রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার বিড়ি শিল্প নগড়ী হারাগাছে গৃহবধূর (৩৬) গোসলের ভিডিও গোপনে ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করেছে সাবেক ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া (২৮)।এ ঘটনায় গত বুধবার (২৫ মে) রাতে রংপুর নগরীর কারামতিয়া মসজিদ সংলগ্ন এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।এর আগে ধর্ষিতা নারী কাউনিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।ধর্ষক মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া কাউনিয়া উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের মৃত মহির উদ্দিন বসুনিয়ার ছেলে এবং হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক।
রংপুরের কাউনিয়া থানা পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার হারাগাছ ইউনিয়নের নাজিরদহ গ্রামের এক গৃহবধূর দুই সন্তানকে ৩/৪ বছর আগে প্রাইভেট পড়াতেন একই এলাকার মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়া।গৃহশিক্ষক হিসেবে বাড়িতে গিয়ে প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগে একদিন টিনের বেড়া দেওয়া গোসল খানায় কৌশলে ওই গৃহবধূর গোসলের ভিডিও ও ছবি গোপনে ধারণ করেন মাজেদুল। সেই ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা ভাবে প্রচার করার ভয়ভীতিসহ তার ছেলেদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষনের অশ্লীল ছবি তোলেন মাজেদুল।সর্বশেষ গত বছরের ২৯ অক্টোবর বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মাজেদুল আবারও বাড়িতে গিয়ে গোসলের সেই ভিডিও ও অন্যান্য অশালীন ছবি তার স্বামী সন্তানদের দেখানোসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করার ভয়ভীতি দেখিয়ে গৃহবধূকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।একপর্যায়ে ওই গৃহবধূ নিরুপায় হয়ে ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় চলে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েও রেহাই মেলেনি। ঢাকায় থাকা অবস্থায় ওই গৃহবধূকে শারীরিক সম্পর্কের কথা জানালে তিনি রাজি না হওয়ায় অন্য নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে গত ১২ মার্চ সকাল দশটার দিকে তার ছোট ছেলের (১৭) ম্যাসেঞ্জারে আপত্তিকর ছবি পাঠিয়ে দেয় মাজেদুল। এছাড়াও ওইদিন বেলা ৩টার দিকে বড় ছেলের (১৮) এক বন্ধুর ম্যাসেঞ্জারেও পাঠিয়ে দেয় সেই আপত্তিকর ছবি। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ধর্ষিতা গৃহবধু ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে এসে গত ১১ এপ্রিল মাজেদুলকে অভিযুক্ত করে কাউনিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন।
হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান মিঠু বলেন, গত বছরের অক্টোবরে হারাগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় কমিটি। মাজেদুল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটিতে শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে সেটা মাজদুলের ব্যক্তিগত চরিত্রের বিষয়। এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না।
মামলার তদন্তকারী অফিসার কাউনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক এসআই সামিউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর পরেই অভিযুক্ত মাজেদুল গা ঢাকা দেয়।পুলিশ সুপার (সার্কেল-সি) আশরাফুল আলম নির্দেশনায় এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত বুধবার রাতে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ, থানা পুলিশ এবং রংপুর রর্‌্যাব -১৩ যৌথ অভিযান চালিয়ে রংপুর মহানগরীর কারামতিয়া এলাকা থেকে মামলার অভিযুক্ত ধর্ষক মাজেদুল ইসলাম বসুনিয়াকে গ্রেপ্তার করাহয়।
কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মাসুমুর রহমান জানান, ওই নারী গত ১১ এপ্রিল থানায় এসে মাজেদুলের বিরুদ্ধে গোপনে গোসলের ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ করেন। অভিযোগটি নারী শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ও পর্নোগ্রাফি আইনের ৮(১)(২)(৩) ধারায় মামলাভুক্ত করা হয়েছে।