লালমনিরহাট বার্তা
চাকুরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘ইয়াস’
স্টাফ রিপোর্টারঃ | ১০ অক্টো, ২০২২, ১২:০৫ PM
চাকুরি দেওয়ার নামে কোটি টাকা নিয়ে উধাও ‘ইয়াস’

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলায় শিক্ষকতা ও আইন সহায়তা কর্মী পদে চাকুরি দেওয়ার নামে প্রায় কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা বেসরকারী এনজিও ঢাকার এনভায়রনমেন্ট এওয়ারনেস এন্ড হিউম্যানিটি সোসাইটি (ইয়াস)। বর্তমানে উপজেলার বাউরা ইউনিয়নের শাখা ও পাটগ্রাম পৌর শহরের বাইপাস মোড়ের কার্যালয়ে ঝুলছে তালা।

জানা গেছে, ‘ইয়াস’ নামে একটি সংস্থা এ বছরের জানুয়ারিতে পাটগ্রামের বাউরা ইউনিয়নে শাখা ও কয়েকমাস পর পাটগ্রাম পৌরসভায় আইন সহায়তা সংস্থা কার্যালয় খুলে। শুরু থেকে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার ব্যাপারে প্রচারণা চালাতে থাকে এনজিওটি। এক পর্যায়ে ১২৪ টি বিদ্যালয়ে ১২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে শিক্ষকদেরই বাড়িতে বিদ্যালয় চালু করা হয়। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার সময় প্রত্যেকের নিকট ২৫ থেকে ৩০ হাজার করে টাকা নিয়ে ৫ হাজার টাকা করে বেতন প্রদানের শর্তে নিয়োগ দেওয়া হয়। পাশাপাশি হতদরিদ্র পরিবারকে দুই কক্ষ বাথরুমসহ পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়ার কথা বলে ২৯ টি পরিবারের নিকট ৫ থেকে ১০ হাজার করেও টাকা নেওয়া হয়। অপরদিকে পৌর শহরের বাইপাস মহাসড়কের পাশে খোলা হয় আইন সহায়তা সংস্থা কার্যালয়। এ কার্যালয়ে ২৫ জনকে ১ থেকে দেড় লক্ষাধিক করে টাকা নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগ পাওয়াদের প্রত্যেককে ৮-১০ হাজার টাকা করে বেতন প্রদান করার কথা জানায় সংস্থার কর্মকর্তাগণ।

নিয়োগ পাওয়াদের অভিযোগ- ইয়াস এনজিওটি পাটগ্রাম উপজেলায় আনেন উপজেলার সরকারেরহাট এলাকার ফরিদুল ইসলাম। তাঁর মাধ্যমে বিদ্যালয় চালু, শিক্ষক ও কর্মচারী-কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়টি জানতে পেরে টাকা দিয়ে নিয়োগ নেন স্থানীয়রা।

একই এলাকার মাঠকর্মী মিনহাজুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘ইয়াস এনজিওটি অনেক লোভ দেখিয়ে টাকা নিয়ে আমাদেরকে নিয়োগ দেয়। বেকার ছেলে হিসেবে আমি নিজেও ২০ হাজার টাকা দিয়েছি। বর্তমানে ইয়াসের কোনো খোঁজ খবর নাই। যোগাযোগ করে টাকা চাইলে ভয়, হুমকি দেখায়।’

‘নিজ বাড়িতে প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করে দুই মাস পরিচালনা করা হলেও ইয়াস সংস্থা কোনো প্রকার বই, খাতা দেয়নি। উপরন্তু প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট ভর্তির জন্য ১ শ টাকা ও উপবৃত্তির কথা বলে ৫০ টাকা করে তুলে ইয়াস কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা হয়। শিক্ষক হিসেবে চাকুরি নেওয়ার সময় ২৫ হাজার টাকা দেই বলে জানান, বাউরা ইউনিয়নের নবীনগর গ্রামের শিক্ষক সম্পা বেগম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ এপ্রিল সরকারের জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্মস্ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় হতে ‘ইয়াস’ পরিবেশ সচেতনতা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত সামাজিক সংস্থা হিসেবে নিবন্ধন নেয়। কার্যালয়ের ঠিকানা দেখানো হয় ঢাকার মতিঝিলের ৯ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ।

ইয়াসের পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয়ের পরিদর্শক ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘জেলা পরিদর্শক আরিফুজ্জামান চাকুরি দেওয়ার নামে টাকা নিয়েছে। প্রধান কার্যালয়ে জানিয়েছি। তাঁরা আরিফুজ্জামানকে বেঁধে রেখে টাকা আদায় করতে বলেছে। পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি উনাকে চাপ দিলে আমাদেরকে ২১ লাখ টাকার চেক দিয়েছে আরিফুজ্জামান।’

লালমনিরহাট জেলা পরিচালক আরিফুজ্জামান- দুর্নীতি হয়েছে স্বীকার করে বলেন, ‘সরঞ্জাম বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাঠ কর্মী ও পরিদর্শকরা অনেক বেশি টাকা নিয়েছে। জামানত বা চাকুরি বাবদ টাকা নেওয়া হয়নি। ফরিদুল ইসলাম ও অন্যান্য মাঠ কর্মী এবং পরিদর্শকরা নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। আমি যে টাকা পেয়েছি সেগুলো সংস্থার মহাসচিবকে পাঠিয়েছি। আসলে ইয়াস সংস্থার মহাসচিব আমাদের সাথে প্রতারণা করেছে। সারাদেশে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। উনারা প্রতারক চক্র।’

ইয়াসের মহাসচিব জাহেদ হাসান বলেন, ‘আমাদের সংস্থার কেউ আইনজীবি, কেউ ব্যবসায়ী সবাই প্রতিষ্ঠিত। আমরা টাকা ছাড়া আইন সহায়তা দিয়ে থাকি। লালমনিরহাটে একটা শাখা খোলার অনুমতি দিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানকার আরিফুজ্জামান সারা লালমনিরহাট জেলায় অফিস খুলে অনেক লোকের কাছে নাকী টাকা নিয়েছে। আমরা লিখিতভাবে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনও, দুদকে জানিয়েছি। থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি।’

এই বিভাগের আরও খবর