লালমনিরহাট বার্তা
পাটগ্রামে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যাম কোনো কাজে আসছে না
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ২৭ এপ্রি, ২০২২, ১২:৫৬ PM
পাটগ্রামে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যাম কোনো কাজে আসছে না
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা নদীর উপর ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যাম কোনো আসছে না। এটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে। কাজ শেষ হয় ২০১৩ সালে। কৃষকদের সেচ প্রকল্পের লক্ষ্যে নির্মিত এ রাবার ড্যামটি দীর্ঘ ৯ বছরেও কোনো কাজে না আসায় এটি নির্মাণে সরকারের ব্যয় করা কোটি কোটি টাকা পানিতে গেছে।
জানা গেছে, পাটগ্রাম উপজেলার নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের ৬৫০ হেক্টর জমির কৃষি আবাদ সহজীকরণ সেচের আওতায় আনতে উপজেলার পাটগ্রাম পৌরসভা হয়ে প্রবাহিত ধরলা নদীর উপর ১৩০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৫৪ মিটার প্রস্থ কংক্রিটের প্লাট ফর্মের ওপর তিনটি রাবার বসিয়ে ‘রাবার ড্যাম’ নির্মাণ করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত¡াধানে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার এইচএমএন্ডআর (জেভি) নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১৩ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ৮৫৮ টাকায় কাজটি সম্পন্ন করেন। অনেকের মতে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ধরলা নদীর উপর এ রাবার ড্যাম নির্মিত হয়েছে অদ্যাবধি এটির কোনো সুফল পায়নি কৃষকরা। পুরো অর্থই পানিতে গেছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন চাষীদের মাঝে স্বল্প টাকায় রাবার ড্যাম প্রকল্প এলাকার ৪ কিলোমিটারের মধ্যে সেচসুবিধা পৌঁছাতে সরকার ৬ শ মিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, ¯øইচ গেট, পানির পাম্প, আরসিসি নালা ৫ শ মিটার, পাম্প হাউস, চলাচলের জন্য সেতু নির্মাণ করে। এতে প্রতিবছর ধান উৎপন্ন ও আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ২২ হাজার মেট্রিক টন।
স্থানীয় কৃষক ও জনসাধারণের অভিযোগ কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাবার ড্যামটি সচল রাখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেওয়া, পরিকল্পনা প্রয়োগে অদক্ষতা ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নির্মাণের পর হতে কখনোই সেচযন্ত্র চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে ভেস্তে যাচ্ছে সরকারের এ প্রকল্পটি। প্রতি বছরে ২/১ বার এমনিতেই রাবার ড্যাম ফোলানো হয়। রাবার ড্যাম প্রকল্প পরিচালনায় ২০১৩ সালে ‘ধরলা নদী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেড’ গঠন করা হয়। সমিতির ৪০৮ জন সদস্য/কৃষক রয়েছে। সেচ প্রকল্পসহ অন্যান্য বিষয় দেখভাল করতে রাবার ড্যাম সন্নিকট সমিতির একটি কার্যালয় থাকলেও কার্যক্রম না থাকায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। রাবার ড্যাম ও সেচযন্ত্রপাতি সমূহের প্রয়োজনীয় ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে এসব।
পাটগ্রাম পৌরসভার বেংকান্দা গ্রামের চাষি মোহাম্মদ লিপু (৫০) বলেন, ‘রাবার ড্যাম করা হয়েছে ধান খেতে পানি/সেচ দেওয়ার জন্য। ৯ বছর হল কোনো পানি দেওয়া হয় নাই। এ রাবার ড্যাম করে তাহলে কি হল। এটি চালু হলে অনেক দরিদ্র কৃষকদের অনেক উপকার হত।’
একই এলাকার কৃষক নুরু মিয়া বলেন, ‘রাবার ড্যাম কোনো কাজের না। ধরলা নদীর নিকটবর্তী আবাদী জমি হওয়ায় আগে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ধান খেতে পানি ঢুকতো। সেচের কাজ হত। এখন এটা বানানোয় পানিও ঢুকেনা।’
ধরলা নদী রাবার ড্যাম পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রহমান বাবুল চৈতু সাংবাদিকদের বলেন, ‘বহুবার রাবার ড্যামটি চালু করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও জেলা, উপজেলা ও ঢাকার একাধিক সভায় কথা বলেছি। নদীর কিছু অংশে বাঁধ দিয়ে শাসনের প্রয়োজন আছে। জমির পাশ দিয়ে নালা করে অথবা পাইপ লাইন ও সেচ মেশিন বসাতে হবে। পাশাপাশি কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ ও জেলা, উপজেলার প্রকৌশলী এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা এখানে এসে অনেক বক্তব্য দেয়, কথা বলে, চলে যাওয়ার পর সবই ভুলে যায়।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাটগ্রাম উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুব-উল আলম বলেন, ‘মূলত রাবার ড্যামের মাধ্যমে কৃষি খেতে সেচ সুবিধা দিতে তৈরি করা হয়েছে। পানি নিয়ে যেতে স্থানীয় লোকজন সহযাগীতা করছেন না। তাঁরা রাবার ফোলাতে নিষেধ করে। এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে চালু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এই বিভাগের আরও খবর