লালমনিরহাট বার্তা
রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আইসিসির
বার্তা অনলাইন ডেস্ক | ৬ মার্চ, ২০২৪, ৭:১৪ AM
রাশিয়ার শীর্ষ কমান্ডারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি আইসিসির

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডারের বিরুদ্ধে ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে।

এ বিষয়ে দুজনের নাম প্রকাশ করেছে আইসিসি। এরা হলেন সের্গেই কবিলাশ এবং ভিক্টর সোকলভ। এর একজন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল এবং অন্যজন নৌবাহিনীর এডমিরাল।

ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ নিয়ে দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হলো।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং তার শিশু অধিকার বিষয়ক দূত এর বিরুদ্ধে এ ধরনের পরোয়ারা জারি করা হয়েছিলো।

রাশিয়া অবশ্য আইসিসিকে স্বীকৃতি দেয় না। ফলে অভিযোগ মোকাবেলায় তাদের আদালতে আসার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

আইসিসি বলেছে সর্বশেষ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির কারণ হলো যে ‘সন্দেহভাজন দুজনের নির্দেশে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে’- এমনটি বিশ্বাসযোগ্য হবার ভিত্তি রয়েছে।

তারা জানিয়েছে অপরাধটি সংঘটিত হয়েছে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চের মধ্যবর্তী সময়ে।

আদালত বলেছে ওই হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছে এবং মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হতে হয়েছে।

এই দুই ব্যক্তির প্রত্যেকে বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলার নির্দেশ দেয়ার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের জন্য দায়ী এবং তারা ‘অমানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের’ জন্যও অভিযুক্ত বলে জানিয়েছে আদালত।

ঘটনার সময় ৫৮ বছর বয়সী মি. কবিলাশ রাশিয়ার বিমান বাহিনীর দূরপাল্লার বিমান চলাচল বিভাগের কমান্ডার ছিলেন।

অন্যদিকে ৬১ বছর বয়সী মি. সোকোলভ ছিলেন রাশিয়ার নৌবাহিনীর এডমিরাল। তিনি ওই সময় কৃষ্ণ সাগরে জাহাজ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে আইসিসি জানিয়েছে।

মস্কো আগেই ইউক্রেনে বেসামরিক অবকাঠামোতে হামলার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নতুন পরোয়ানাকে স্বাগত জানিয়েছেন।

“ইউক্রেনের বেসামরিক এবং গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে যেসব রাশিয়ান কমান্ডার হামলার আদেশ দিয়েছেন তাদের প্রত্যেকের অবশ্যই জানতে হবে বিচার হবে,” সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন তিনি।

“এ ধরনের অপরাধে জড়িত প্রত্যেকের অবশ্যই জানতে হবে যে তাদের অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে”।

২০০২ সালে জাতিসংঘের এক চুক্তির আওতায় তৈরি হওয়া আইসিসি মূলত গণহত্যা, মানবতা বিরোধী অপরাধ বা এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার আওতায় আনা ও অনুসন্ধানের কাজ করে, যদি সংশ্লিষ্ট দেশের জাতীয় কর্তৃপক্ষ যদি তাদের বিচারের আওতায় না আনে বা আনতে না পারে।

বিশ্বের ১২৩টি দেশ ওই চুক্তি অনুস্বাক্ষর করেছে। তবে রাশিয়া, চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এতে যোগ দেয়নি।

গত বছর মার্চে আইসিসি প্রেসিডেন্ট পুতিন ও রাশিয়ার শিশু অধিকার বিষয়ক কমিশনার মারিয়া এলভোবা বেলোভার বিরুদ্ধের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছিলো।

আদালত তখন ইউক্রেন থেকে শিশুদের বেআইনি ডিপোর্টেশনের অভিযোগের ওপর জোর দিয়েছিলো।

সেই সময় ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট-আইসিসি এক বিবৃতিতে বলেছিল, এটা বিশ্বাস করার মতো যথেষ্ট কারণ আছে যে মি. পুতিন এই অপরাধ সরাসরি করেছেন। একইসাথে প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি বন্ধ করার সুযোগ থাকলেও তিনি সেটা করেননি।

মস্কো এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এই পরোয়ানাকে ‘জঘন্য’ বলে অভিহিত করেছিলো।

তখন ক্রেমলিন বলেছিল, আদালতের যে কোন সিদ্ধান্তই আসলে ‘অকার্যকর।’

‘’এটা ব্যাখ্যা করার দরকার নেই যে কাগজটি কি কাজে ব্যবহার করা উচিত’’ - এই কথা লিখে একটা টয়লেট পেপারের ছবি দিয়ে টুইট করেছেন রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের আসলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের ক্ষমতা নেই। আর আইসিসি বিচারকাজও পরিচালনা করে শুধুমাত্র তার সদস্য দেশগুলোতেই। কিন্তু রাশিয়া আইসিসির সদস্য নয়। তাই দা হেগের কাঠগড়ায় অভিযুক্তদের হাজির হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।

কাউকে গ্রেফতারে আইসিসিকে সরকারের সহযোগিতার উপরই নির্ভর করতে হয়। আর ‘রাশিয়া নিশ্চিতভাবেই কোন সহযোগিতা করবে না এক্ষেত্রে’, বিবিসিকে এর আগে বলছিলেন কিংস কলেজ লন্ডনের আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিক্ষক জোনাথন লিডার মেনার্ড।

এছাড়া অভিযুক্তের উপস্থিতি ছাড়া কোন শুনানি হতে পারে না দা হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে। আইসিসির এমন নিয়ম নেই।

যতদিন তারা নিজের দেশে থাকছেন তাদের গ্রেফতারের কোন সুযোগ নেই। তাদের আটক করা হতে পারে যদি তারা অন্য দেশে যান।

ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো কোন পক্ষই পুরোপুরি জয় লাভ করতে পারেনি। সহসা এই যুদ্ধ থামারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

কিয়েভ এ ব্যাপারে একরোখা যে তাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা বজায় থাকতে হবে এবং তারা রাশিয়ান সৈন্যদের হটিয়ে দেবে।

অন্যদিকে, মস্কো তাদের অবস্থানে অনড় যে ইউক্রেন যথাযথ রাষ্ট্র নয় এবং তাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলবে।

এই বিভাগের আরও খবর