লালমনিরহাট বার্তা
নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সুন্দরবন
ভয়েস অফ আমেরিকা | ২৭ সেপ, ২০২৩, ১:৩২ PM
নিষেধাজ্ঞা শেষে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর সুন্দরবন

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত সুন্দরবনে এ বছর পর্যটন মওসুম শুরুর পর থেকে দেশি পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। এ ছাড়া, ভরা মৌসুমে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখে অভিভূত হচ্ছেন বিদেশি পর্যটকরাও।

একটানা ৩ মাস বন্ধ থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে সুন্দরবন বনজীবী ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে এখন পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। আগত পর্যটকদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিদেশি।

সুন্দরী ইকো রিসোর্টের পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের আতিথেয়তা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরাই আমাদের স্বপ্ন। ঢাংমারি এমন একটা গ্রাম, যেখানে গড়ে উঠেছে কিছু ইকো রিসোর্ট। এর মাধ্যমে এই স্বপ্ন পূরণ হতে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে ভিলেজ ট্যুরিজমকে ডেভেলপমেন্ট ও কমিউনিটি বেইজ ট্যুরিজম প্রসারে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা শতাধিক স্থানীয় লোকের কর্মসংস্থান করেছি। পাশাপাশি স্থানীয় অংশীজনরাও লাভবান হচ্ছে। সর্বোপরি এখানে আর্থিকভাবে স্থানীয়রা সরাসরি লাভবান হচ্ছেন।

সাইফুল ইসলাম বলেন, গত দেড় মাসে জার্মানি, চীন, জাপান, পোল্যান্ড, ভারত মিলে আমরা ৩৪ জন বিদেশি পর্যটকে সেবা দিয়েছি। গ্রাম বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তাদের কাছে তুলে ধরতে সকল আয়োজন করে থাকে টিম সুন্দরী।

সাইফুল ইসলাম বলেন, এ সময় গ্রামের রাস্তায় দেশীয় পোশাকে হাঁটতে দেখা যায় ভিনদেশিদের। গ্রামের লোকজনও তাদের গ্রামবাংলার আতিথেয়তা দিয়ে বরণ করে নেয়।

হলিডেজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক আবু ফয়সাল মোহাম্মদ সায়েম বাবু বলেন, “দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন বেশ আকর্ষণীয় গন্তব্য হয়ে উঠছে। আর সেইদিক মাথায় নিয়ে আমরা আধুনিক ও বিলাসবহুল ক্রুজ জাহাজের মাধ্যমে পর্যটকদের উন্নতমানের পর্যটন সেবা দিচ্ছি”।

তিনি বলেন, সুন্দরবন ভ্রমণে বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি কমালে আরও বেশি পর্যটক আসত।সুন্দরবনে ঘুরতে আসা জাপানিজ পর্যটক মোকো বলেন, গল্প শুনে সুন্দরবন দেখার আগ্রহ নিয়ে এসেছিলাম সুন্দরী ইকো রিসোর্টে। তবে বন দেখার পাশাপাশি যে এত সুন্দর গ্রাম ভ্রমণ এবং সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য দেখতে পারব তা আমি আশা করিনি।

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ট্যুর গাইড হিসেবে রিসোর্ট মালিক নিজেই দায়িত্ব পালন এবং নিজের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত দিয়েছেন। আমার জন্মদিনে তারা খুব সুন্দর একটি আয়োজন করেছিল। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ”।

জার্মান পর্যটক ম্যাক্সিলিয়ান বলেন, বাংলাদেশ ইতিবাচকভাবে আমাদের অবাক করেছে। এখানে তেমন কোনো পর্যটন অবকাঠামো নেই। এমন একটি দেশ যেখানে পর্যটকেরা বেড়াতে এলে তারা এখনো খুশি হয়।

তিনি আরও বলেন, অবশ্যই, এটি একটি সাধারণ অবকাশের জন্য একটি দেশ নয়। তবে আপনি যদি সংস্কৃতি, মানুষ এবং উষ্ণতা পছন্দ করেন তবে আমরা প্রত্যেক ভ্রমণকারীর কাছে বাংলাদেশের সুপারিশ করতে পারি।

করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, সুন্দরবনে ১ সেপ্টেম্বর থেকে ইকো-ট্যুরিস্ট ও বনজীবীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত করমজলে প্রায় শতাধিক বিদেশি পর্যটক এসেছেন। এ সময় সুন্দরবনের পরিবেশ দেখে বিদেশি পর্যটকেরা মুগ্ধ হয়েছেন।

সুন্দরবনের পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজী মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, এ মৌসুমের ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনে ৪ হাজার ৯০৮ জন দেশি পর্যটক ও বিদেশি ৭২ জন পর্যটক এসেছেন।

তিনি আরও বলেন, গত বছর এই ২৬ দিনে পর্যটক ছিল ২ হাজার ৩৩২ জন আর বিদেশি ছিল ৭ জন। এ বছর সুন্দরবনে দেশি পর্যটকের পাশাপাশি বিদেশি পর্যটকের আগমনও বেড়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর