লালমনিরহাট বার্তা
রংপুরে হৃদয় ছোঁয়া সংলাপ আর নাটকীয় ভঙ্গিমায় দর্শক হৃদয়ে ‘নিল ললিতার গীত’
রংপুর অফিসঃ | ৬ নভে, ২০২১, ১০:৪৪ AM
রংপুরে হৃদয় ছোঁয়া সংলাপ আর নাটকীয় ভঙ্গিমায় দর্শক হৃদয়ে ‘নিল ললিতার গীত’
রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে পালা নাটকের শুরু হয় রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়ার সুর তালে গতকাল রাতে।একটু থেমে- থেমে কলাকৌশুলিদের সংলাপ আর নাট্যপালার আদলে নৃত্য। কখনো রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় আবার কখনও শুদ্ধ বাংলা ভাষার উচ্চারণ তাদের সংলাপে। জীবন সাজানোর অভিনয়ে ভালো লাগা থেকে নিলের জীবনসঙ্গী হতে বিয়ের পিঁড়িতে ললিতা।এভাবেই এগুতে থাকে নাটকের দৃশ্যায়ন। তখন রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনের দর্শক সারি পূর্ণ। হৃদয় ছোঁয়া সংলাপ আর নাটকীয় ভঙ্গিমায় মুহুর্মুহু করতালি দর্শকের। এভাবেই রাত পৌনে ৮-৯টা পর্যন্ত দর্শক মেতে রেখেছিল ‘নিল ললিতার গীতের’ মঞ্চায়ন ।
গতকাল শুক্রবার রাতে নবনির্মিত রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনে পালা নাটকটি মঞ্চস্থ করে রংপুর নাট্যকেন্দ্র। নাট্যকেন্দ্রের ২৩ বছরপূর্তি উপলক্ষে চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনের পরিবেশনা।‘নিল ললিতার গীত’ নাটকের রচয়িতা পালাকার সায়িক সিদ্দিকী। তিনি নিজেই এর নির্দেশনায় ছিলেন।‘নিল ললিতার গীত’ সোয়া এক ঘণ্টার এই নাটকে মূলত দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারাকে তুলে ধরা হয়েছে। যেখানে নাট্য রুপে নিলের ভালোবাসার সুন্দরী ললিতা নারী লোভি আজগরের যৌন লালসার শিকার হন। কুরুচিপূর্ণ সমালোচনায় ললিতার প্রতি বিশ্বাস হারায় নিল। ভেঙে যায় সুখের সংসার। দুঃখের দরিয়ায় ভাসা ললিতা প্রাণ বিসর্জন দেয় বিষপানে। নাটকের শেষটাও হয় হৃদয় ছোয়া বেদনার ও রংপুর অঞ্চলের ভাওয়াইয়ায় সুর।
নাটকটির রচয়িতা সায়িক সিদ্দিকী বলেন, বাংলা লোকনাট্যের অন্যতম এক নিদর্শন পালাগান। রূপ বৈচিত্র্যের আবহে পালাগান দেশীয় সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারাকে উপস্থাপন করে। ‘নিল ললিতার গীত’ পালায় রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতিকে নানারূপে তুলে আনতে চেষ্টা করা হয়েছে। গ্রামীণ সমাজ ব্যবস্থা ও সরল প্রেম কে উপজীব্য করে এই পালা নাটকটির মঞ্চায়ন।১৫ জন শিল্পী মঞ্চে ‘নিল ললিতার গীত' পরিবেশনে অংশ নেন। নেপথ্যে ছিল আরও পাঁচজন। এটি ছিল রংপুর নাট্য কেন্দ্রের ২৯তম প্রযোজনা। কলাকুশলীদের মেকআপ, পোশাকসজ্জা, সংলাপ, নৃত্য আর সঙ্গীতের সুরের সঙ্গে মঞ্চে আলোক প্রক্ষেপণে পালা টি মন কাড়ে নাড়াদেয় দর্শকদের। নবনির্মিত জেলা শিল্পকলা একাডেমির এখনও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়নি। তার আগে টেকনিকেল শো হিসেবে উৎসবের সমাপনী দিনে নাট্যকেন্দ্র জনপ্রিয় এই পালা নাটকের মঞ্চায়ন।
নাট্যো উৎসবের সমাপনী আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ আসিব আহসান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নাট্যকেন্দ্রের সভাপতি মাহবুবুল আলম খান।অতিথি ছিলেন নাট্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নাট্যজন কাজী মোঃ জুননুন, রংপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার নুঝাত তাবাসসুম রিমু।
দর্শক সারিতে থাকা কয়েকে জন শ্রোতার সাথে কথাহয় তারা বলেন, এ ধরনের নাটক অনেক বছর পর দেখলাম। এখন তো আগের মতো নাটকের মঞ্চায়ন নেই। তবে নাট্যকেন্দ্র খুবই সুন্দর একটি নাটক মঞ্চায়ন করেছে। নাটকের সংলাপে রংপুরের আঞ্চলিক ভাষা, ভাওয়াইয়ার সুর এবং পুরোনো দিনের সেই পালাগানের আবহ অতিত কে নাড়াদিয়েছে।
গত ২ নভেম্বর রংপুর নাট্যকেন্দ্র আয়োজিত চার দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের আয়োজন করাহয়। উদ্বোধনী দিনে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে সংগঠনের কার্যালয়ে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর পর দিন ৩ নভেম্বর রংপুর টাউন হল মঞ্চে সুমিত মোহন্তের রচনা ও নির্দেশনায় মঞ্চায়ন হয় ‘মাইডাসের স্বপ্ন স্বর্ণ’ নাটক। তৃতীয় দিনে একই মঞ্চে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে সুমিত মোহন্তের নাট্যরূপ ও নির্দেশনায় শাস্তি নাটক মঞ্চায়ন করে।
এই বিভাগের আরও খবর