ভুলে যাচ্ছি, আমরা সবাই
ভুলে যাচ্ছি খুব দুঃসাহসী একটি গ্রামের কথা
আমরা ভুলে যাচ্ছি সন্তোষের উচ্চকিত নাম।
বড়ো দুঃখী সে, চিতাভষ্মের ছাই হয়ে
উড়ে যাচ্ছে স্মৃতির প্রবল হাওয়ায়
এখন সে বড়ো দুঃখী, সেই শ্রমজীবী মানুষের
মুক্তির প্রতীকী পতাকা
ছিন্নভিন্ন পড়ে আছে স্বপ্নভুক বিরুদ্ধ বাতাসে
বড়ো দুঃখী সে, একজন দুঃসাহসী বৃদ্ধ
যুবকের কণ্ঠস্বরে এখন তোলে না
প্রবল প্রতিবাদ, তর্জনী তুলে ধরে বলে না “খামোশ”।
অথৈ প্লাবনে দেশ থই থই
ঝলসানো বাংলায় দারুণ খরা
টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া
পড়ে আছে সিরাজ সিকদারের লাশ
লাঞ্ছিতদের চোখ উপড়ে বাহবা পাচ্ছে ধর্মান্ধ শরীক
ঘাতক ট্রাকের নিচে পিষ্ট মিছিলের তীক্ষè তরুণ
ফুল থেকে ভেসে আসে দৃর্গন্ধ নিঃশ্বাস
মুক্ত বাজারী বেনিয়ার কাছে নতজানু মুক্তিযুদ্ধের দেশ
মওলানা ভাসানী
তুমি কি সন্তোষে সবাইকে ডাকবে না
একটিবার, আর একটিবার
কাগমারী সম্মেলনে বলবে না “আসসালামু আলাইকুম”
মওলানা ভাসানী
তোমার মাজারে এখন দুর্নীতির মল-মূত্রে গা ঘিনথিন উত্তরসূরী
ফুলের স্তবক নিয়ে উড়ে আসে দর্পী কন্টার
গণতন্ত্র চেটে খাওয়া ভন্ড রাজনীতিবিদ আর ধর্ম ব্যবসায়ী,
আর কত দিন
শুনবে নির্লিপ্ত তুমি গদগদ বক্তৃতায় মিথ্যা উচ্চারণ
কতদিন ঝুলে থাকবে ক্রুশবিদ্ধ তোমার মৃতদেহ
কতদিন
আর কতদিন?
সন্তোষে তোমার কুড়েঘর খুঁজে পায় না।
বস্তির শ্রমিক আর দেহাতী মানুষ
সেখানে এখন এক অচেনা প্রাসাদ
নেতা, তোমাকে নির্বাসিত করেছে কোন দুঃশাসন
তোমার সন্তোষ কাগমারী
যেখানে কৃষকের কথা বলেন মওলানা ভাসানী
বলেন শ্রমিকের সব দুঃখ গাঁথা
আমরা আবার সেই সন্তোষে যেতে চাই
তোমার সান্নিধ্যে শুধু একবার
হাতে ফেস্টুন, লাল টুপি, সেই সব ভুলে যাওয়া তীক্ষ্ম শ্লোগান
মহরমের যুদ্ধ বাজনা
ভীষন বাজিয়ে ফিরে যেতে চাই সন্তোষের দীঘির ধারে
তীক্ষè বল্লমের মতো শীর্ণ হাত ঊর্ধ্বমুখী করে
শ্লোগান ধরেছে তোরাপ ফকির, মালেক মিয়ার মুখে শপথের
দৃঢ় উচ্চারণ
বিশাল মিছিল নিয়ে বাংলার ক্রদ্ধ রবিনহুড
কছিম দেওয়ান আসে হাতে নিয়ে রামদা, বর্শা, ঢাল
মুখে সমাজতন্ত্র কায়েমের দৃপ্ত উচ্চারণ
ঐ আসে টঙ্গীর দৃপ্ত শ্রমিক
নামে ঐ জনতার ঢল
সন্তোষের দরবার হল, মাঠ-ঘাট-রাস্তা পেরিয়ে
বিশাল দীঘির চার ধার
লাঠি খেলা, নৌকায় ঢেলে রাখা ভাসানীর তপ্ত খিচুড়ি;
হুজুর ভাসানী
আর একবার, শুধু একবার
যেতে চাই তোমার সান্নিধ্যে।
সেই খড় ছাওয়া কুড়েঘর
বিদ্রোহী কণ্ঠস্বর
আমাদের ডেকে বলবে, শুধু মিছিলে মুক্তি নেই
মজলুমের হাড় দিয়ে তৈরি হোক বজ্র
গণতন্ত্রের শত্রæ কারা? কারা সমাজতন্ত্রের দুষমন
সা¤্রাজ্যবাদ আর সামন্তবাদের পা’চাটা কুকুর
সংসদে বসে আছে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে
লাথি মেরে ফেলে দাও বর্ণচোরা ভন্ডদের মসনদ থেকে
জনতার কথা ভুলে ক্ষমতার জন্য ওরা কারা
রাজপথে মিছিল আর মিথ্যা শ্লোগান
উগড়ে দেওয়া বমি খাবে বলে
বাম-ডান মিলে গেছে, আর
মানুষের মুক্তি চায় যারা
দাড়াও সামনা-সামনি শেষ যুদ্ধের মহড়ায়।
মওলানা ভাসানী।
তুমি কি সন্তোষে সবাইকে ডাকবে না
একটিবার আর একটিবার
গা ঘিনঘিন করা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট সন্ধানী
মত্ত নেতা ও কর্মীদের মুখে তুলবে না পয়জার
বলবে না আমাদের ডেকে
লোভী কুকুরের জন্য রয়েছে তো মলভান্ড
চাটুকার বুদ্ধিজীবী
চরিত্রহীন নেতা
আকণ্ঠ ভূড়িভোজনের আয়োজন
দুর্নীতির মলমূত্র
লেজ নাড়লেই বিষ্ঠার সাগর।
একবার শুধু একবার
মওলানা ভাসানী
আমাদের ডাকো সেই সন্তোষের পরিচিত মাঠে
কামার-কুমার, মাঝি, জেলে আর সর্বহারার সরল সান্নিধ্যে
যুদ্ধের শেষ মহড়ায়
দুর্ভেদ্য ব্যূহ রচনা করবেন মজলুম মানুষের নেতা ।
শেষ জয় মানুষের, শান্তির, বিশ্বজুড়ে যুদ্ধরত মানবিক চেতনার জয়
তারপর শেষবার তুমিও ঘুমাও
লাঞ্ছিত মানুষের শেষ ঠিকানায়
বিজয়ী সন্তোষে।