লালমনিরহাট বার্তা
তথ্য অধিকার আইনের দেড় দশক : চেতনা বাস্তবায়ন হয়েছে কি?
মোঃ রুপাল মিয়া | ২৮ মে, ২০২৪, ৩:৪০ AM
তথ্য অধিকার আইনের দেড় দশক : চেতনা বাস্তবায়ন হয়েছে কি?

তথ্য হলো শক্তি। এই তথ্যশক্তি মানুষকে অনেক হয়রানি ও বিড়ম্বনা থেকে রেহাই দিতে পারে। নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় তথ্যশক্তির জুড়ি নেই। এজন্য নাগরিকের তথ্যের অধিকার প্রয়োজন। অথচ কয়েক বছর আগেও কোনো অফিসে গিয়ে তথ্য চাওয়ার সাহস খুব কম মানুষের হতো। কেউ সাহস করে তথ্য চাইলেও তা পাওয়ার বিষয়টা নির্ভর করতো কর্তৃপক্ষের মর্জির ওপর। সময়ের সঙ্গে এই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করতে সরকার তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন করেছে। এই তথ্য অধিকার আইনের দেড় দশক পেরিয়েছে।

প্রশ্ন হলো তথ্য অধিকার আইনের চেতনা কী এবং এই দীর্ঘ সময়ে তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে? তথ্য অধিকার আইনের মূল চেতনা হলো স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশের মাধ্যমে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করা। স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে গত দেড় দশকে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। এই অগ্রগতি সন্তোষজনক কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তবে স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশের হার আরও কয়েক গুণ বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্য অধিকার আইন বাস্তবায়নে নাগরিকগণের ভূমিকাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। জনগণ সচেতন হলে, তাঁরা তথ্য অধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত তথ্য জানতে পারবেন। এর ফলে রাষ্ট্রের সংবিধান-স্বীকৃত মালিক জনগণের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে।

কোনো কর্তৃপক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আবেদন করলেই কেবল ২০ কার্যদিবস কিংবা যৌক্তিক কারণে ৩০ কার্যদিবসে তথ্য প্রদান করা হবে এমনটা হলে, তথ্য অধিকারের চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ৬(১) অনুযায়ী কোনো কর্তৃপক্ষের গৃহীত সিদ্ধান্ত, কার্যক্রম কিংবা সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কর্মকাণ্ডের সকল তথ্য সূচিবদ্ধ করে নাগরিকের নিকট সহজলভ্যভাবে প্রকাশ ও প্রচার করতে হবে। এ ছাড়া ধারা ৬(৩) অনুযায়ী প্রত্যেক কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর নিজস্ব কর্মকাণ্ডের একটি বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে তথ্য প্রকাশ অত্যন্ত সহজ হয়েছে। ওয়েবসাইটের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তথ্য প্রকাশ করা যেতে পারে। এমনকি তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯-এর ধারা ৬(৭) অনুয়ায়ী কর্তৃপক্ষ জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনো পন্থায় প্রচার বা প্রকাশ করবে। এভাবে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত হবে।

তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ একটি শক্তিশালী নাগরিকবান্ধব আইন। তথ্য অধিকার আইনের ফলে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বর্ণিত জনসাধারণের চিন্তা, বিবেক ও বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকার প্রয়োগের আইনগত ভিত্তি তৈরি হয়েছে। এখন কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো আবেদনকারী তথ্যের জন্য আবেদন করে তথ্য না পেলে, তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট আপিল করতে পারেন। সেখানেও তথ্য না পেলে তিনি তথ্য কমিশনে অভিযোগ করতে পারেন।

সংবিধানের ৭(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। বাংলাদেশের নিরাপত্তা, অখণ্ডতা, তদন্তাধীন বিষয়-সংক্রান্ত তথ্য, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ-সহ ২০ ধরনের তথ্য ছাড়া সকল তথ্য জানার অধিকার একজন নাগরিক সংরক্ষণ করেন। যা জনগণের ক্ষমতায়নের মাইলফলক। তথ্য অধিকার আইনের চেতনা বাস্তবায়নে নাগরিকের চেয়ে কর্তৃপক্ষের ভূমিকাই বেশি। কর্তৃপক্ষকে স্বপ্রণোদিতভাবে তথ্য প্রকাশের পাশাপাশি জনগণকে জানাতে হবে যে, তথ্য অধিকার আইন অন্য আইন থেকে আলাদা। তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগকারী হচ্ছেন জনগণ। এজন্য ব্যাপক প্রচারের কোনো বিকল্প নেই। দেশের সর্বস্তরের মানুষ যখন তথ্য অধিকার আইন সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং তা প্রয়োগ করতে পারবেন, কেবল তখনই তথ্য অধিকারের চেতনা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হবে। সেই সঙ্গে জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। (পিআইডি ফিচার)

(লেখক : সহকারী তথ্য অফিসার, আঞ্চলিক তথ্য অফিস, রংপুর)

এই বিভাগের আরও খবর