লালমনিরহাট বার্তা
প্রধানমন্ত্রী রংপুরে যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন
রংপুর অফিস | ৩১ জুল, ২০২৩, ১:০৩ PM
প্রধানমন্ত্রী রংপুরে যেসব প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন

রংপুরের পুত্র বধু প্রধানমন্ত্রী বুধবার (২ আগষ্ট) রংপুর সফরে এসে ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকার ২৭টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং নতুন করে আরো ৫টি প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে বক্তৃতা দেয়ার আগে তিনি এসব প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। বিষয়টি নিশ্চত করেছেন রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান।

রংপুর জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, কাজ শেষে প্রস্তুত হওয়া শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার,শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, পীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ের জলাবদ্ধতা নিরসন শীর্ষক প্রকল্প, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স, পালিচড়া স্টেডিয়াম, নলেয়া নদী পুন:খনন, আলাইকুমারী নদী পুন:খন, পীরগাছা চৌধুরানী জিসি হতে শঠিবাড়ি আরএইডি ৫৭৯ মি. সড়ক (পীরগাছা অংশ), পীরগঞ্জ ভেন্ডাবাড়ি হতে খালাশপীর জিসি সড়ক পুনর্বাসন, কাউনিয়া উপজেলার টেপামধুপুর জিসি হতে পাওটানা জিসি ভায়া ভায়ারহাট সড়ক পুনর্বাসন,মিঠাপুকুর উপজেলার জায়গীরহাট-পীরগাছা ভায়া বালারহাট সড়কের গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর উপর ৯৬ মিটার পিএসসি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট জিসি-কাকিনা আরএইডি সড়কে ৪০ মি. আরসিসি ভেরিয়েবল ডেপথ গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ, কাউনিয়া উপজেলায় তিনতলা পল্লীমারী সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম ফ্লাড শেল্টার নির্মাণ, রংপুর মেডিকেল কলেজ মাল্টিপারপাস ভবন, বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় ভবন, মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট বেগম রোকেয়া মর্ডাণ হাসপাতাল, হেলেঞ্চা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, পীরগঞ্জের চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র,খালাশপীরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র, মাদারগঞ্জে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র্র, রংপুর সিটি করর্পোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে গ্রাসফন্ট প্লান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড নির্মাণ, ভারারদহ বিল, পাটোয়া কামরী বিল পুন:খন, চিতলী বিল পুন:খন, রংপুর সিটি কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, নৈমুন্না বিল পুন:খনন এর উদ্বোধন করবেন।এছাড়া তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার নির্মাণ, রংপর জেলায় বিটাক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অফিস ভবন এবং লেডিস হোস্টেলের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।

আওয়ামী লীগের রংপুর বিভাগের দায়িতপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী বলেন, রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে তিনি এসব উন্নয়নমূলক কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করবেন।প্রধানমন্ত্রীর কাছে চাইতে হয় না। তিনি জানেন কখন কী করতে হবে। রংপুরবাসী না চাইতেই ওনার কাছে অনেক কিছু পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী রংপুরের উন্নয়ন নিজ কাঁধে নিয়েছিলেন এবং উন্নয়নের মধ্য দিয়ে রংপুরকে বদলে দিয়েছেন। আবার তিনি রংপুরকে সুখবর দেবেন।

এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুর সফরে এসব প্রকল্প ছাড়াও উন্নয়নের জন্য আর কী কী ঘোষণা দিতে পারেন নির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। তবে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, পীরগঞ্জ খালাশপীর কয়লা খনি থেকে কয়লা উত্তোলন, রংপুর মেডিকেল কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয় ঘোষণা, শ্যামপুর চিনিকলসহ বিভাগের বন্ধ চিনিকলগুলো পুনরায় চালু, বিশেষ মেগা প্রকল্প, অর্থনৈতিক জোন সহ প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কিছু দিবেন এমনটা আশা করছেন রংপুর বাসী।

রংপুর বাসী মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্যদিয়ে রংপুর অঞ্চলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষিনির্ভর ভারী শিল্প স্থাপন, আর্ন্তজাতিক মানের শিক্ষা, চিকিৎসা, খেলাধুলার সুযোগ তৈরি, শ্যামাসুন্দরী খাল খনন, শিল্পকলকারখানা স্থাপন সহ নানান স্বপ্ন পূরণের ঘোষণা আসবে।

রাজনীতি ও উন্নয়ন বিশ্লেষকরা বলছেন, রংপুরের মহাসমাবেশ থেকে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রংপুর-লালমনিরহাট-পাটগ্রাম-বুড়িমারি মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর, রংপুরে আধুনিক রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ ও ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি সহ অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা আসলে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগে পক্ষে একটি বড় ধরণের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উন্নয়ন বিশ্লেষক উমর ফারুক বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের দিকে তাকালে রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্যটা ফুটে উঠে। এই অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়নও বরাদ্দ কম, সরকারের কোনো মেগা প্রকল্প নেই। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রীর সফরে পিছিয়ে পড়া রংপুর বিভাগকে এগিয়ে নিতে আরো বেশি উন্নয়নের ঘোষণা আসুক। আমরা উত্তরের টেকসই উন্নয়নে বড় ঘোষণার প্রত্যাশা করছি।প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের সুপারিশ ও চাওয়া থাকবে-রংপুর বিভাগ উন্নয়ন বোর্ড গঠন, তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য অর্থ বরাদ্দ ও বাস্তবায়ন,রংপুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বন্ধ চিনিকল চালু ও চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য অর্থ বরাদ্দ, আলাদা শিল্প, কর, ভ্যাট, শুল্ক ও ঋণনীতি ঘোষণা, রংপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন, বৈদেশিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ওয়াসা গঠন, রংপুর সিটি করর্পোরেশনে প্রয়োজনীয় ও সম্মানজনক বাজেট বরাদ্দ, কর্মসংস্থানভিত্তিক সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্র দূরীকরণে উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

রাজনীতি ও উন্নয়ন গবেষক রিয়াদ আনোয়ার শুভ বলেন, ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর জিলা স্কুল মাঠে এক জনসভায় জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে পাশে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রংপুরের সার্বিক উন্নয়নের সকল দায়িত্ব আমার কাঁধে নিলাম। রংপুরের পুত্র বধু হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব তো আছে। এক যুগ পরে এসে বলাই যায়, সেদিনের তাঁর সেই ঘোষণা যে নিতান্তই কথার কথা ছিল না তা আজ প্রমাণিত। একথা আজ নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, স্বাধীনতার পরে রংপুরের আক্ষরিক অর্থে সামগ্রিক যা উন্নয়ন হয়েছে তার প্রায় সবই হয়েছে বিগত মহাজোট ও বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে। এটা যারা স্বীকার করবে না তারা স্রেফ সত্যের অপলাপ করবে। অনেক উন্নয়ন হয়েছে। শুধু দুইটা তিস্তা সড়ক সেতুর কথা ধরলেই বলা যায়, তিস্তা নদীর উপরে দুই দুইটি সড়ক সেতু নির্মাণ এই অঞ্চলের মানুষের সড়ক যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক মাইল ফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রংপুরের মহাসমাবেশ ঘিরে এখন একাট্টা ও উজ্জীবিত রংপুর বিভাগ আওয়ামী লীগ। এই মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে শক্তিশালী করে বিরোধী জোটের মাঠের আন্দোলন মোকাবেলা ও রংপুর বিভাগকে আওয়ামী লীগের ঘাটিতে রুপান্তরের স্বপ্ন নেতাকর্মীদের।

এই বিভাগের আরও খবর