লালমনিরহাট বার্তা
হুমকিতে বাংলাদেশের কৃষি, দুশ্চিন্তায় দুই কোটি মানুষ
আহসান সাকিব হাসান | ২৬ মার্চ, ২০২৩, ৬:১৪ AM
হুমকিতে বাংলাদেশের কৃষি, দুশ্চিন্তায় দুই কোটি মানুষ

বাপ-দাদার ঘর আছিলে দুঃখে কষ্টে, এখন হামরা, কয়েকদিন পর হামার ছওয়াপোয়া। কে যে হামার জন্ম তিস্তার পারত হইল। আগত বাড়ি আছিলো তিস্তা নদী থাকি মেলা দুরত। তখন মোর জমি-জমা ছিলো বিশ দোনের মত। সংসার চালাইছিনুং ভালোই, পরে আস্তে আস্তে সব জমি মোর তিস্তা খায়া ফেলাইল। এলা মোর জমি আছে তিন দোনের মত, আর মাইসের জমি বর্গা নিয়া আলু, গাজর, ভুট্টা, বাদাম চাষাবাদ করছং ১৮ দোনের মত। এমনি এগলে জমিত পানি দিবার পাইনে। তিস্তায় পানি নাই। বাপুরে তিস্তা তো এখন মরুভূমি হয়া যাইবে। ′সম্প্রতি ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশিত তিস্তা নদীর উজানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সেচ বিভাগ আরও দুটি খাল খননের উদ্যোগ নেওয়ার খবরে এমন অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন লালমনিরহাট সদরের খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাঠি হরিনচওড়া এলাকার ষাটোর্ধ আব্দুল নুর।

বছরজুড়ে বন্যা-খরা ও ভাঙনের কবলে পড়া তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ অনেকদিন ধরে ভারতের সঙ্গে পানি বণ্টন চুক্তির আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু চুক্তি বহু দূর, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাম্প্রতিক উদ্যোগের কথা শুনে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তাঁরা। নদীপাড়ের মানুষরা বলছেন, এমনিতেই শুষ্ক মৌসুমে দেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলোতে পানিপ্রবাহ থাকে না। ভারতের সঙ্গে চুক্তি না থাকায় পানির ন্যায্য হিস্যাও পাওয়া যায় না। এখন পশ্চিমবঙ্গ যদি তিস্তার উজানে দুটি খাল খনন করে, তাহলে রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুরসহ উত্তরের জেলাগুলোর কৃষি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

চার'শ কিলোমিটার দীর্ঘ খরস্রোতা তিস্তা নদী ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলের দার্জিলিং-জলপাইগুড়ি থেকে বাংলাদেশের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারীর ভেতর দিয়ে ১২৪ কিলোমিটার অতিক্রম করে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। হিমালয়ের তুষার গলা আর বৃষ্টিধারায় তিস্তার পানি যতই বেড়ে উঠুক, এখন তা ভারতের হাতে বন্দি। শুধু তিস্তায় পানি না থাকার কারণে উত্তরাঞ্চলের ধরলা, ঘাঘট, যমুনেশ্বরী, আখিরা, দুধকুমার, বুড়িতিস্তাসহ প্রায় ৩৩টি ছোট-বড় নদনদী এবং এর শাখা খালগুলো প্রান হারাচ্ছে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের কালমাঠি হরিনচওড়া এলাকার কৃষক দেলোয়ার হোসেন জানান, আগে থেকে তাঁরা তিস্তার চরে গম, ভুট্টা, কাউন, চীনাবাদাম, আলু, কুমরোসহ বিভিন্ন ফসল ফলাতেন। নদীর পানিতে সেচ সুবিধা থাকায় উৎপাদন খরচ কম হতো। কিন্তু কয়েক বছর ধরে তিস্তা শুকিয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন তাঁরা। একই চরের বাসিন্দা মৎস্যজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি না থাকায় মাছ মিলছে না। ফলে ওই সময় তাঁদের বেকার থাকতে হয়। তাই তাঁরা এখন পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। পেশা বলদ করে অনেকেই এখন জীবন চালাচ্ছে ধীর গতিতে।

লালমনিরহাট জেলা আত্বসামাজিক উন্নয়ন মঞ্চের আহ্বায়ক ইন্জিনিয়ার দেলোয়ার হোসেন জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দুটি খাল খননে যে উদ্যােগ নিয়েছে এই উদ্যােগ বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার। এদেশের কৃষকের জন্য এটি হুমকি স্বরূপ। এই তিস্তায় চাষাবাদে ২ কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ভর করে। পানি না পেলে তিস্তা পানিশূন্যতায় মরে যাবে। ২ কোটি মানুষ বিপাকে পড়বে, বিপাকে পড়বে কৃষি। প্রত্যাকটি জীবনের মূল্য দারাবে অনিশ্চয়তা। কর্মসংস্থান হারিয়ে দেউলিয়া হবে দেশ,ও কৃষি। সবকিছু মিলেই এটি বাংলাদেশের জন্য বিপদজনক। কাজেই ভারত সারকার যদি বিষয়টি উপলব্ধি করে আমাদের পানি চুক্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।

লালমনিরহাট তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শফিকুল ইসলাম কানু বলেন, তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলার সর্বহারা ২ কোটি মানুষের জীবন রেখা এই তিস্তা। অনেক দুঃখ আর কষ্টের মাঝে পানি বণ্টন চুক্তির আশায় সংগ্রাম করছি। কৃষি কাজ একমাত্র ভরসা তিস্তা পাড়ের মানুষের। তবে পানি না পেলে কৃষকরা চাষাবাদ করবে না। চাষাবাদ না করলে তারা খেতেও পারবে না। আর শুস্ক মৌসুমে তিস্তায় পানি না আসলে তিস্তা মরুভূমিতে পরিনত হবে। ধংশ হবে তিস্তায় বাস করা ২ কোটি মানুষের জীবন। তাই সরকারের কাছে আবেদন রংপুরে ২ কোটি মানুষের ভাগ্য যেখানে জরিয়ে এটি নিয়ে সরকার কাজ করবে এমন প্রত্যাশা করছি।

এই বিভাগের আরও খবর