লালমনিরহাট বার্তা
মওলানা ভাসানীর ৫০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ২৩ জানু, ২০২২, ১১:১৪ AM
মওলানা ভাসানীর ৫০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত
টাঙ্গাইলের সন্তোষে মজলুম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৫০তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে শনিবার সকাল ৯ টায় মওলানা ভাসানীর মাজারে ভাসানী পরিষদের উদ্যোগে পুষ্পস্তবক অর্পণ, দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
এসময় ভাসানী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সচিব এম. এ. আজাদ সোবহানী আল ভাসানী, সদস্য ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভাসানী পরিষদের সাবেক সভাপতি ড. ইকবাল বাহার বিদ্যুৎ, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ভাসানী পরিষদের কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান খান, ভাসানী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জিন্নাহসহ অন্যান্য নেতা-কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী দেশের অভ্যন্তরে থেকেই মুক্তিযুদ্ধ করার পরিকল্পনা গ্রহন করেছিলেন। বলেছিলেন, 'জনবল আছে শুধু অস্ত্র চাই।' প্রথমে টাঙ্গাইলের চরাঞ্চলে এবং পরে রৌমারীর সীমান্ত অঞ্চলে মুক্তাঞ্চল গঠন করে গেরিলা যুদ্ধ সংগঠিত করতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ৪-৬ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার আর তাদের এদেশীয় দোষররা মিলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে এবং বিন্যাফৈরে তাঁর বসতবাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। হন্যে হয়ে তারা মওলানা ভাসানীকে খুঁজতে থাকে। ক্রোধে বলতে থাকে, 'কাফের ভাসানী কোথায়?' তাদের সাথে ছিল এ্যামবুলেন্স। জীবিত অথবা মৃত মওলানা ভাসানীকে তাদের চাইই চাই।
এমন পরিস্থিতিতে ধলেশ্বরী-যমুনা হয়ে তিনি রৌমারী পৌঁছান। সেখানেও তিনি নিরাপদ ছিলেন না। উপরন্তু নেতা কর্মী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। শেষমেষ ১৫-১৬ এপ্রিল রৌমারীর নামাজের চর সীমান্ত দিয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেন। ভারতে অভ্যন্তরীণ থেকেও তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। যুদ্ধকালীণ পুরোটা সময় তিনি অভিভাবক হিসেবে বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অভ্যন্তরীণ এবং বহিঃশত্রæর ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত হতে আগলে রেখেছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানগণের কাছে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের জন্য অনুরোধ বার্তা পাঠিযয়েছেন। ভারতের পত্র পত্রিকাও মওলানা ভাসানীর সেসব বক্তব্য বিবৃতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রচার ও প্রকাশ করেছে।

১৬ ডিসেম্বর আমরা বিজয় লাভ করি। কিন্তু পরিতাপ ও পরিহাসের বিষয় মুক্তযুদ্ধ শেষে কেউই তাঁর খোঁজ রাখেনি। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারত সরকারের একটি জীপে করে তিনি মেঘালয় হয়ে বাংলাদেশের হালুয়াঘাট সিমান্তে পৌঁছান। হালুয়াঘাটে তাঁকে মামুলি অভ্যর্থনা জানান ময়মনসিংহ জেলার তৎকালীণ জেলা প্রশাসক খসরুজ্জামান চৌধুরী ও স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ তাঁর ভক্ত অনুসারীরা। দীর্ঘ যাত্রা শেষে ক্লান্ত শরীরে ঐ দিনই শেষ রাতে তিনি পৌঁছান টাঙ্গাইলের সার্কিট হাউসে। পরদিন সকাল বেলা স্থানীয় নেতা-কর্মী ও ভক্ত অনুসারীরা তাঁকে দেখার জন্য দলে দলে সমবেত হন সার্কিট হাউস ময়দানে। বহুদিন পরে দেশে ফিরে এবং নিজের পরিচিত মুখগুলো দেখতে পেয়ে তিনি আপ্লুত হয়ে পরেন। পকেট থেকে দশ টাকার একটি নোট বের করে এক মুরীদকে পাঠান সন্দেশ আনতে। সাথে আরও টাকা যোগ হয়ে সন্দেশ এলো। হলো মিষ্টিমূখ। এবারে তিনি চললেন তাঁর প্রিয়প্রাঙ্গণ সন্তোষে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই হানাদাররা তাঁর সন্তোষের বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। পোড়া ভিটায় তিনি ঘুরে ঘুরে সবকিছু দেখলেন। দির্ঘশ্বাস ফেললেন! বিশেষ করে সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলের হাতে লেখা কুরআন শরীফের জন্য তিনি আফসোস করতে লাগলেন। এলাকার মানুষজনের খোঁজখবর নিতে শুরু করলেন। বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। অনেকের নিহত হওয়ার কথা শুনে তিনি অশ্রুসিক্ত হয়ে পরলেন। তীব্র শীতে ভক্ত অনুসারীরা যখন তাঁর থাকার ব্যবস্থা করার জন্য শসব্যস্ত হয়ে পরলেন, মজলুম জননেতা তখন মাটির মেঝেতে নাড়া বিছিয়ে কাঁথা দিয়ে বিছানা তৈরী করে দিতে নির্দেশ দিলেন। কথামত হলোও তাই। এরপর প্রিয় মাতৃভূমির কোলে শিশুর মতন ঘুমিয়ে পড়লেন ক্লান্ত মওলানা ভাসানী। এভাবেই স্বাধীন দেশে মাটির শয্যায় প্রথম রাত্রী যাপন করলেন আমাদের মুকুটহীন সম্রাট মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানী।
এই বিভাগের আরও খবর