লালমনিরহাট বার্তা
পাটগ্রামে ইউএনও ও এসিল্যান্ড নাই, সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ৩১ মে, ২০২২, ১:২৬ PM
পাটগ্রামে ইউএনও ও এসিল্যান্ড নাই, সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি/এসিল্যান্ড) নাই। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ উপজেলায় প্রশাসনিক দপ্তরের দুটি পদে কর্মকর্তা না থাকায় সেবা নিতে আসা লোকজনেরা নানা ধরণের ভোগান্তিতে পড়েছে। উপজেলা চত্বরের অফিস/দপ্তর পাড়া ঝিমিয়ে পড়েছে। অন্যান্য দপ্তরের প্রধানগণও ঠিকমত তাঁদের কার্যালয়ে আসছেন না। কর্মকর্তাগণ আসা-যাওয়ার কোনো সময় মানছেন না। এতে প্রশাসনিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে স্থবিরতার তৈরি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলা সদর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে পাটগ্রাম উপজেলার অবস্থান। গত চার বছরে পাটগ্রাম উপজেলায় ৫ জন ইউএনও এ উপজেলা থেকে বদলী নিয়ে হয়ে অন্যত্র যোগদান করেছেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব ও ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেছেন ৩ জন। জেলার অন্যান্য উপজেলা গুলোতে ২-৩ জন ইউএনও উল্লেখিত সময়ে দায়িত্ব পালন করলেও এ পদে পাটগ্রাম উপজেলায় ৮ জন রদবদল হয়। এ উপজেলায় নানামূখী চাপে এ ইউএনও টিকছেন না বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র দাবি করেন।
একই সময়ে (৪ বছরে) চারজন সহকারী কমিশনার (ভূমি) রদবদল হয়। এতে জমির নামজারি ও অন্যান্য কাজে জটের সৃষ্টি হয়েছে। সহকারী কমিশনার আল ইমরান গত ২২ ফেব্রæয়ারি এক আদেশে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বদলী হন। নতুন কাউকে পদায়ন না করায় তখন থেকে সহকারী কমিশনারের পদটি শূণ্য রয়েছে।
গত ০৯ ফেব্রæয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ প্রশাসন শাখার নির্দেশে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুর রহমান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে নীলফামারী জেলায় বদলী হন। তিনি পাটগ্রাম উপজেলায় যোগদানের ১ বছর ১৫ দিনের মাথায় বদলীর আদেশ পান। তাঁর বদলীর আদেশের পর গাইবান্ধা জেলার ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নাজির হোসেনকে পাটগ্রামে বদলী ও যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। তিনি তদবীর করে পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলায় যোগ দেন। এরপর ঠাকুরগাঁও জেলার বানিয়াডাঙী ইউএনও যোবায়ের হোসেনকে পাটগ্রাম উপজেলায় বদলী ও যোগদানের আদেশ দেওয়া হয়। তিনিও তদবীর করে রাজশাহী বিভাগে পাবলিক সার্ভিস কমিশনে উপপরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এর আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে আব্দুল করিম ১৯ আগস্ট ২০১৮ সালে দায়িত্ব নেন। এক বছরের মাথায় ঠাকুরগাঁও জেলার হরিপুর উপজেলায় বদলী হয়ে চলে যান।
তিনি যাওয়ার পর ৪ মাস ২৫ দিন ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করেন পাটগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দীপক কুমার দেব শর্মা। এরপর ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে বদলী হয়ে আসেন মশিউর রহমান। ৬ মাস ২৪ দিন পর তিনিও বদলী হয়ে চাপাইনবাবগঞ্জ জেলার সোনাহাট উপজেলায় বদলী হন।
তিনি চলে যাওয়ায় পার্শ্ববর্তী হাতীবান্ধা উপজেলার ইউএনও সামিউল আমিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট কামরুন নাহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এখানে যোগ দেন। তাঁকে ৬ মাস ২৭ দিন পর ভ‚মি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জামালপুর জেলায় বদলী করা হয়।
তিনি যাওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পাটগ্রাম উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুবেল রানা দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২১ সালের ২১ মার্চ রামকৃষ্ণ বর্মণ পাটগ্রামে ইউএনও হিসেবে যোগদান করেন। তিনিও ১ মাস ১৯ দিনের মাথায় বদলী হয়ে চলে যান। এরপর দায়িত্ব নেন সাইফুর রহমান। বর্তমানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে রয়েছেন হাতীবান্ধা উপজেলার নাজির হোসেন।
বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর এলাকার ফারুক হোসেন বলেন, ‘জন্ম সনদপত্র ঠিক করতে এসেছি। এসে শুনি ইউএনও নাই। কবে আসবে জানি না। ইউএনও না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।
জগতবেড় ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের সদস্য আলাউদ্দিন সুমন বলেন, ‘ইউএনও না থাকায় পুরো উপজেলা অচল হয়ে গেছে। পাশের উপজেলা থেকে অতিরিক্ত দায়িত্বে যিনি আসেন তিনি তাঁর উপজেলার কাজ করবেন না আমাদের এ উপজেলার কাজ করবেন।’
পাটগ্রাম পৌরসভার সোহাগপুর এলাকার আব্দার আলী বলেন, ‘সহকারী কমিশনার (ভূমি) না থাকায় জমির নামজারি করতে দিনের পর দিন হয়রানি হতে হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ এ দপ্তর গুলোতে প্রধান কর্মকর্তা কেনো নাই বুঝিনা।’
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘দুটি পদ শূণ্য রয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
এই বিভাগের আরও খবর