লালমনিরহাট বার্তা
রংপুর অঞ্চলের দিগন্ত জুড়ে আমন ক্ষেতের সমারোহ মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজ ধান
রংপুর অফিস | ১৪ অক্টো, ২০২১, ১০:১৬ AM
রংপুর অঞ্চলের দিগন্ত জুড়ে আমন ক্ষেতের সমারোহ মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজ ধান
রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা দিগন্ত জুড়ে এখন ফসলের মাঠে সবুজের সমারোহ। চোখের দৃষ্টি যতদুর যায় শুধু সবুজ আর সবুজ ফসলের মাঠ। মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজ ধানের গাছ বাতাশে দোল খাচ্ছে। ধানের চারা গাছের চেহারাও বেশ ভাল।কোনো প্রকারের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সর্বত্রই এবার আমনের বাম্পার ফলন হবে। এমনটাই আশা করছেন এ অঞ্চলের কৃষি বিভাগ ও কৃষকরা।রংপুুরের ৫ জেলার সর্বত্রই এবার আগাম জাতের আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক স্থানে কৃষকরা আগাম জাতের এই ধান ঘরে তুলতে শুরু করেছেন।প্রতি জেলাতেই আগাম জাতের ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষকদের মুখে স্বস্থির হাসি ফুটে উঠেছে।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর অফিস সূত্রে জানা গেছে,রংপুর বিভাগে আছে ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৯শ’ ৬৪ হেক্টর জমি। এসব আবাদী জমির মধ্যে চলতি বছর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল চলতি বছরে রংপুর কৃষি অঞ্চলের রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায় সাড়ে ৯ লাখ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও অনেক বেশি জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিভাগের সর্বত্রই ধান ভালো হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া ভালো থাকলে বেশ ভালো ফলন পাওয়া যাবে। তাছাড়া অনেক স্থানে আগাম জাতের আমন ধান কেটে ঘরে তুলতে শুরু করেছেন কৃষকরা। আগাম জাতের আমন ধানও বেশ ভালো হওয়ায় বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা।বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর এবং গাইবান্ধা জেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ উপজেলা গুলোতে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আধুনিক চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে কৃষি বিভাগের সহায়তায় দু'দফা বন্যার পরও তারা লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আমনের চাষ করেছেন। বন্যার পর জমিতে পলি পড়ার কারনে তুলনামুলক ভাবে এসব এলাকায় আরো ভালো হয়েছে আমনের চারাগুলো। অন্যান্য এলাকার চেয়ে এসব এলাকায় রোপনকৃত আমনের চারাগুলো বেশ মোটা এবং হৃষ্ট-পুষ্ট। ফলে এসব এলাকায় আমন ধানে বিপ্লবের সম্ভাবনা দেখছেন কৃষক এবং কৃষি বিভাগ।
রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বিরাহীম গ্রামের কৃষক শরিফ উদ্দিন খান জানান, তিনি এ বছর ২৪ শতক জমিতে স্বল্পমেয়াদি হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন। ফলন ১২ মণের বেশি আশা করছেন। ধান চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩ হাজার টাকা। প্রতি মণ ধান বিক্রি করেছেন ৯ শত টাকা দরে। বর্তমানে বাজারে গবাদি পশুর খাবার হিসেবে খড়ের চাহিদা থাকায় ভালো দাম পেয়েছেন। তিনি ওই জমিতে আগাম আলু চাষ করার জন্য প্রস্ততি নিচ্ছেন। আলু তুলে ভুট্টা চাষ করবেন বলে জানান তিনি।
কাউনিয়া উপজেলার সারাই মাছহারী এলাকার কৃষক তারেকুল ইসলাম জানান, দুই বিঘা জমিতে ব্রি-৭৫ জাতের উচ্চফলনশীল ধান চাষ করেছেন। ২-১ দিনের মধ্যে মধ্যে ধান কেটে ঘরে তুলবেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ৪০ থেকে ৪৫ মণ ধান আশা করছেন। এখন পর্যন্ত তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ধান বিক্রি কওে ২৫ হাজার টাকা ভাল হবে বলে জানান তিনি।
রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৫০ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিশেষ এক সুত্র জাানায়,চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী এই পাঁচ জেলায় দু'দফা বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়। এক হাজার ২৬৫ হেক্টর আমন বীজতলা, ১১১ হেক্টর রোপা আমন, চার হাজার ৫৯৮ হেক্টর আউশ, এক হাজার ২৪৪ হেক্টর শাকসবজি, ২৯ হেক্টর ভুট্টা, ৩১ হেক্টর চিনাবাদাম, ৩৭৯ হেক্টর তিল, ২০ হেক্টর কাউন, ১৪০ হেক্টর চিনা, ২০৫ হেক্টর মরিচ, ছয় হাজার ৪৪৩ হেক্টর পাটের জমির ক্ষতি হয়েছে এ বন্যায়। সব মিলিয়ে প্রায় দুই লাখ কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তার পরও এসব এলাকায় রোপা আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে।
রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান জানান, চলতি বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলায় আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। নিশ্চিত করেছে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শুরুতে শঙ্কা থাকলেও অনেক আগেই তা ছাড়িয়ে গেছে। আশা করা হচ্ছে ফলও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এ অঞ্চলে সবজি উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে ৪১ হাজার হেক্টও জমিতে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সবুজের সমারোহ। যতদুর চোখ যায় শুধুই আমনের ক্ষেত। বৃষ্টির অভাবে সেচ দিয়ে রোপন করা আমনের চারাগুলো বেশ হৃষ্ট-পুষ্ট হয়ে প্রকৃতিকে সবুজ করে দিয়েছে। মাঝে-মধ্যে হলুদ বর্নের আগাম জাতের আমন ধানের শীষ বাতাশে দোল খাচ্ছে। কোথাও কোথাও কৃষকরা তা কেটে ঘরে নিয়ে যাচ্ছে। রংপুরের চিরাচরিত আশ্বিন-কার্তিকের সেই ‘মঙ্গা’র অভিশাপ ঘোঁচাতে অনেকটাই সহায়ক হয়েছে আগাম জাতের এই আমন ধান। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাষীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আমনের চারা রোপন নিয়ে বেশ দুশ্চিন্তায় পড়েছিলেন সবাই। বৃষ্টির অভাবে জমি শুকিয়ে যাওয়ায় সেচ দিয়ে চারা রোপন করতে হয়েছে। সেই চারা এখন অনেক ভালো হয়েছে আমনের ক্ষেত। অন্যান্য বছরের চেয়ে পোকা-মাকড়ের আক্রমনও অনেক কম।
এই বিভাগের আরও খবর