লালমনিরহাট বার্তা
সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওরে ঢুকছে ঢলের পানি
বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | ১৮ এপ্রি, ২০২২, ৫:১৫ AM
সুনামগঞ্জ-নেত্রকোনার হাওরে ঢুকছে ঢলের পানি
মেঘালয় ও চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ছেই। গতকাল রবিবার সকালে ঢলের পানি হাওরের পাড় উপচে তাহিরপুর উপজেলার বর্ধিত গুরমার হাওরে ঢুকেছে। এতে হাওরের ২ হাজার হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার ধনু নদের পানি বেড়ে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিপত্সীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্রতিমুহূর্তে পানি বাড়ছে। সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি বেড়েছে। এতে বেড়েছে ধনু নদের পানি।
সুনামগঞ্জের স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, গুরমার হাওরে নতুন কোনো বাঁধ নয়, হাওরের পাড়ে পুরোনো স্থায়ী বাঁধ। গত শনিবার রাতে হাওরে ব্যাপক পানির চাপ সৃষ্টি হয়। এরপর গতকাল সকালে বাঁধ উপচে হাওরে পানি ঢুকতে শুরু করে।
হাওরপাড়ের গোলাবাড়ী গ্রামের কৃষক খসরুল আলম বলেন, যেভাবে পানি ঢুকছে, তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে ফসলের ক্ষতি হবে। আর যদি পানির চাপ কমে যায়, তাহলে ফসল রক্ষা পাবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বলেন, তারা এই হাওরের ফসল রক্ষায় ১৫ দিন ধরে লড়াই করছেন। কৃষক, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা—সবাই মিলে হাওরের বাগমারা এলাকার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের সংস্কার করছেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় পাহাড়ি ঢলে পানির ব্যাপক চাপ বেড়ে গতকাল সকাল থেকে হাওরে পানি ঢোকে। পানি আটকানোর চেষ্টা চলছে। লোকজন কাজে নেমে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানির উচ্চতা গতকাল দুপুর ১২টায় ছিল ৫ দশমিক ৮৭ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ৪০ সেন্টিমিটার। এ ছাড়া জেলার সীমান্তবর্তী জাদুকাটায় এই সময়ে পানি বেড়েছে ৭১ সেন্টিমিটার, পাটলাই নদে ৪৩ সেন্টিমিটার। সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছে ১৩ মিলিমিটার। সুনামগঞ্জে উজানের পাহাড়ি ঢল নামায় দ্রুত ধান কাটার চেষ্টা করছেন কৃষকেরা। কিন্তু অনেক হাওরেই ধান এখনো পুরোপুরি পাকেনি। সুনামগঞ্জে এবার প্রথম দফা পাহাড়ি ঢল নামে ৩০ মার্চ। এখন দ্বিতীয় দফা পাহাড়ি ঢলেও ফসল বেশি ঝুঁকিতে আছে এই উপজেলার। মাটিয়ান হাওর, গুরমার হাওর, শনির হাওর, মহালিয়া হাওর, সমসার হাওরের ফসল আবার ঝুঁকিতে পড়েছে। একইভাবে এসব হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোতেও পানির চাপ বাড়ছে। বিশেষ করে টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধগুলো রয়েছে চরম ঝুঁকিতে।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান করিব বলেন, হাওরে পানি বেড়েছে। ঢেউয়ের কারণে পানি বাঁধ উপচে ঢুকছে। এতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, কিন্তু ভাঙেনি। তবে অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। বাঁধে পানির ব্যাপক চাপ বেড়েছে। সমস্যা হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের বাঁধগুলো নিয়েই। যে কোনো সময় যে কোনো বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২২ হাজার ৮০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধান উত্পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ লাখ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমির ধান কাটা হয়েছে। ধান কাটায় কৃষকদের পাশাপাশি হাওরে কম্বাইন্ড হারভেস্টর ও রিপার আছে।
সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলার ১২টি উপজেলার বিভিন্ন হাওরে ৭২৭টি প্রকল্পে ১২২ কোটি টাকায় ৫৩৬ কিলোমিটার ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারকাজ হয়েছে। এই বাঁধ নির্মাণকাজের সময়সীমা ছিল ১৫ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু সময় বাড়িয়েও বাঁধের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা যায়নি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, ‘উজানের বৃষ্টি আমাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে। ১৫ দিন ধরে মাটির বাঁধগুলো ঢলের পানির ব্যাপক চাপ সামলাচ্ছে। মাটি নরম হয়ে গেছে। অনেক বাঁধে ফাটল আছে। সেগুলোতে দিনরাত কাজ হচ্ছে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করছি। দু-একটা দিন ধরে রাখতে পারলে মনে হয় বিপদ কেটে যাবে। কৃষকেরা এখন আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। তাই পানির চাপে বাঁধে ফাটল দেখা দিলে বাঁধের ভেতরে পানি প্রবেশ করে পাকা ধান ডুবিয়ে দিতে পারে বলে সব মহল থেকে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
নেত্রকোনার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এফ এম মোবারক আলী বিকালে হাওর উপজেলার মদন থেকে এই প্রতিনিধিকে জানান, হাওরের ব্রি-২৮ ধান প্রায় ৮০ শতাংশ কাটা হয়ে গেছে। তবে ব্রি-২৯ ধান কাটা হয়েছে ৫০ শতাংশ। এই ব্রি-২৯ পাকতে আরো ৮-১০ দিন লেগে যাবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। কারণ এই ধান পাকে একটু দেরি করে। আগামী কিছুদিনের মধ্যে সব ধান কাটা শেষ হবে। তিনি আরো জানান, বাঁধের মধ্যে পানি ঢুকলেও এখন কোনো সমস্যা হবে না। কারণ হাওরের বাঁধের মধ্যে আবাদকৃত নিচু জমির সব ধান কাট হয়ে গেছে।
এদিকে নেত্রকোনা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, তারা লোকজন নিয়ে বাঁধ এলাকায় অবস্থান করছেন। এখন পর্যন্ত সব বাঁধ সুরক্ষিত আছে। তারা দিন-রাত বাঁধ পাহাড়া দিচ্ছেন। নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক কাজী মো. আবদুর রহমান বলেন, তিনি রবিবার সকালেই খালিয়াজুরী ও মদনে গিয়েছিলেন। বোরো ফসল কাটা, বাঁধের সার্বিক অবস্থা নিয়ে প্রশাসনের লোকজন, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন। কৃষকেরা জানান, বাঁধে পানি ঢুকলেও এখন বড় ক্ষতি হবে না। কারণ নিচের জমির ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এর পরে সবাইকে সতর্ক রাখা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বলেন, নেত্রকোনা অঞ্চলে গত সাত দিন ধরে কোনো বৃষ্টি হয়নি। কিন্তু সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি নেত্রকোনার খালিয়াজুরীতে প্রবেশ করায় ধনু নদের পানি বেড়েই চলেছে। এখন বিপত্সীমা অতিক্রম করে ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণেই আমরা আতঙ্কের মধ্যে আছি। (সূত্র: ইত্তেফাক)
এই বিভাগের আরও খবর