লালমনিরহাট বার্তা
দহগ্রাম বন্যা, ১০ গ্রাম প্লাবিত, দেড় হাজার কৃষকের আমন খেত নষ্টের শঙ্কা
স্টাফ রিপোর্টার | ২৯ আগ, ২০২৩, ৪:৩১ AM
দহগ্রাম বন্যা, ১০ গ্রাম প্লাবিত, দেড় হাজার কৃষকের আমন খেত নষ্টের শঙ্কা

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নে তিস্তা নদীর বন্যায় ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় কয়েক হাজার পরিবার পানিবন্দী ও দেড় হাজার কৃষকের আমত খেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সোমবার বিকেল থেকে সন্ধা পর্যন্ত বিভিন্ন দহগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, এ ইউনিয়ন হয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদী এলাকা সংলগ্ন ৪, ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বেশকিছু অংশের বসতবাড়ি, রোপা-আমন ধান খেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে রয়েছে। এতে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এবারসহ দুই দফা বন্যায় রোপাআমন ধান খেত নিমজ্জিত হওয়ায় এ ইউনিয়নের প্রায় দেড় হাজার কৃষকের ৪ শত হেক্টর ধান খেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, উজানে বৃষ্টি ও বন্যা দেখা দিলে ভারতের কোচবিহার রাজ্যের জলপাইগুড়ি জেলা হয়ে প্রবাহিত তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গজলডোবা জলকপাট খুলে দেওয়া ও বন্ধ করে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। এতে ভাটিতে থাকা এ ইউনিয়নে প্রায়ই বন্যা ব্যাপক আকার ধারণ করে। ফসলি খেত, বসতভিটা-বাড়ি পড়ে ক্ষতির মুখে। চলতি মাসে আকস্মিকভাবে কয়েকদফা বন্যা দেখা দেয়। বন্যার পানি নেমে গেলেও গত ১০ এবং ২৭ আগস্ট বন্যার পানিতে কয়েকদিন ফসলি খেত ডুবে থাকে। এ কারনে রোপাআমন খেতের ধান গাছ পঁচন ধরতে শুরু করেছে বলে জানায় স্থানীয় কৃষকেরা।

স্থানীয়রা জানায়, গত ৩ থেকে চার দিনে তিস্তা নদীর পানি বেশ কয়েকবার কমে ও বৃদ্ধি পায়। সোমবার বন্যায় এ ইউনিয়নের ১, ৪ ও ৮, ৯ নম্বর ওয়ার্ড অংশের অন্তত ১০ টি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এলাকা গুলো হলো-মুন্সিপাড়া, সৈয়সদপাড়া, কাতিপাড়া, গুচ্ছগ্রাম, মহিমপাড়া, বড়বাড়ি, নতুনহাট, হাড়িপাড়া, কলোনিপাড়া ও সর্দারপাড়া।

দহগ্রাম ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা কবিরন নেছা (৫০) বলেন, ‘বন্যায় বাড়ি-ঘরে পানি। খাওয়া-দাওয়ার খুব সমস্যা হচ্ছে। এখনও কোনো সহযোগীতা পাই নাই।’

দহগ্রাম ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মুন্সিপাড়া এলাকার কৃষক আব্বাছ আলী (৪৫) বলেন, ‘তিস্তা নদীর পানি কমে ৬ ঘন্টা বাড়ে ১২ ঘন্টা এভাবে গত কয়েকদিন ধরে চলেছে। আমার ৩ বিঘা আমন ধান খেত শেষ। এবারে বহু কৃষকের ধান আবাদ বন্যায় নষ্ট হয়ে গেছে।’

পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল গাফ্ফার জানান, ‘বন্যায় দহগ্রামের একই এলাকায় বার বার পানি ঢুকছে। এতে ওই এলাকা গুলোর প্রায় দেড় হাজার কৃষকের ৪ শ হেক্টর আমন খেত বন্যার পানিতে নষ্ট হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) দহগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বন্যায় ডুবে থাকা ধান খেত ঘুরে দেখেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হামিদুর রহমান। এ সময় তিনি কৃষকদের সাথে কথা বলেন। প্রয়োজনীয় তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সরবরাহ করা হয়েছে।’

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তিস্তার পানি ছাড়লেই দহগ্রামে বন্যা হয়। এতে ফসলি জমি, বসতবাড়ি, রাস্তা, সেতু ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিস্তা নদীতে যে বাঁধ হচ্ছে সেটি উচু করে বেরি বাধ নির্মাণ করতে হবে। না হলে বন্যায় প্রতিবছর ক্ষতি হতেই থাকবে।’

উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুরুল হক বলেন, ‘বন্যায় পানিবন্দী ১ হাজার পরিবারের মাঝে সোমবার (২৮ আগস্ট) ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। আমন খেত ক্ষতিগ্রস্তের ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে তথ্য সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাতে বলা হয়েছে।’

এই বিভাগের আরও খবর