লালমনিরহাট বার্তা
পদ্মা সেতুর কারণে জাজিরায় হুহু করে বাড়ছে জমির দাম
বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | ২৯ মে, ২০২২, ৩:০৮ AM
পদ্মা সেতুর কারণে জাজিরায় হুহু করে বাড়ছে জমির দাম
আগামী ২৫ জুন উদ্বোধন করা হচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু। এ অবস্থায় হঠাৎ আরো কয়েক ধাপ বেড়ে গেছে শরীয়তপুরের জাজিরার সড়কের পাশের জমির দাম। এমনকি শরীয়তপুর জেলা শহরসহ নড়িয়া উপজেলার জমিরও দাম বেড়েছে। এতদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকলেও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে পদ্মা সেতু। তাই জাজিরাসহ পদ্মা সেতুর আশপাশের জমির চাহিদা বেড়েছে, ফলে বেড়ে গেছে দামও।

আগামী ২৫ জুন পদ্মা সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। সরেজমিনে গিয়ে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এক যুগ আগেও ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত মহাসড়কের পাশের জমি বেশ কম দামে কেনাবেচা হতো। সেই সময়ের তুলনায় এখন জমির দাম বেড়ে গেছে ১২ থেকে থেকে ১৫ গুণ। যেমন ২০০৭ ও ২০০৮ সালে পদ্মা সেতুর জন্য যখন জাজিরার চারটি মৌজায় ১ হাজার ৭০১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন সরকারনির্ধারিত দর (মৌজা রেট) ছিল শতাংশপ্রতি ৭ হাজার ১৫৪ টাকা। বর্তমানে সেই জমির সরকারনির্ধারিত দর শতাংশপ্রতি সাড়ে ৮৭ হাজার টাকা। অবশ্য জমি কেনাবেচার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে জমির বাজারমূল্য সরকারি দরেরও ১২ থেকে ১৫ গুণ বেশি। ২০২০ সালের মার্চে পদ্মা সেতুর দুই প্রান্েত ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার এক্সপ্রেসওয়ে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে জমির দাম বেশি বাড়ছে মূলত এক্সপ্রেক্সওয়ের দুই পাশে। এদিকে, জাজিরা ও শিবচরে হচ্ছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লি। অন্যদিকে সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর শহর পর্যন্ত ফোর লেন সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণ হয়েছে। এসব কারণে বেসরকারি উদ্যোক্তারা শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য জমি কিনছেন।
সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের জন্যও জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। আবাসন ব্যবসায়ীরাও কিনছেন। হাসপাতাল করার জন্যও জমি কিনেছেন অনেকে। জাজিরার বাসিন্দা আনোয়ার ফরাজি ঢাকার ফরাজী হাসপাতালের মালিক। তিনি জাজিরাতেও একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার জন্য জমি কিনেছেন। ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কের পাশে আরাচণ্ডী এলাকায় জমি কিনে তাতে হাসপাতালের নামে সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন।
সখিপুরের হাজী শরীয়তউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অধ্যক্ষ আবুল বাসার আল আজাদসহ কয়েক জন চাকরিজীবী মিলে জাজিরার লাউখোলা মৌজায় ১২ বিঘা জমি কিনেছেন। তারা বলেন, জাজিরার বেশির ভাগ এলাকা অনুন্নত। শিক্ষার অগ্রগতিও কম। পদ্মা সেতুর কারণে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ অনেক সহজ হবে, এমন চিন্তা থেকে জাজিরায় শিক্ষাপল্লি করার পরিকল্পনা করছেন তারা। শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে জাজিরা উপজেলা সদর হয়ে পদ্মা সেতু যেতে হয়। জাজিরার পর থেকেই সড়কের দুই পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কিনে রাখা অসংখ্য জমির সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে।

কেউ কেউ জমি কিনে সীমানাপ্রাচীর তৈরি করে রেখেছেন, আবার কেউ কেউ অবকাঠামো নির্মাণও শুরু করে দিয়েছেন। বর্তমান অবস্থায় কেউ আর জমি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। পদ্মা সেতুর জন্য প্রথম যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন মূল্যের দেড় গুণ ক্ষতিপূরণ পেতেন মালিকরা। সরকার আইন পালটে ক্ষতিপূরণের হার তিন গুণ করেছে। তবে অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান জমি কেনার পর থেকেই জমির দাম বাড়তে শুরু করে সেতুর জাজিরা প্রান্ত থেকে জাজিরা সদর হয়ে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত। তবে এখন আর কেউ সহজে জমি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছেন না। কিন্তু জমি কেনার জন্য ঘুরছেন অনেকেই।

জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার মাসট্রেড নামে একটি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক। তিনি গার্মেন্টস পল্লি, কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, শ্রমিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারিগরি কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য ১০০ বিঘা জমি কিনেছেন। তার কেনা জমি জাজিরায় পদ্মা সেতুর সংযোগ সড়ক থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে। জমি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। শিগ্গিরই অবকাঠামো নির্মাণ শুরু হবে। তিনি জমি যে দামে কিনেছিলেন, তার থেকে ১০-১২ গুণ বেড়ে গেছে।

মোবারক আলী সিকদার বলেন, এতদিন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক দিয়ে পিছিয়ে ছিল। এই জনপদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিরাট সুযোগ সৃষ্টি করেছে করেছে পদ্মা সেতু। সুযোগটি কাজে লাগাতে অনেক উদ্যোক্তাই জমি কিনে প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন। আমি যে বিনিয়োগ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি, তা বাস্তবায়িত হলে ৪ হাজার থেকে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

দ্য শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এ কে এম ইসমাইল হক বলেন, সেখানে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারকে উপযোগী পরিবেশ তৈরিতে বিশেষ নজর দিতে হবে।(সুত্র:ইত্তেফাক)
এই বিভাগের আরও খবর