লালমনিরহাট বার্তা
মাটির গভীরে অভিনব উপায়ে তথ্য সংরক্ষণ
ডয়চে ভেলে | ২৯ মে, ২০২৩, ১২:৪৫ PM
মাটির গভীরে অভিনব উপায়ে তথ্য সংরক্ষণ

ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের এই যুগে তথ্য জমা রাখা আগের তুলনায় অনেক সহজ হয়ে গেছে৷ তবে সেই তথ্যের দীর্ঘমেয়াদী অস্তিত্ব নিয়ে সংশয় রয়েছে৷ এক ব্যক্তি অভিনব উপায়ে তথ্য সংরক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছেন৷

মার্টিন কুনৎসে পাহাড়ের গভীরে তাঁর সম্পদের কক্ষের দিকে চলেছেন৷ সেখানে অবশ্য শুধু পাথর ও লবণ রয়েছে৷ তিনি জায়গাটির নাম রেখেছেন ‘মানবজাতির স্মৃতিভাণ্ডার'৷

মার্টিন বলেন, ‘‘আমরা হালস্টাটে পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো লবণ খনির মধ্যে রয়েছি৷ পুরানো এই পিট ট্রেনে করে প্রায় ৫০০ মিটার গভীরে চলেছি৷''

আপার অস্ট্রিয়া অঞ্চলে এই পর্বতশ্রেণির নাম হিয়রলাৎস৷ অনেক শতাব্দী ধরে সেই এলাকা পাহাড়ের লবণের কারণে বিখ্যাত৷ প্রাচীন খনির পিট বা প্রবেশপথ ও সুড়ঙ্গগুলি মার্টিন কুনৎসের আর্কাইভ প্রোজেক্টকে সুরক্ষা দিচ্ছে৷

তবে সেখানে প্রবেশ করলে কয়েকটি মাটির বাক্স ছাড়া তেমন কিছুই চোখে পড়বে না৷ সেগুলির মধ্যেই প্রকৃত তথ্যভাণ্ডার লুকিয়ে রয়েছে৷

সেগুলি আসলে হার্ডওয়্যারের দোকানে কেনা সেরামিক টাইল, যার মধ্যে কুনৎসে লেখা ও ছবি অমর করে রাখছেন৷ কোনটা চিরকালের জন্য রেখে দেওয়া উচিত, সে বিষয়ে তাঁর নিজস্ব ধ্যানধারণা রয়েছে৷ মার্টিন কুনৎসে জানালেন, ‘‘আমরা হাতে গোনা কয়েকটি টাইল পাহাড়ের মধ্যে এনেছি৷ এবার সেগুলি বাক্সে পোরা হবে৷ এটা ১৯৫০-এর দশকের এক তালা কারিগরের শিক্ষানবিশের দিনপঞ্জির অংশ৷ আজকের তুলনায় সেই অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন ছিল বলে আমি সেটাকে অক্ষত রাখা উপযুক্ত মনে করেছি৷''

কুনৎসে একাই বাছাইয়ের কাজ করেন না৷ মাসুলের বিনিময়ে তিনি যে কোনো মানুষের টেক্সট ও ছবিও সংরক্ষণ করেন৷ যেমন করোনা মহামারির সময় লকডাউনের দিনপঞ্জি৷ অথবা পাকিস্তানের এক প্রাচীন নিদর্শন গবেষকের ডক্টরেট থিসিস, যেটি তিনি ডিজিটাল ক্লাউড ও সার্ভারে রাখতে ভরসা পাচ্ছেন না৷ মার্টিন কুনৎসে বলেন, ‘‘আমরা যেমনটা ভাবছি, আমাদের ইন্টারনেট ও তথ্য সংরক্ষণ দুর্ভাগ্যবশত ততটা নির্ভরযোগ্য নয়৷ সেটাও এই আর্কাইভ সৃষ্টির আইডিয়ার অন্যতম কারণ৷ আমি আগামী প্রজন্মগুলির জন্য তথ্য আরও ভালোভাবে রাখতে চাই, যাতে তারা নিজেদের অতীতে ঢুঁ মারতে পারে৷''

এখনই গোটা বিশ্বের বৈদ্যুতিক জ্বালানির প্রায় দুই শতাংশ শুধু তথ্য সংরক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে৷ তাছাড়া দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে সেই তথ্য মোটেই নিরাপদ নয়৷ যে কোনো সময় মুছে যেতে পারে বা পড়ার অযোগ্য হয়ে উঠতে পারে৷

কুনৎসের দাবি, তাঁর টাইলগুলি ধ্বংস করা সম্ভব নয়৷ ভিয়েনায় জন্মগ্রহণ করা এই ব্যক্তি মোটেই আনাড়ি নন৷ তিনি রীতিমতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সেরামিস্ট৷ ফলে উপাদান সম্পর্কে তাঁর যথেষ্ট জ্ঞান রয়েছে৷

টাইলের উপর যতটা সম্ভব সূক্ষ্ম রেজোলিউশনে ছবি ও টেক্সট জমা রাখতে তিনি এক বিশেষ প্রক্রিয়া সৃষ্টি করেছেন৷ নিজের বাসার কর্মশালায় সেই কাজ করতে কখনো কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন সময় লেগে যায়৷ মার্টিন কুনৎসে বলেন, ‘‘টাইলের সাদা গ্লেস কালার বডির সঙ্গে সংযুক্ত হয়৷ তারপর আবার শীতল হয়ে মসৃণ সারফেস সৃষ্টি হয়৷ সে কারণে সেটি এত টেকসই৷''

একটি কপি মার্টিনের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ৷ কয়েক দশকের মধ্যে একটি হিমবাহ গলে যাচ্ছে, তাতে সেটা দেখা যাচ্ছে৷ মার্টিন মনে করেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের নথিকরন আর্কাইভের এক কেন্দ্রীয় উপাদান৷ জলবায়ু পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত তথ্য স্থায়ীভাবে জমা না রাখলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো টেরই পাবে না যে জলবায়ু পরিবর্তন আদৌ ঘটেছিল৷ সেই ঘটনার প্রকৃত মাত্রাও জানতে পারবে না৷''

এই উদ্যোগ শুধু টাইলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না৷ বিজ্ঞানীরা কুনৎসের সঙ্গে মিলে তথ্য সংরক্ষণের নতুন মাধ্যম সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছেন৷ আরও কম জায়গায় আরও বেশি তথ্য জমা করাই তাঁদের উদ্দেশ্য৷ কারণ আগ্রহীদের ভিড় লেগেই আছে৷ এমনকি ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ও তথ্য জমা রেখেছে৷ মার্টিন কুনৎসে অনন্তকালের জন্য বিশাল এই প্রকল্প চালাচ্ছেন৷

এই বিভাগের আরও খবর