেকা দিয়ে ইদ্রিসকে ছাড়িয়ে আনেন।
সোহরাব আলী (৪৫) বলেন, ‘মাংস ব্যবসায়ীরা সকালে ৪ গাড়ি মাংস নিয়ে যাওয়ার সময় বিজিবি তাঁদের লাইনম্যানের মাধ্যমে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে। আমাদের গাড়িটির জন্য ২ হাজার টাকা দেই। চেক পোস্টে গাড়ি নিয়ে গেলে বিজিবি অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলে টাকা এখনও পাইনি। আমি ও ছোট ভাই প্রতিবাদ করলে পিছন থেকে ৩- ৪ জন বিজিবি আমাকে এবং ছোট ভাইকে ধরে লাথি ও মারধর এতে আমার অন্ডকোষে আঘাত লাগে। আমি মাটিতে পড়ে যাই। এ ঘটনার বিচার চাই।’
ইদ্রিস আলী (৪০) বলেন, ‘গরুর মাংস নিয়ে আসতে বিজিবির সোর্স আরমান ও সাইদুল আগে ৬ হাজার টাকা নিয়েছে। গেট দিয়ে পার করতে চেকপোস্ট বিজিবির লাইনম্যান ২ হাজার টাকা নিয়ে লাইন ক্লিয়ার দিয়েছে। বিজিবি গাড়ি নিতে দেয়না। বিজিবি আগে ভাষা খারাপ করে। প্রতিবাদ করলে তাঁরা (বিজিবি) আমাদেরকে অমানুসিকভাবে মারধর করে। আমাকে ক্যাম্পে নিয়ে কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দেয়, হাতকড়া পড়িয়ে আবারও মারপিট করে।’
চেকপোস্টে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্য ওয়াহেদুজ্জামান বলেন, ‘আমি তাঁদেরকে (সোহরাব- ইদ্রিস আলীকে) গাড়ি নিয়ে পিছনে যেতে রাগ করেই বলেছি। এজন্য তাঁরা ভাষা খারাপ করে। আমার সিসি ক্যামেরার ফুটেস আছে। আমার তাঁকে মারপিট করার কোনো যুক্তি আসে না। ক্যাম্প কমান্ডার এসে একভাইকে নিয়ে যায়।’
দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন প্রধান ‘ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমরা বিজিবির সাথে কথা বলে ইদ্রিস আলীকে ছাড়িয়ে নিয়েছি।’
বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ৬১ ব্যাটালিয়নের পানবাড়ি কোম্পানি কমান্ডার জাহাবুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা নেয়ার কথা সত্য নয়। কেউ আমাদের নামে টাকা নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। খারাপ ভাষা করেছে এজন্য বেঁধে রেখেছিলাম। ঘটনা নিয়ন্ত্রণের জন্য একজনকে আটক করা হয়েছিল। পরে চেয়াম্যান ও ইউপি সদস্যের অনুরোধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
এই বিভাগের আরও খবর