লালমনিরহাট বার্তা
গাজা ঘিরে ফেলার দাবি ইসরায়েলের
বার্তা অনলাইন ডেস্ক | ৪ নভে, ২০২৩, ৪:০০ AM
গাজা ঘিরে ফেলার দাবি ইসরায়েলের

ফিলিস্তিনের গাজায় ব্যাপক মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি সত্ত্বেও হামলা বন্ধ করছে না ইসরায়েল। গতকাল পর্যন্ত গাজায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ২০০ জনে। ব্যাপক প্রাণহানির মধ্যেই গোটা গাজা শহর ঘিরে ফেলা হয়েছে এবং গাজায় অভিযান আরো তীব্র হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, ইসরায়েলের ‘অভিশপ্ত ইতিহাস’ হবে গাজা।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেন, আমাদের সেনারা গত কয়েক দিন ধরে গাজা সিটিকে বিভিন্ন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। অভিযান আরো গভীর হচ্ছে। এদিকে, লেবাননভিত্তিক হিজবুল্লাহ সংগঠনের প্রধান হাসান নাসারাল্লাহ বলেছেন, ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে হামাস সঠিক কাজই করেছিল। তারা যে নৃশংসতা চালায় গাজাবাসীর ওপর, তার তুলনায় হামাসের অভিযান সামান্য বলে উল্লেখ করেছেন হিজবুল্লাহ প্রধান।

ঘিরে ফেলার দাবি:

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি বলেছেন, আমাদের বাহিনী গাজা শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে অবস্থান নিয়েছে। তবে হামাসের সশস্ত্র শাখা ইজ আল-দ্বীন আল-কাশাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু ওবায়দা বলেছেন, ইসরায়েলের জন্য অভিশপ্ত ইতিহাস হয়ে দেখা দেবে গাজা। ইসরায়েলের সেনাদের কালো ব্যাগে ভরে বাড়ি ফিরতে হবে। এদিকে ইসরায়েলের সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল বলেছেন, যুদ্ধবিরতির আলোচনা কোনো টেবিলে নেই। আইডিএফ হামাসকে ধ্বংস করতে যুদ্ধ পরিচালনা করছে। গাজা শহরকে তিনি হামাসের কার্যক্রমের কেন্দ্র বলে উল্লেখ করেন। গত শুক্রবার ইসরায়েলই সেনাবাহিনী গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। ট্যাংক, বুলডোজার, পদাতিক বাহিনী এবং যুদ্ধ প্রকৌশল ইউনিট প্রবেশ করে গাজায়।

স্থল অভিযান ধীরে ধীরে চললেও, বিমান হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। সর্বশেষ হামলায় জাবালিয়া এবং আল শাতি শরণার্থী শিবিরে জাতিসংঘের স্কুলে আশ্রয় নেওয়া ২০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়।

যা বলছে জাতিসংঘ:

গাজা সিটিকে যখন ইসরায়েলি সেনারা ঘিরে রেখেছে, যে কোনো সময় বড় হামলা শুরু হতে পারে, তখন জাতিসংঘের নিরপেক্ষ একদল বিশেষজ্ঞ সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। জরুরি সতর্কতায় তারা বলেছেন, গাজায় গণহত্যা ও ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় রোধের সময় দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। এমন অবস্থায় শুক্রবার ইসরায়েলে সফরে আসেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাস রকেট হামলার পর এটা ইসরায়েলে তার তৃতীয় সফর। তিনি বলেছেন, মানবিক দৃষ্টিকোণে হামলায় বিরতি আবশ্যক হয়ে উঠেছে।

অনলাইন আরব নিউজ বলছে, জাতিসংঘের ঐ বিশেষজ্ঞরা গাজা উপত্যকার এক ভীতিকর চিত্র তুলে ধরেছেন। সেখানে জনমানবশূন্য করে দেওয়ার যে পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরায়েল, তা স্থগিতে ইসরায়েলের অস্বীকৃতিতে তারা গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, আমরা মনে করি, ফিলিস্তিনিরা ভয়াবহ এক গণহত্যার ঝুঁকিতে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার এখনই সময়। এর দায় বর্তায় ইসরায়েলের মিত্রদের ওপরও। তাদেরকে অবশ্যই এই বিপর্যয়কর পন্থা রোধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।

নিহত ৯২০০:

গাজায় নির্বিচারে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৯ হাজার ২০০ জন। এ সংখ্যা শুধু যেসব মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে তাদের। এর বাইরে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন অনেক মানুষ। তাদের কোনো সন্ধান মেলেনি। ফলে গাজা যেন এক গণকবরে রূপ নিয়েছে। তার ওপর ইসরায়েলের সেনারা গাজা সিটিতে সমবেত হয়েছে। তারা ঘিরে রেখেছে ঐ শহর। ইসরায়েলের সেনাদের মুখপাত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও তারা যুদ্ধবিরতিতে যাবে না।

‘হিট অ্যান্ড রান’ হামলা :

গাজা উপত্যকায় হামাসের শক্ত ঘাঁটি ঘিরে ফেলার দাবি করেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। ইসরায়েলই প্রতিরক্ষাবাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার হামাস যোদ্ধাদের সঙ্গে তুমুল লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ে তারা। এ সময় ইসরায়েলি সেনাদের লক্ষ্য করে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ থেকে ‘হিট-অ্যান্ড-রান’ যুদ্ধ কৌশল ব্যবহার করে হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। গাজায় আক্রমণের অগ্রগতির বিস্তারিত না জানিয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা যুদ্ধে ভালো অবস্থানে রয়েছি। আকর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছি এবং গাজা শহরের উপকণ্ঠ অতিক্রম করেছি। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে, লেবাননের যোদ্ধাগোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে রাশিয়ার ভাড়াটে গ্রুপ ওয়াগনার। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গোয়েন্দা তথ্য আছে বলে রিপোর্ট করেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। এক্ষেত্রে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে মার্কিন কর্মকর্তাদের। ওয়াগনার যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে তার নাম প্যান্টসির-এস১ সিস্টেম

এই বিভাগের আরও খবর