লালমনিরহাট বার্তা
বিদেশী ট্রাক নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে, নিরাপত্তায় ঝুঁকি
পাটগ্রাম প্রতিনিধিঃ | ২৩ এপ্রি, ২০২২, ১২:২৩ PM
বিদেশী ট্রাক নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকছে, নিরাপত্তায় ঝুঁকি
লালমনিরহাটের বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের (কাস্টমস্) নির্ধারিত এলাকা অতিক্রম করে ভারত ও ভুটানের পণ্যবাহী ট্রাক দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। বেশিরভাগ পণ্যবাহী ট্রাক শুল্ক স্টেশন তথা কাস্টমস্ ঘোষিত সীমানা অতিক্রম করে প্রায় ৫ কিলোমিটার বা তারও বেশি ভিতরে ঢুকছে। এতে জাতীয় নিরাপত্তার ঝুঁকি, চোরাচালান, তেল পাচার, সীমান্ত এলাকায় দেহব্যবসা ও এইডস্সহ বিভিন্ন রোগের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ প্রতিনিধিকে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলেন- ‘কাস্টমস্ ঘোষিত এলাকা প্রয়োজনের তুলনায় কম। সীমানা পূর্ণনির্ধারণ করে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে বিদেশী ট্রাকের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা উচিত।’ অপরদিকে আইন প্রয়োগকারী ও পর্যবেক্ষণে নিযুক্ত সংস্থার মতে- ‘খেয়াল খুশি মত নির্ধারিত কাস্টমস্ সীমানা (বন্ডেড এরিয়া) অতিক্রম করে বিদেশী ট্রাকের চলাচল, পণ্য খালাসের সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি বা মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য পরিবহণের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায়না।’
সংশ্লিষ্ট মহল, ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ‘বিদেশী পণ্যবাহী ট্রাক দেশের বেশকিছু ভেতরে চলাচলে এ বন্দরে দায়িত্বরত বিজিবি, কাস্টমস্ ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের প্রকাশ্যে কোনো বিধি নিষেধ নেই। এজন্য অবাধে প্রবেশের প্রবণতা বাড়ছে। সড়কে ঘটছে সাধারণ মানুষের প্রাণহানি।’
বুড়িমারী স্থলবন্দর জিরো পয়েন্ট থেকে ইসলামপুর ও বুড়িমারী মৌজার আবাসিক কিছু বসতবাড়ি ছাড়া সবদিকের এলাকা গুলোতে ৫-৬ কিলোমিটার আঞ্চলিক সড়ক, মহাসড়ক ও মহাসড়কের দুই পাশে ৩-৫ কিলোমিটার বাংলাদেশি এলাকার অভ্যন্তরে পণ্যবাহী ২ থেকে ৩ শ ভারতীয় ও ভুটানি ট্রাক অবাধে ঢুকে থাকে।
জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে ভুটানের উপর ভিত্তি (বেইজ) করে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনটির যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে সরকারের এসআরও নং-১১-আইন/২০০২ অনুযায়ী ১২ জানুয়ারি ২০০২ সালে বুড়িমারী শুল্ক স্টেশনটিকে বন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ২০১০ সালের ৩০ মার্চ পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর হিসেবে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতাধীন কার্যক্রম চালু করা হয়। এ স্থলবন্দরটির অপরপার্শ্বে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ থানায় চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস্ শুল্ক স্টেশনটির অবস্থান। বুড়িমারী স্থলবন্দর হতে চ্যাংরাবান্ধা কাস্টমস্ শুল্ক স্টেশনটির দূরত্ব ৩ কি.মি। ভুটানের ফুন্টসলিং বাণিজ্যিক বন্দরের দূরত্ব প্রায় ১০৫ কি.মি। ২২ ফেব্রæয়ারি ২০১০ সালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপন (গেজেট) নং-২৭৬/২০১০/শুল্ক অনুযায়ী বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সীমা নির্ধারণ করা হয়। এতে আমদানি-রপ্তানি পণ্য উঠানো ও নামানোর স্থান বুড়িমারী মৌজার বাংলাদেশ-ভারত সংযোগ মহাসড়কের সীমান্ত শূণ্য রেখার ৫০০ মিটার অভ্যন্তর হতে পাটগ্রাম উপজেলা অভিমুখী ওই সড়কের ইসলামপুর মৌজার শেষ প্রান্ত পর্যন্ত উভয় দিকে ৫০০ মিটার বিস্তৃত এলাকা পর্যন্ত সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সীমানা অতিক্রম করে ভারত ও ভুটান থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল পণ্য উঠানো ও নামানোর প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ১৬ ফেব্রæয়ারি ২০২০ সালের সমনথির পত্র নং-১৮ অনুযায়ী সর্বস্তরের ব্যবসায়ীদিগকে সর্তক করা হলেও কেউ সীমানা অতিক্রম করার বিধি নিষেধ মানছেন না। কাস্টমের একটি সূত্র জানায়, ‘নির্ধারিত সীমানার বাইরে বিদেশী ট্রাক প্রবেশ করা ও মালামাল খালি ও ভরাট করা কাস্টমস্ এ্যাক্ট ১৯৬৯ এর ৯ ও ১০ ধারার সুস্পষ্ট লংঘন। শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এতে অর্থদন্ড, পণ্য ও যানবাহন বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে।’
বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের মেসার্স গোল্ডেন এন্টার প্রাইজের স্বত্ত¡াধিকারী মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এক যুগ আগে কাস্টমের নির্ধারিত সীমানা বর্তমান সময়ে অত্যন্ত কম। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের পণ্য রাখার শেডও কম। সরকারি স্থলবন্দর হিসেবে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরই বুড়িমারী স্থলবন্দরের গুরুত্ব রয়েছে। ব্যবসায়ী পরিবেশ নির্ভিগ্ন করতে কাস্টমের নির্ধারিত সীমানা বৃদ্ধি করা জরুরী।’
ভারতের আসাম থেকে আসা ট্রাক চালক জুরান আলী বলেন, ‘এখানকার (বাংলাদেশের) আমদানিকারকেরা পাথর বোঝাই ট্রাক নিয়ে আমাদেরকে যেখানে যেতে বলে সেখানে যাই। কেউ কোনো প্রকার নিষেধ করে না। আমরা যদি অপরাধ না করি তাহলে তো সমস্যা নেই।’
বাংলাদেশি ট্রাক চালক লিমন বাবু বলেন, ‘ভারতের চ্যারাবান্ধা বন্দর কাস্টমস্ সেদেশের নির্ধারিত সীমানা (প্রায় ২ কিলোমিটার) থেকে বেশি যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানকার (বুড়িমারীর) মত চালকদের গাড়ি নিয়ে চলাচল করার স্বাধীনতা ওখানে (চ্যাংরাবান্ধায়) নাই। দিনে রাতে তাঁদের নিরাপত্তা বাহিনী নির্ধারিত সীমানায় সর্তক থাকে।’
এ ব্যাপারে বুড়িমারী স্থল শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার জে এম আলী আহসান বলেন, ‘কাস্টমস্ কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সজাগ রয়েছে। ব্যবসায়ীদেরকে সর্তক করা হচ্ছে। কাস্টমস্ এলাকা বৃদ্ধি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’
এই বিভাগের আরও খবর