লালমনিরহাট বার্তা
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর পরিচালক নাছিমা আক্তার জলির প্রয়াণে শোকসভা অনুষ্ঠিত
বার্তা ডেস্ক | ১০ জুল, ২০২৪, ৬:৪০ AM
দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর পরিচালক নাছিমা আক্তার জলির প্রয়াণে শোকসভা অনুষ্ঠিত

দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর পরিচালক (কর্মসূচি) নাছিমা আক্তার জলির প্রয়াণে এক শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর উদ্যোগে আজ ০৯ জুলাই ২০২৪, বিকাল ৩.৩০টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুুঘর মিলনায়তনে তাঁর প্রতি শোকজ্ঞাপন ও তাঁর স্মৃতিচারণের লক্ষ্যে উক্ত শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ও কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. বদিউল আলম মজুমদার, নারীমৈত্রীর নির্বাহী পরিচালক শাহীন আক্তার ডলি, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও মানবাধিকারকর্মী শিপা হাফিজা, অপরাজেয় বাংলাদেশ-এর নির্বাহী পরিচালক ওয়াহিদা বানু, উবিনীগের নির্বাহী পরিচালক ফরিদা আখতার, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর পরিচালক (অর্থ ও প্রশাসন) স্বপন কুমার সাহা, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা ও সংগঠক তাজিমা হোসেন মজুমদার, এটুআই প্রকল্পের প্রোগ্রাম ¯েপশালিস্ট ইনোভেশন মানিক মাহমুদ, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সাবেক ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর আসলাম খান, ব্র্যাক-এর ডিরেক্টর নবনীতা চৌধুরী প্রমুখ। নাছিমা আক্তার জলির পরিবারের সদস্যবৃন্দের মধ্যে স্মৃতিচারণ করেন নাছিমা আক্তার জলির দেবর মো. হানিফুল হাসান সিদ্দিকী, ভগ্নিপতি শরিফুল হক, কন্যা সুমাইয়া হাসান সিদ্দিকী, পুত্র নাফিজ হাসান সিদ্দিকী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুজন নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার দিলীপ কুমার সরকার ও সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার অম্বিকা রায়।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বিভিন্ন সংগঠন ও নাছিমা আক্তার জলির শুভাকাক্সক্ষীগণ তাঁর স্মরণে স্থাপিত বেদী ও ছবিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সংগঠনগুলো হলো: দি হাঙ্গার প্রজেক্ট, জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাভোকেসি ফোরাম, বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক,

উইমেন ফর উইমেন, নারীমৈত্রী, হীড বাংলাদেশ, অপরাজেয় বাংলাদেশ, এসডিএস (শরীয়তপুর), গুডনেইবারস বাংলাদেশ, এডুকো বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।

এরপর প্রয়াত নাছিমা আক্তার জলির স্মরণে উপস্থিত সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন পালন করেন, নাছিমা আক্তার জলির কর্মজীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয় এবং তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করা হয়।

ড. বদিউল আলম মজুমদার তাঁর বক্তব্যে বলেন, নাছিমা আক্তার জলি নেই, এটা বিশ্বাস করা আমার জন্য দূরুহ। তাঁর সঙ্গে ছিল আমার হৃদয়ের স¤পর্ক। আমরা নানা বিষয়ে পরিকল্পনা করতাম, সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করতাম। সামান্য বেতনে তিনি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন, কিন্তু নিজ কর্মনিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এবং নিজের জীবনকে সমৃদ্ধ করেছেন। দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর এমন কোনো কাজ ছিল না যেখানে তাঁর হাত পড়েনি। তিনি তাঁর ৬১ বছর জীবনের প্রায় ৩০ বছর দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কাজে এবং নারী ও কন্যাশিশুদের উন্নয়নে ব্যয় করেছেন।

তিনি বলেন, নাছিমা আক্তার জলি এমন একজন মানুষ যিনি অসংখ্য মানুষের জীবনকে ¯পর্শ করেছেন, আমাদের জীবনকেও সমৃদ্ধ করেছেন। তিনি ছিলেন একজন পরিশ্রমী ও কর্মনিষ্ঠ মানুষ। ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় কন্যাশিশু দিবস প্রতিষ্ঠা এবং সরকারি বিভিন্ন আইনের খসড়া প্রণয়নে নাছিমা আক্তার জলি অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।

ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, নাছিমা আক্তার জলি মানুষের জন্য তাঁর জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

শাহীন আক্তার ডলি বলেন, নাছিমা আক্তার জলি যে আমাদের মাঝে নেই এটা বিশ্বাস করতে হয়। তিনি আমাদের সবার প্রিয় মানুষ ছিলেন। তাঁকে আমরা সহজে ভুলতে পারব না। নাছিমা আক্তার জলি নিজ প্রচেষ্টা দিয়ে কন্যাশিশুদের কল্যাণে কাজ করেছেন এবং জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরামের একটি শক্ত ভিত গড়ে তুলেছেন। যৌন হয়রানি প্রতিরোধে একটি সমন্বিত আইন পাস এবং তাঁর রেখে যাওয়া অন্যান্য কাজগুলো যথাযথভাবে করার মধ্য দিয়েই আমরা তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারি।

শিপা হাফিজা বলেন, নাছিমা আক্তার জলির মৃত্যুতে কষ্ট পেয়েছি, এক ধরনের শূন্যতা অনুভব করেছি। কাজ ও স্বপ্নের সঙ্গে মিলে তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে ঐ মানুষের বন্ধু হয়ে যেত পারতেন। তার মধ্যে কাজের প্রতি একটা তাড়া ছিল, আর এটাই একজন উন্নয়নকর্মীর বড় বৈশিষ্ট্য। সমাজকে আরও অনেক কিছু দেয়ার বাকি ছিল তাঁর। আমি মনে করি, নাছিমা আক্তার জলির চলে যাওয়া এক অপূরণীয় ক্ষতি। তাঁর রেখে যাওয়া কাজ চলমান ও বেগবান করতে পারলেই তার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হবে।

উলে­খ্য, দি হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশ-এর পরিচালক (কর্মসূচি) নাছিমা আক্তার জলি ছিলেন একজন নিবেদিত সমাজ উন্নয়ন কর্মী ছিলেন। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে আমৃত্যু দি হাঙ্গার প্রজেক্ট-এর কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে ‘জাতীয় কন্যাশিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ ও ‘বিকশিত নারী নেটওর্য়াক’ এর স¤পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তৃণমূলের নারীনেত্রীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও তাদের জীবন-মানের উন্নয়নে অসামান্য ভ‚মিকা রেখে গেছেন নাছিমা আক্তার জলি। তিনি গত ৯ জুন ২০২৪, ঢাকায় একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। নাছিমা আক্তার জলি এক পুত্র ও এক কন্যার জননী ছিলেন।  (সংবাদ বিজ্ঞপ্তি)

এই বিভাগের আরও খবর