লালমনিরহাট বার্তা
মজুরি না পেয়ে কষ্টে আছেন কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা
বার্তা অনলাইন ডেস্কঃ | ১ জানু, ২০২৩, ১০:৩৫ AM
মজুরি না পেয়ে কষ্টে আছেন কর্মসৃজন কর্মসূচির শ্রমিকরা

টানা ২৫ দিন কাজ করেও মজুরি না পেয়ে মানবেতর দিন কাটছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে সংশ্লিষ্ট ৫১ জন সর্দারসহ ১,৭৬১ জন শ্রমিককেরা। মজুরি না পাওয়ায় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা বড়দিনের উৎসবও ভালোভাবে পালন করতে পারেননি। সপ্তাহে প্রতি বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের মজুরি দেওয়ার কথা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের নানা অজুহাতের কারণে তাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে না। ফুলবাড়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে উপজেলায় ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ৫১টি প্রকল্পের বিপরীতে ২ কোটি ৮১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পে ৫১ জন সর্দারসহ এক হাজার ৭৬১ জন শ্রমিক কাজ করছেন। এরমধ্যে পুরুষ এক হাজার ১৩২ জন ও নারী ৬২৯ জন। মজুরি পাচ্ছেন শ্রমিক জনপ্রতি ৪০০ টাকা এবং সর্দার ৪৫০ টাকা। আগামী ২১ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

রবিবার (১ জানুয়ারি) উপজেলার আলাদিপুর ইউনিয়ন ও শিবনগর ইউনিয়নের কয়েকটি ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে কর্মরত নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মজুরি না পাওয়ায় অতি কষ্টে তাদের দিন কাটছে। এরপরও খেয়ে না খেয়েই মাটি কাটার কাজ করতে হচ্ছে।

উপজেলার বাসুদেবপুর নৃ-গোষ্ঠীপাড়ার গৃহবধূ মাতি মুর্মু (৩৫) বলেন, সংসার আর ছেলে-মেয়েদের খরচ জোগানোর জন্য ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পে যোগ দেন মাতি মুর্মু। গত ২৫ দিন টানা দিন হাজিরায় এ প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করে একটি টাকাও পাননি তিনি। ফলে খাবারের জন্য চাল-ডাল কিনতে পারছেন না। এতে ছেলে-মেয়েদের নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে তার। বাসুদেবপুর সূর্য্যপাড়ার (নৃ-গোষ্ঠীপাড়া) সাবিনা হেম্ব্রম (৩৫) জানান, কাজের মজুরি না পাওয়ায় ভালোভাবে বড়দিন উদযাপন করতে পারেননি তারা। বড়দিনে ছেলেমেয়েদেরকে ভালো কোন কিছু খাবার তুলে দিতে যেমন পারেননি, তেমনি নতুন জামা কাপড়ও কিনে দিতে পারেননি।

একই গ্রামের লুছিয়া মার্ডী (৩৪) জানান, শুধুমাত্র মজুরি না পাওয়ায় ভালোভাবে বড়দিন পালন করতে পারেননি। কোনভাবে পার করতে হয়েছে বড়দিন। অভাবের জন্য কোন প্রকার আনন্দ ও উল্লাস করতে পারেননি তারা। এক কথায় একেবারেই ভালোভাবে পালন করতে পারেননি বড়দিন। বাসুদেবপুর গড়পাড়া গ্রামের নজরুল হেম্ব্রম (৪৫) জানান, গত ১ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫ দিন টানা দিন হাজিরায় প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করে এখন পর্যন্ত মজুরির একটি টাকাও পাননি। নিজের সংসার এবং বড়দিন পালনের জন্য ইতোমধ্যে সাড়ে ৪ হাজার টাকা প্রতিবেশীর কাছ থেকে ঋণ করেছেন। এরপরও যদি টাকা না পান তবে সন্তানসহ তাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শফিউল ইসলাম বলেন, উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার মৃত্যুজনিত এবং অন্যত্র চলে যাওয়া ১৩০ জন শ্রমিকের নাম তালিকা থেকে পরিবর্তন করে নতুন তালিকা দিতে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা দেরি করায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ২০ দিনের কাজের মজুরির বিল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বিলটি বাংলাদেশ ব্যাংক হয়ে প্রত্যেক শ্রমিকের মোবাইলের রকেট নম্বরে টাকা চলে আসবে। (সূত্রঃ ইত্তেফাক)

এই বিভাগের আরও খবর